• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

কালজয়ী অভিনেতার জন্মদিন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০১৯  

বাংলাদেশের অন্যতম কালজয়ী অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী। মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে হুমায়ুন ফরিদি নিজস্ব একটি অভিনয়-ধারা তৈরি করতে পেরেছিলেন যা তাকে সময়ের কোলে অনন্য করে রেখেছে। আজ এই কালজয়ী অভিনেতার জন্মদিন।

হুমায়ুন ফরিদী ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম সংগঠক এবং অভিনেতা। গ্রাম থিয়েটারেরও সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তিনটি মাধ্যমে সাবলীল অভিনয়ের জন্য তিনি অসামান্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিংবদন্তি এই অভিনেতা ১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে তার জন্য ডেইলি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা।

তার বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণের পর চাঁদপুর সরকারী কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

কৌতুক প্রিয় হুমাযূন ফরিদী অভিনয়ে ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক ও পেশাদার। কোন চরিত্র চিত্রনে তার পেশাদারীত্ব দেশের শিল্পী মহলে এখনো জনপ্রিয়। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে বহুমাত্রিক অভিনয় দিয়ে তিনি দর্শক হৃদয় স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন। মাটি ও মানুষের সঙ্গে ছিলো তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক।

দেশের সংকটে-সংগ্রামে এগিয়ে গিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাতারে, যুক্ত হয়েছেন প্রতিবাদী মিছিলে। ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ নয় ববং মানুষের সঙ্গে তার সকল কর্মকে সম্পৃক্ত করেছেন আজীবন। নাট্যাঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাকে সম্মাননা প্রদান করেন এবং ২০০৪ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নাট্য উৎসবে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মূলত এ উৎসবের মাধ্যমেই তিনি নাট্যাঙ্গনে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ লাভ করেন। এরপর তিনি গণমাধ্যমে অনেক নাটকে অভিনয় করেন।

১৯৯০-এর দশকে হুমায়ুন ফরিদী চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। সেখানেও তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে যে, স্যুটিংস্থলে অভিনেতার তুলনায় দর্শকেরা হুমায়ুন ফরিদীর দিকেই আকর্ষিত হতো বেশি। বাংলাদেশের নাট্য ও সিনেমা জগতে তিনি অসাধারণ ও অবিসংবাদিত চরিত্রে অভিনয়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।

হুমায়ুন ফরিদী বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত সংশপ্তক নাটকে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন। এছাড়াও অনেক নাটকে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি লাভ করেন এই অভিনেতা। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- নিখোঁজ সংবাদ, হঠাৎ একদিন, পাথর সময়, সংশপ্তক, সমূদ্রে গাংচিল, কাছের মানুষ, মোহনা, নীল নকশাল সন্ধানে, দূরবীন দিয়ে দেখুন, ভাঙ্গনের শব্দ শুনি, কোথাও কেউ নেই ইত্যাদি।

এছাড়াও তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে- সন্ত্রাস, দহন, লড়াকু, দিনমজুর, বীর পুরুষ, বিশ্ব প্রেমিক, আজকের হিটলার, মায়ের অধিকার, বিদ্রোহী চারিদিকে, মনে পড়ে তোমাকে, ব্যাচেলর, জয়যাত্রা, শ্যামল ছায়া উল্লেখ্যযোগ্য।

ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন ফরিদী দুবার বিয়ে করেছিলেন। প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮০’র দশকে। ‘দেবযানী’ নামের তার এক মেয়ে রয়েছে এ সংসারে। পরবর্তীতে বিখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে তিনি বিয়ে করলেও ২০০৮ সালে তাদের মধ্যেকার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে ।

কিংবদন্তি এই মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের যাদুকরী অভিনেতা ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরন করেন।