• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

খাবার জুটে না, গরিবদের জন্য হাসপাতাল বানালেন করিমুল

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২০  

বন-জঙ্গল আর চা বাগানে ঘেরা গ্রাম। দৈনন্দিন অভাব, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বৈভবের ছিটেফোঁটার চিহ্নও নেই। পাশেই দেশ সেরা পর্যটন গন্তব্য, কিন্তু এ গ্রামে কোনো পর্যটকেরই পা পড়ে না। শহরে যাওয়ার রাস্তা এতটাই দূর্গম যে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে যান না কেউই। সবচেয়ে কাছের হাসপাতালটা ৪৩ কিলোমিটার দূরে। তাও আবার বর্ষার সময় রাস্তা প্রায় বন্ধ থাকে। চিকিৎসার অভাবে রোগীমৃত্যু যেখানে কঠিনতম সত্য, সেখানেই করিমুল রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নিয়মের বিরুদ্ধে। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে তৈরি করেছিলেন বাইক অ্যাম্বুল্যান্স।

গল্পটা জলপাইগুড়ি শহর থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরের এক জনপদের। গ্রামের নাম ধুলাবাড়ি। ওই গ্রামেরই ছেলে করিমুল হক। মধ্যবয়স পেরিয়ে যাওয়া এই মানুষটাই দেখাচ্ছেন, ইচ্ছের কাছে উপায় বারবার হেরে যায়। নিজের মা’কে হাসপাতালে না নিতে পেরে। নিবেই বা কি করে, দুর্গম ওই পথে যে কোনো অ্যাম্বুল্যান্স নেই! তাই মায়ের মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়েই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে ধুলাবাড়ির আর কারো প্রাণ যাবে না। নিজে খেতে পান না, শেষ সম্বল দিয়ে কেনা বাইকেই তিনি তুলে নিয়েছেন বহু দুঃস্থ রোগীকে।

সবার তরে এগিয়ে আসা করিমুল শত মানুষের জীবনে আলো জ্বালালেও, নিজেই পড়ে আছে ঘোর আঁধারে। চোখের জটিল সমস্যায় ভুগছেন তিনি। সে খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর বহু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সেই অর্থে হায়দরাবাদে তার চিকিৎসাও হয়। কিন্তু চোখের সমস্যা এখনও মেটেনি।

 

পদ্মশ্রী হাতে করিমুল (ডানে)

পদ্মশ্রী হাতে করিমুল (ডানে)

অখ্যাত ধুুলাবাড়িরই করিমুল যেন অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছেন। ধীরে ধীরে তিনিই হয়ে উঠছেন ধুলাবাড়ির অসহায়-অসুস্থদের ‘উপরওয়ালা’! যে চোখে হাজারো মানুষের জন্য স্বপ্ন এসে জড়ো হয়, সেই চোখ অন্ধত্বের পথে হাঁটতে-হাঁটতেও ফিরে আসে। আবার নতুন করে স্বপ্ন সাজায়। সেই বাইক অ্যাম্বুল্যান্স এখনও আছে, সঙ্গে আরেকটি অ্যাম্বুল্যান্সও যোগ হয়েছে। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট নয় করিমুল। পদ্মশ্রী পাওয়া সেই মানুষটাই এখন তৈরি করছেন গোটা একটা হাসপাতাল, একার দায়িত্বে, অসীম এক সাহসে ভর করে। 

তাই চোখের সমস্যাকে আপাতত চিন্তার বাইরে রেখে এবার নিজের ঘর লাগোয়া জমিতেই গড়ে তুলছেন গরিবের হাসপাতাল। নাম দিয়েছেন ‘মানব সেবা সদন’। এরইমধ্যে দোতলা কাঠামো গড়ে উঠেছে সেই হাসপাতাল বাড়ির। করিমুল বলেন, একটা হাসপাতাল গড়ে তুলতে যতটা প্রয়োজন অর্থের, তা এখনও জোগাড় করে উঠতে পারিনি। তাই এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষই ভরসা। যদি সবাই নিজের সাধ্যমতো একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে এই হাসপাতালেই হয়ত প্রাণ বাঁচবে ২০টি গ্রামের মানুষের।

হানাহানি, বিদ্বেষ, হিংসা, আর বিভেদের এই দুনিয়ায় করিমুল আসলে ধুলাবাড়ির অন্ধকার থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা উল্কা। সবাই চেয়ে থাকে তার দিকে, মৃত্যুকে বিদায় জানাতে হাত ধরে এক জীবনদূতের।