• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অগ্নিঝরা ২১ই মার্চ: ইতিহাসের এই দিনে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৯  

একাত্তরের মার্চ ছিল উত্তাল, উত্তেজনায় ভরপুর। একাত্তরের এই মার্চ মাসেই মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি খুঁজে পেয়েছিল তার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের এ মার্চেই ডাক এসেছিল বাঙালির স্বাধীনতার। শুরু করেছিল পরাধীনতার গ্লানি থেকে নিজেকে মুক্ত করার সশস্ত্র সংগ্রাম। প্রায় দুই যুগের ধারাবাহিক আন্দোলনের পথ ধরে এ মার্চেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’৭১ এর প্রতিটি দিন ছিলো আন্দোলন সংগ্রামে ভরপুর।

’৭১ এর এইদিন সকালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে তাঁর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুকে এমনকিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন যাতে বঙ্গবন্ধু তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তৎক্ষণাৎ সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, “আমি আমার জনগণকে পাকিস্তানের শেয়ালদের হাত থেকে মুক্ত করে আমেরিকান বাঘদের হাতে তুলে দিতে পারি না।”

অপরদিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথেও একইদিনে বঙ্গবন্ধু এক অনির্ধারিত বৈঠকে মিলিত হন। প্রায় ৭০ মিনিট স্থায়ী বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সাথে একমাত্র সহকর্মী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। অন্যপক্ষে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে ছিলেন তার আইন উপদেষ্টা বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস এবং সামরিক উপদেষ্টাগণ। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রাগত স্বরে বঙ্গবন্ধু বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।” সাংবাদিকগণ আলোচনার ফলাফল জানতে নেতাকে চাপাচাপি করতে থাকলে তিনি আর কিছু বলতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে স্বীয় বাসভবনের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

বাসভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, “ইয়াহিয়া ও তার উপদেষ্টাগণের সাথে ৪টি শর্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওনারা আমার কাছে একটা কথাই বার বার বলছেন যে, আগে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসুক। আমি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছি, এতো কিছু হওয়ার পরে আমার কাছে ওই ৪ দফা ছাড়া আর অন্য কোন কথা নাই। আমি আমার জনগণের কাছে যা বলেছি, বার বার তাই আমি আপনাদের কাছেও বলছি। আলোচনা সফল করতে হলে এখন প্রেসিডেন্টকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” খুবই ক্ষুব্ধ এবং রাগান্বিত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকগণের উদ্দেশে কথাগুলো বলছিলেন।

১৯৭১ সালের এই মাসে চলমান অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের এই দিনে মুক্তি পাগল হাজার হাজার মানুষের দৃপ্ত পদচারণায় রাজধানী ঢাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত মিছিল ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান তুলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে এগিয়ে চলে। সেখানে মুক্তি অর্জনের শপথ নিয়ে মিছিল যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে।

এদিকে এই দিন বিকেলে চট্টগ্রাম ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পোলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বলেন, আলোচনায় ফল হবে না। এদেশের হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে চাপরাশি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেয়া উচিত।