• বুধবার ২২ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

প্লাস্টিক বর্জ্যই যে স্কুলের মাসিক বেতন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১ জুন ২০১৯  

টাকা নয় প্লাস্টিকের বর্জ্য দিলেই পড়াশুনা করা যায় স্কুলটিতে। বাসা-বাড়ি কিংবা পথে-ঘাটে যে কোনো জায়গা থেকে কুড়িয়ে আনা পুরনো প্লাস্টিক পণ্য কিংবা পলিথিন বা এ ধরণের সামগ্রী হোক তাতেই চলবে। স্কুলের মাসিক বেতন কিংবা পরীক্ষার ফি সবই পরিশোধিত বলে গণ্য হবে। 

এমন ব্যতিক্রমী স্কুলটি রয়েছে ভারতে। স্কুলটির নাম ‘অক্ষর’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত পরিবেশের ক্ষতি মোকাবিলায় এমন উদ্যোগ। এতে করে অর্থাভাবে যেমন কারো লেখাপড়া ঠেকে থাকবে না তেমনি পরিবেশও থাকবে পরিচ্ছন্ন।

আসামের গুয়াহাটির পামোহিতে গাছপালা ঘেরা ‘অক্ষর’ স্কুলটি ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে। তবে গত ছয় মাস ধরে সেখানে টাকার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বর্জ্য নেয়া হচ্ছে বেতন হিসেবে। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা পারমিতা শর্মা এবং মজিন মুখতার বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল এমন একটা স্কুল তৈরি করা যেখানে গড়পড়তা শিক্ষা নয়, পড়ুয়াদের নানা বিষয়ে উৎসাহী করে তোলা যাবে। তার প্রথম পদক্ষেপটাই হলো প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা। 

স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ ব্যাগ করে প্লাস্টিক জমা করে। শুধু তাই নয়। মানুষ যাতে প্লাস্টিক বর্জ্য না পোড়ায় সে জন্যও সবাইকে অনুরোধ জানানো হয় এই স্কুল পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে।  

মজিন ও পারমিতা জানান, পামোহি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। তাদের কেউ পাথর কাটে, কেউ নির্মাণ শ্রমিক কিংবা চা শ্রমিক। অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোটা হলো এসব মানুষের কাছে বিলাসিতা। ফলে গ্রামে অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুলের পরিবর্তে পাথর খাদে পাঠান যাতে তারা প্রতিদিন কয়েক রুপি আয় করতে পারে।

‘অক্ষর ফোরাম’ এমন অবস্থার পরিবর্তন চেয়েছেন। তাই পরিবারগুলিকে কেবলমাত্র প্লাস্টিকের অপচয় হিসাবে ফি দিতে উৎসাহিত করেন। অক্ষর তাদের পরিবারের উপর কোন প্রকার আর্থ ছাড়াই সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে উৎসাহ দিয়েছিলেন।

শিক্ষার্থীদের জীবন যাপনে অভিজ্ঞতা এবং তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ড. বর্থাকুর বলেন, সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের দ্বারা শুরু করা থেকে সম্পন্ন করা হয়। তাদের বিভিন্ন ধাপে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, স্কুলে এটিকে পৃথকীকরণ এবং সেটিকে পুনরায় ব্যবহারের জন্য প্রাথমিকভাবে উপযোগী করে রাখা তাদের শেখানো হয়। এখন স্কুলটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতনের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক ছাড়া আর কিছুই নেয়া হয় না।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি হিসাবে প্লাস্টিকের বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ‘অক্ষর ফোরাম’ শিক্ষাকে যে শুধুমাত্র সাশ্রয়ীই করছে তাই নয়,  পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে তারা নাড়া দিয়েছে। এর হাত ধরে আসামের ছোট্ট গ্রামটিতে পরিবর্তন আসছে। ধীরে ধীরে সে পরিবর্তন হয়তো আরো বেগবান হবে।