• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

কতটা ধৈর্য্য নিয়ে রোজা রাখেন ইউরোপ-আমেরিকার মুসলমানরা!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০১৯  

রোজার শেষে ঈদ আসে। খুশি আর আনন্দে ভরা ঈদের বার্তা নিয়ে প্রতি বছর বিশ্ব মুসলিমদের ঘরে রোজা আসে আরবি ক্যালেন্ডার অনুসারে। দেশে-বিদেশে সব জায়গায় মুসলমানরা এই এক মাস সিয়াম সাধনা করেন। যে যতটুকু পারে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। টানা এক মাস আত্মশুদ্ধির কঠোর সাধনা শেষ করে সবাই শামিল হয় ঈদের জামাতে। আনন্দের বন্যা বয়ে যায় ঘরে ঘরে।

রমজানজুড়ে সিয়াম সাধনার সংস্কৃতি বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রায় অভিন্ন হলেও অমুসলিম দেশগুলোর বেলায় এর অনেকটা ছন্দপতন হয়। ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাসকারী মুসলমানরা সিয়াম সাধনা করে খানিকটা অন্যভাবে। বেশ কিছুটা প্রতিকূলতার মধ্যে।

ইউরোপের নেতৃত্ব দেয়া অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ ইতালির মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ নাগরিক মুসলমান। অর্থাৎ ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের বিপরীতে মুসলমানের সংখ্যা খুবই সামান্য। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা আরও কম।

ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মুসলমানদের অনেকেই জানে তার ধর্ম ‘ইসলাম’, সে মুসলমান, এতটুকুই। এর বাইরে ধর্ম মানা বা পালন করার সঙ্গে তাদের পরিচয় কম। তবে ইতালিতে বসবাসকারী অভিবাসীদের একটি বড় অংশ মুসলিম। তারা বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে এসেছেন। ধর্মকর্ম করার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে রমজান মাস এলে এবং সাপ্তাহিক জুমার দিনে অনেকেই কমিউনিটিভিত্তিক নামাজের স্থানগুলোয় যায়, এবাদত বন্দেগিতে শামিল হয়।

এ বছর ইতালিতে রোজা শুরু হয় ৬ মে তারিখ থেকে। অর্থাৎ ৫ মে রাতে প্রথম তারাবি ও সেহেরি হয়। অনেক বছর থেকে দেখে আসছি, ইতালিতে মুসলিম ধর্মের উৎসবগুলো পালন করা হয় সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে। স্থানীয় মুসলিম কালচারাল সেন্টারগুলো এভাবেই রোজা পালন বা ঈদের ঘোষণা দেয়া হয়। এ হিসাবে ইতালিতে রোজা শুরু হয়, হয়েছে বাংলাদেশ থেকে একদিন আগে। ইতালির মুসলমানরা ঈদও উদযাপন করবে একদিন আগে, সৌদি আরবের সঙ্গে।

এ বছর ইতালির মুসলমানরা প্রথম রোজা রেখেছে ১৬ ঘণ্টা। এখন প্রতিদিন প্রায় ১৭ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। ঈদ আসতে আসতে দিনের দৈর্ঘ্য আরও অন্তত এক ঘণ্টা বড় হবে। গরমের দিনে এত লম্বা সময় রোজা রাখা সত্যিই কষ্টসাধ্য বেপার। যারা দিনের বেলায় কাজ করে তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তবু অনেকেই রোজা রাখেন। শত কষ্ট, প্রতিকৃলতা উপেক্ষা করে সিয়াম সাধনা করেন। যারা কোনোভাবেই কর্ম দিবসে রোজা রাখতে পারেন না তারা অন্তত সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রোজা রাখার চেষ্টা করেন।

রোজার দৈর্ঘ্য নিয়ে আমার নিজের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা আছে। বিভিন্ন ধর্মীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নামাজের সময়সূচিতে দেখা যায় ইতালিতে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয় ভোর সাড়ে ৩টায়। আর সূর্যোদয় সাড়ে ৫টায়। রোজা পালনকারীরা সেহরি শেষ করে সাড়ে ৩টায়। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগে। কিন্তু সাধারণভাবে জানি রোজা রাখার সময় হলো সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এ বিষয়ে স্থানীয় মুসলিম কালচারাল সেন্টারের একাধিক ইমামের সঙ্গে কথা বলেও মনোপুত কোনো জবাব মেলেনি।

একইভাবে ইতালিতে প্রতি বছর মুসলিম কালচারাল সেন্টারগুলো থেকে ফিতরার ঘোষণা দেয়া হয় ৭-৮ ইউরো। কিন্তু স্থানীয় বাজারগুলোতে এক কেজি ভালো আটা বা চালের দাম সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় ইউরো। ইতালিয়ানদের প্রধান খাবার পাস্তার দাম আরও কম। এই হিসাবে সাড়ে তিন কেজি চাল, আটা বা পাস্তার দাম হিসাব করলে দেখা যায় ৭-৮ ইউরো ফিতরা অনেক বেশি হয়। এই হিসাবেরও কোনো স্বচ্ছ ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

মাত্র ক’বছর আগেও ইতালিয় অধিকাংশ নাগরিকের মধ্যে রোজা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ছিল না। এখন মোটামুটি সবাই জানে রমজান হলো মুসলমানদের জন্য ‘সাকরো মেজে’। অর্থাৎ পবিত্র মাস। এই মাসে মুসলমানরা দিনের বেলা না খেয়ে থাকে। অন্যায় অপকর্ম থেকে দুরে থাকে।

ইতালিতে ব্যবসায়ীকভাবেও রমজানের গুরুত্ব বেড়েছে। গত ২/৩ বছর থেকে লক্ষ করা যায় বিভিন্ন সুপার মার্কেটগুলোয় রমজান স্পেশাল বা হালাল কর্নার করা হয়। রাজনীতিবিদরা রোজার শুরুতে মুসলিমদের শুভেচ্ছা জানান।

ইতালির বাংলাদেশি কমিউনিটিতে রোজা পালন করা হয় অনেকটা বাংলাদেশের মতো করে। ঘরে ঘরে ছোলা, পেয়াজি, বেগুনি বানানো হয়। বিশেষ করে ছুটির দিনে বাঙালিপাড়া মৌ মৌ করে। কমিউনিটিভিত্তিক নামাজের স্থানগুলোয় নিয়মিত ইফতারি এবং তারাবির আয়োজন করা হয়। এসব ইফতারির আয়োজনে কমিউনিটির ধর্মপ্রাণ মানুষরাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে থাকেন। এ ছাড়া কমিউনিটিভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ইফতার পার্টির আয়োজন করে।

বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন খাবারের দোকান বা রেস্তোরাঁগুলোয় ইফতারির বিভিন্ন পদ তৈরি করা হয়। স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও ছুটির দিনে বাবা-মায়ের সঙ্গে রোজা রাখে। ঈদের আগে নতুন জামাকাপড় কেনে। কেউ কেউ মেহেদির রঙে নিজেকে সাজায়।