• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্ষুদ্র এই প্রাণী মানুষের বন্ধু, হত্যা করলেই বিপদ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারি ২০২০  

শীতের সঞ্চয় চাই/ খাদ্য খুঁজিতেছি তাই/ ছয় পায়ে পিলপিল চলি- কে বলছে এই কথা তা সবারই জানা। নিতান্তই ক্ষুদ্র এক প্রাণী পিঁপড়া। তবে তাকে ক্ষুদ্র করে দেখবেন না যেন! তার কাছ থেকেও মানবজাতির শেখার অনেক কিছুই রয়েছে। বিশেষ করে সঞ্চয় ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে চলাফেরায় তাদের রয়েছে বিশেষ দক্ষতা। 

মানুষের সঙ্গেও রয়েছে তাদের অনেক মিল। তারাও কথা বলতে সক্ষম। অবাক হচ্ছেন? পিঁপড়া গবেষকরা বলেন, পৃথিবীতে মানুষের তুলনায় পিঁপড়ার সংখ্যা দশ লাখ গুণ বেশি। পৃথিবীতে যত পিঁপড়া আছে, তাদের জৈববস্তু পৃথিবীতে বসবাসকারী সাতশ কোটি মানুষের সমান। ক্ষুদ্র এই প্রাণীটিও মানুষের মতোই সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। মানুষের মতোই কর্মব্যস্ত থাকে তারা। সারাদিনই চলতে থাকে এই ক্ষুদ্র প্রাণী।

 

লাল পিঁপড়া

লাল পিঁপড়া

পিঁপড়া আকৃতিতে যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন, বয়সের বিচারে পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন। গবেষকদের মতে, পিঁপড়া ডাইনোসর যুগেরও আগে থেকে এই পৃথিবীতে বিরাজমান। প্রায় ১১০ মিলিয়ন বছর পূর্ব থেকেই নীরবে পিঁপড়া পৃথিবীর পৃষ্ঠে রাজত্ব করছে। পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১০ হাজার ট্রিলিয়ন এর চেয়েও বেশি পিঁপড়া বাস করে। এখন পর্যন্ত বাইশ হাজারেরও বেশি পিঁপড়ার প্রজাতিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে ধারণা করা হয়, এর চেয়েও অনেক বেশি প্রজাতির পিঁপড়া আছে।

তবে এই ছোট্ট প্রাণীটিকে দেখলেই যেন আমরা ভয় পেয়ে যাই! কারণ এদের কামড় খাওয়ার শখ কারো নেই! আর তাই দেখলেই আমরা পিঁপড়াকে আঙুলের চাপ দিয়ে হলেও মেরে ফেলি। ইসলামে কিন্তু পিঁপড়া মারা নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে হাদিসেও অনেকবার বলা হয়েছে-

 

লাল পিঁপড়া

লাল পিঁপড়া

আহমদ ইবন সালিহ (রহঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একবার কোনো একজন নবীকে একটি পিঁপড়া কামড়ায়। তখন তিনি সেখান থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়ে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দিতে বলেন। ফলে, সব পিঁপড়াকে জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। তখন আল্লাহ তার উপর ওহী- নাযিল করেন যে, তোমাকে তো মাত্র একটি পিঁপড়া কামড়েছিল, অথচ তুমি (প্রতিশোধ স্বরূপ) এমন একটা কাওমকে ধবংস করে দিলে, যারা (আমার) তাসবীহ পাঠ করতো।

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার শ্রেণীর প্রাণীকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। তারা হলো- পিঁপড়া, মৌমাছি, হুদ-হুদ পাখী এবং চড়ুই পাখি। (কেননা, এরা কারো ক্ষতি করে না, বরং উপকার করে)।

 

একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছে তারা

একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছে তারা

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একবার একজন নবী একটা গাছের নীচে অবস্থান করার সময় তাকে এক পিঁপড়া কামড়ায়। তখন তিনি সেখান থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়ে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দিতে বলেন। ফলে, সব পিঁপড়া পুড়ে মারা যায়। তখন আল্লাহ্‌ তার উপর ওহী-নাযিল করেন যে, তুমি কেন একটি পিঁপড়াকে শাস্তি দিলে না? (অর্থাৎ সব পিঁপড়া তো তোমাকে কামড়ায়নি, যে তোমাকে কামড়েছে, তাকে মারলেই পারতে।)

শুধু হাদিসেই নয় পবিত্র কোরআন শরীফেও পিঁপড়া সম্পর্কে বলা হয়েছে। ‘যখন সুলাইমান (আ.) এবং তার বাহিনী পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছাল তখন একটি নারী পিঁপড়া বলল, হে পিঁপড়ারা! তোমাদের গর্তে প্রবেশ কর। এমন যেন না হয়, সুলাইমান এবং তার সৈন্যরা তোমাদের পিষে ফেলবে তোমরা তা টেরও পাবে না। সুলাইমান তার কথায় মৃদু হাসলেন।’ (সূরা নামল : ১৮)

 

খাবার সংরক্ষণ করছে পিঁপড়া

খাবার সংরক্ষণ করছে পিঁপড়া

পিঁপড়া গবেষকদের দেয়া তথ্য মতে, কালো পিঁপড়ারা ১৫ বছর আর লাল পিঁপড়া ৪ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। একটি পিঁপড়ার দৈর্ঘ্য সাধারণত ০.৬৪ থেকে ২.৫ সে.মি. হয়। তবে কিছু প্রজাতি রয়েছে যাদের আকার ০.৫ থেকে ০.৭ সে.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর বড় প্রজাতির পিঁপড়া ১০ থেকে ১২ সে.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। অধিকাংশ পিঁপড়া লাল ও কালো রঙের হয়ে থাকে। তবে সবুজ রঙের পিঁপড়ারও সন্ধান মিলেছে।

পরিশ্রমী এ পতঙ্গটি কারো কোনো ক্ষতি করে না। বরং মানুষ ও পরিবেশের উপকার সাধন করে ছোট্ট এই বন্ধু। ডেইলিসায়েন্সে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, চীনের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, বায়ু ও পানি প্রবাহ এবং জৈব পদার্থ বাড়ানোর মাধ্যমে মাটির উপকারিতা বাড়ায় পিঁপড়া। একই সঙ্গে মাটিতে বাসা বাঁধার সময় পতঙ্গটি আশপাশে যে স্তুপ বা ঢিবি বানায়, মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষেত্রেও তা সহায়ক ভূমিকা রাখে। অত্যন্ত চালাক এই ক্ষুদে প্রাণীকে নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেছেন। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টি হলো তারা কথা বলতে পারে। তবে সেটা বোঝার ক্ষমতা মানুষের নেই। 

 

দলবদ্ধভাবে চলাচল করে তারা

দলবদ্ধভাবে চলাচল করে তারা

নিজেদের ভাষায়ই তারা ভাব বিনিময় করে থাকে। লক্ষ্য করে দেখবেন, দুটি পিঁপড়া একসঙ্গে হলে, একটু সময়ের জন্য হলেও দাঁড়ায়। এসময় তারা একে অন্যের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে। এই গুণটি তো অনেক মানুষের মাঝেও নেই। ক্ষুদ্র পিঁপড়া থেকেও এই শিক্ষাটি মানুষরা নিতে পারে। পোকামাকড়দের মধ্যে সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কের অধিকারী হচ্ছে পিঁপড়া। অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় পিঁপড়ার মস্তিষ্কে রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ হাজারেরও বেশি কোষ।

চলুন তবে জেনে নেয়া যাক পিঁপড়া সম্পর্কিত দারুণ সব তথ্য-

১। আমরা কালো, লাল আবার বড় পিঁপড়াও চিনি। তবে সারা পৃথিবীতে মোট ১২ হাজার প্রজাতির পিঁপড়া রয়েছে।

২। একটি পিঁপড়া তার নিজ ওজনের ২০ গুণ বেশি ওজনের কোনো জিনিস তুলতে পারে। ধরো তুমি যদি ক্লাস টুতে পড়ো আর তোমার পিঁপড়ার মতো শক্তি থাকত তাহলে তুমি অনায়াসেই একটা গাড়ি তুলে ফেলতে পারতে।

 

খাবার কাঁধে চলছে তারা

খাবার কাঁধে চলছে তারা

৩। পিঁপড়ার বাসায় তিন ধরণের পিঁপড়া থাকে। কর্মী পিঁপড়া, পুরুষ পিঁপড়া আর রানী পিঁপড়া। একটি রানী পিঁপড়া অনেক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এই সময়ে তারা কয়েক লাখ বাচ্চা পিঁপড়ার জন্ম দেয়।

৪। পিঁপড়ারা যদি যুদ্ধ শুরু করে তাহলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যায়।

৫। রানী পিঁপড়াদের ডানা থাকে। যখন তারা নতুন বাড়ি বানায় তখন সেই ডানাকে ছায়া দেয়ার কাজে ব্যবহার করে।

৬। পিঁপড়ার কিন্তু কোনো ফুসফুস নেই। তাদের শরীরে শুধু একটা ছিদ্র আছে। সেই ছিদ্র দিয়ে সে অক্সিজেন শোষণ করে আবার একই ছিদ্র দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়।

৭। পিঁপড়ার এক বাসার রানী যখন মারা যায় এরপর বাসার পিঁপড়ারা মাত্র কয়েকমাস বাঁচতে পারে। রানী ছাড়া অন্য কোনো পিঁপড়া জন্ম নিতে পারে না।