• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

সিপিবির ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৮  

ক্ষমতায় গেলে রুটিন কাজের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান সংবিধানে যুক্ত করাসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের অঙ্গীকার করে ৩০ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি মেহনতি ও দরিদ্র রাজনৈতিক নেতাদের প্রার্থী হওয়ার পথে আর্থিক বাধা দূর করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষিত এই ইশতেহারকে দিনবদলের ও নতুন প্রজন্মের মুক্তি-আকাঙ্ক্ষার দলিল হিসেবে অভিহিত করেছে বামপন্থি এ দলটি।

শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রত্যয় ব্যক্ত করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে সিপিবি। ইশতেহারের স্লোগান করা হয়েছে ‘ভিশন-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’। এর আলোকে ১৫১টি উপ-দফায় ৩০ দফা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়েছে।

ইশতেহার ঘোষণা করে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ক্ষমতায় গেলে তারা নিরানব্বই শতাংশ মানুষের স্বার্থের দিকে খেয়াল রেখে কাজ করবেন। নির্বাচনকালীন সরকার ও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রে তাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করা হবে। তিনি বলেন, দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। ফলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি বুঝে তারা মাঠে থাকতেও পারেন, আবার বর্জনও করতে পারেন।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে অংশগ্রহণকারী ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সিপিবিই প্রথম তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করল। আগামী নির্বাচনে ৭৫টি আসনে দলীয় প্রতীক ‘কাস্তে মার্কা’ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দলটি। তবে বাম গণতান্ত্রিক জোটের এই শরিক দলটি জোটগতভাবেও নির্বাচন করবে। সিপিবিসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে সব মিলিয়ে দেড় শতাধিক আসনে নির্বাচন করার কথা রয়েছে।

দলের ইশতেহার প্রসঙ্গে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সিপিবির নির্বাচনী ইশতেহার ব্যবস্থা পাল্টে দেওয়ার দলিল, নতুন প্রজন্মের সৃজনশীল মুক্তি-আকাঙ্ক্ষার দলিল। ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তরুণ সমাজকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব পালন করবে সিপিবি।

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সহ-সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আবদুল্লাহ কস্ফাফী রতন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, আহসান হাবিব লাবলু, জলি তালুকদার, সদস্য সাদেকুর রহমান শামীম, ডা. সাজেদুল হক রুবেল, মো. কিবরিয়া প্রমুখ।

আরও যা আছে ইশতেহারে: সিপিবির ইশতেহারে বলা হয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে গরিব সহায়ক ও গ্রাম-অভিমুখীন নীতি অনুসরণ এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে রাষ্ট্রীয়, সমবায়, ব্যক্তি এবং অন্যান্য মিশ্র খাতকে সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা রাখবে। এ ছাড়া অঞ্চল ও স্থানভিত্তিক পরিকল্পনা করে নিচ থেকে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কার্যক্রম ওপরের দিকে আনার (বটম আপ) পন্থায় দেশ পরিচালনা, বিত্তবানদের জন্য কর রেয়াত বন্ধ ও প্রত্যক্ষ কর হার বৃদ্ধি এবং সাধারণ জনগণের ওপর আরোপিত পরোক্ষ করের অনুপাত হ্রাস করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, বায়োটেকনোলজিসহ আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ও শিল্পের বহুমুখীকরণ করে বিকল্প অর্থনৈতিক নীতি ও ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত করবে দলটি।

সিপিবি ক্ষমতায় গেলে ন্যায়পাল ব্যবস্থা চালু করবে। এ ব্যাপারে আর্থিক খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম রোধ করাসহ ঘুষ-দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্বৃত্তায়ন-মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হবে। বন্ধ কলকারখানা চালু, বন্ধ হওয়া হস্তান্তরিত কারখানার পুনঃগ্রহণ, সরকারি খাতে নতুন শিল্প স্থাপনের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ এবং ব্যক্তিগত খাতে শিল্প স্থাপনে প্রকৃত সহায়তা দেওয়া হবে। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্ত করা হবে। গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের ভিত্তিতে রাষ্ট্রক্ষমতাকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি ‘প্রজাতন্ত্রের প্রকৃত মালিক জনগণ’ সর্বক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন ঘটনো হবে।

ইশতেহারের অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে, দেশীয় শিল্পের বিকাশসাধন, শ্রমিক ও কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবিনমান উন্নয়ন করা। পুনর্বাসন ছাড়া বস্তি ও হকার উচ্ছেদ বন্ধসহ দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হবে। শহরের বস্তিবাসী, হকার ও নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন করা হবে। ক্ষমতায় গেলে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমকেও সর্বজনীন করবে সিপিবি। পরিবেশ বাঁচাতে গঠন করা হবে পরিবেশ আদালত। রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবন এলাকায় শিল্প-কারখানা নির্মাণ বন্ধ, নদী পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ গ্রহণসহ প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষা করা হবে। দলটি ক্ষমতায় গেলে জাতিসংঘ পানি প্রবাহ আইন ১৯৯৭-এ অনুস্বাক্ষর, পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, পানিনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাসহ পানি উন্নয়ন এবং বন্যা সমস্যার প্রতিকার করবে বলে অঙ্গীকার করেছে।