• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কীর্তি:মালাকাল’র মানুষের মুখে মুখে‘বাংলাবন্ধু’

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০১৯  

দক্ষিণ সুদানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ‘মালাকাল’ সম্পর্কে জানতে গিয়ে চমকে উঠলাম! মনে হলো হুয়ান রুলফোর জনপ্রিয় উপন্যাস ‘পেদ্রো পারামো’ এই শহরকে নিয়েই লেখা হয়েছে। কী অদ্ভুত মিল! বছর চারেক আগেও পুরো শহর ছিল ‘ছাই’। গরমকালে সূর্যের তেজ মাথায় নিয়ে বাঁচে মালাকাল। বর্ষায় কাদা আর মানুষের বিষ্ঠায় মাখামাখি মাটিতে পা ফেলায় অভ্যস্থ সবাই। তার মাঝেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে শরণার্থী ক্যাম্প, তাঁবু ও ছাউনি ঘর। সে সময়ে জ্বালানি, রসুন আর টুকরো বেচে চোখে এক রাশ শূন্যতা নিয়ে বেঁচে ছিল মালাকালের মানুষ।

এখনো মালাইকাল শহরের ক্ষতের দাঁগ শুকায়নি। রসুন বেচা মানুষগুলো তাই ধূ-ধূ প্রান্তরে আজো শুনতে পায় মৃত মা, ভাইয়ের হাহাকার। সব হারানোর যন্ত্রণা। যুদ্ধের সময় বার বার হাত বদল হয়েছে শহরটির। শেষ পর্যন্ত তেল সমৃদ্ধ শহর মালাকাল দখল করে নিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। কিন্তু তাদের জীবনযাত্রার মান কতটুকু উন্নতি হয়েছে? খাবারের জন্য হাহাকার, চিকিৎসার জন্য আহাজারি তো লেগেই আছে! শেষ পর্যন্ত তাদের পাশে এসে দাঁড়ালো বাংলাদেশ নৌবাহিনী। মালাকালের মানুষদের কাছে পরিচিত ‘বাংলাবন্ধু’ নামে।

এই শহরের মানুষ ম্যালেরিয়া, ডায়েরিয়া, কালাজ্বর, রক্তশূন্যতা, পুষ্টিহীনতাসহ যে রোগেই আক্রান্ত হোক, তারা ছুটে যায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে। বাংলাদেশের গর্বিত সৈনিকরা দেশটির অসহায় মানুষদের জন্য তৈরি করেছে একটি লেভেল-২ হাসপাতাল। এটি এখন শুধুই হাসপাতাল নয়, সেখানকার মানুষের কাছে ‘জীবন ফিরে পাওয়ার নতুন ঠিকানা’। তাই তো বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা প্রতিনিয়ত ছুটে আসছে এই হাসপাতালে। চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধও দেয়া হয় তাদের।

 

মালাকালে অবিস্থত একটি ক্যাম্প

মালাকালে অবিস্থত একটি ক্যাম্প

যেকোনো ব্যক্তি যদি দক্ষিণ সুদানের মালাকাল শহরে গিয়ে বলে, আমি বাংলাদেশি। নিশ্চিত থাকুন, সেখানকার মানুষ পরম আন্তরিকতায় কাছে এসে বলে ‘বাংলাবন্ধু’ কেমন আছো? শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতেও চাইবে। এসব কিছু সম্ভব হয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পরম আন্তরিকতা ও কঠোর পরিশ্রমের কারণে।

মালাকাল একসময় ব্যস্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। সেখান থেকে সুদানে মালপত্র রফতানি করা হতো। কিন্তু যুদ্ধ সেই ব্যস্ততা কেড়ে নিয়েছে। মানুষ কাজের অভাবে ঠিক মতো খেতেও পারছে না। বিধস্ত নগরীর সর্বহারা মানুষদের এখন আগলে রেখেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। তাই সেখানকার এদেশের মানুষের প্রতি সেখানকার জনগনের ভালোবাসা ও ভক্তি এখন তুঙ্গে। গত শনিবার মালাকালে নৌবাহিনীর হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে আসা ফাগান আদুক লোয়াল বলেন, ‘এরা অনেক ভালো। আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।’

সেদিন স্থানীয় আরো ১৫-১৬ জন মানুষ চিকিৎসা নেয় হাসপাতালে। এরমধ্যে বোনা উইলিয়াম গোয়াং, আব্দুল্লাহ আখন অলডিং ও আবান ওটাও গোয়াং অন্যতম। বোনা উইলিয়ম গোয়াং বলেন, আমাদের এখানে কোনো হাসপাতাল নেই। তাই কোনো অসুখ হলে শত শত কিলোমিটার দূরে গিয়ে চিকিত্সা নেয়াটা আমাদের কাছে কল্পনাতীত ছিল। এখানে নৌবাহিনীর হাসপাতাল গড়ে ওঠার পর আমরাই প্রথম চিকিত্সাসেবা নিতে যাই। নৌবাহিনীর হাসপাতাল আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার এক নিয়ামক।

 

মালাকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী

মালাকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী

আব্দুল্লাহ আখন অলডিং নামের আরেক রোগী বলেন, নৌবাহিনীর এই হাসপাতাল গড়ে ওঠার আগে আমরা গাছের ছাল পাতা দিয়ে চিকিত্সা নিতাম। তাতে কারো অসুখ সারতো, আবার কেউ মারা যেত। তবে বেশির ভাগই মারা যেত। এখন আমরা বেশ ভালোভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছি।

লেভেল-২ হাসপাতালের চিকিত্সক সার্জন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ফয়সাল বলেন, এখানে বেশিরভাগ মানুষই ম্যালেরিয়া, রক্তশূন্যতা আর পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হন। আমাদের এখানে সপ্তাহে এক থেকে দেড়শ রোগী চিকিত্সা নিতে আসেন। তারা চিকিত্সা সেবা পেয়ে খুশি, সে কারণে তারা মাঝে মধ্যে ক্ষেতের তরমুজ বা অন্য কোনো ফল নিয়ে আসে আমাদের জন্য। তবে আমরা তাদের সেসব ফলমূল নেই না। তাদেরকে ওই ফলমূল বেশি করে খাবার পরামর্শ দেই।

সার্জন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার দিপঙ্কর বলেন, এই অঞ্চলের সাপ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব বেশি। তাই সাপে কাটা ও পোকামাকড়ের কামড়ে আক্রান্ত রোগী প্রতি সপ্তাহে এক-দুইজন আসেন। আমরা তাদের এক থেকে দুই দিন হাসপাতালে রেখে চিকিত্সা দেই।