• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

খালেদাসহ ২ বছরের বেশি দণ্ডিতরা ভোটে অযোগ্যই রইলেন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

যশোর-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানার সাজার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতই থাকবে। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের মামলায় সাবিরা সুলতানার সাজা স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর চেম্বার জজ আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গতকাল রবিবার এক আদেশে ওই স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন। আদালত আদেশে বলেন, ‘স্টে উইল বি কন্টিনিউ’ (স্থগিতাদেশ অব্যাহত থাকবে)। সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের ফলে সাবিরা সুলতানা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না।

শুধু সাবিরা সুলতানাই নন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের বেশি দণ্ডিত কারো পক্ষেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকল না। গতকাল সারা দেশে রিটার্নিং অফিসাররাও দুই বছরের বেশি দণ্ডিত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন।

আগের দিন শনিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের করা আলাদা দুটি আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন। সে অনুযায়ী গতকাল আপিল বিভাগে শুনানি হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও এ বি এম বায়েজিদ। সাবিরা সুলতানার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী ও মো. আমিনুল ইসলাম।

গতকাল আদেশের পর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দণ্ডিত ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণসংক্রান্ত আবেদনের বিষয়ে চেম্বার বিচারপতির আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। ফলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিচারিক আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আর আজকে যাঁর আবেদনের বিষয়ে শুনানি হলো সেই সাবিরা সুলতানাই নন, এটা সংবিধানের বিধান। দুই বছরের বেশি দণ্ডিত কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’ তিনি বলেন, ‘এখন থেকে যাঁরা নির্বাচন করবেন, রাজনীতি করবেন তাঁরা নিজেদের কলুষমুক্ত রাখবেন। তাঁদের কাছে একটা বার্তা যাবে জনপ্রতিনিধি হতে হলে তাঁকে সৎ হতে হবে, কোনো রকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে না। মামলায় তিনি যাতে দণ্ডপ্রাপ্ত না হন। আজকের আদেশ অবশ্যই মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগে অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত হয়েও নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সে সময় আদালত এবং অ্যাটর্নি জেনারেল তাতে কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। অথচ আমার মক্কেল তাঁর পক্ষে আদেশ পাওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল অস্বাভাবিকভাবে চেম্বার আদালত বসান। সেখানে তাঁরা আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে যান।’ তিনি বলেন, ‘সরকার একদিকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যবস্থার কথা বলছে; অন্যদিকে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে একতরফা একটি নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। বিএনপির জনপ্রিয় প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নানা কৌশলে এগোচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যশোরে ঝিকরগাছার আমাদের এই প্রার্থীর মামলার উদাহরণটিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণার পরিকল্পনা করছে। সরকারের এই অপকৌশলের তীব্র নিন্দা জানাই।’

অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় সাবিরা সুলতানার তিন বছরের সাজা গত বৃহস্পতিবার স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক বেঞ্চ ওই স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। একই ধরনের সাজাপ্রাপ্ত অপর আসামিরাও সুবিধা নিতে পারেন—এমন আশঙ্কায় জরুরি ভিত্তিতে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও শনিবার সকালে চেম্বার জজ আদালতে শুনানি হয়। এরপর আদালত অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়ে আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। গতকাল আপিল বিভাগে শুনানি শেষে স্থগিতাদেশ বহাল রাখা হয়েছে।

এর আগে ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দণ্ড স্থগিত চেয়ে বিএনপির পাঁচ নেতাসহ ছয়জনের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্টের আলাদা দুটি বেঞ্চ। আদালত বলেছিলেন, দণ্ড স্থগিত করার কোনো বিধান নেই। আদালত আরো বলেছিলেন, এ আদেশের পর দণ্ডিতরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন আপিল বিভাগে আবেদন করলে আপিল বিভাগ ‘নো অর্ডার’ বলে আদেশ দেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, দণ্ডিতরা খালাস পেলেও খালাস পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবেন না।

দুদকে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে মামলা করেছিল দুদক। ওই মামলায় যশোরের একটি আদালত গত ১২ জুলাই সাবিরা সুলতানাকে দুটি ধারায় তিন বছর করে কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। দুটি ধারায় দেওয়া কারাদণ্ড একযোগে চলবে বলে আদেশ দেওয়ায় তাঁকে কার্যত তিন বছরের দণ্ড দেওয়া হয়। ওই রায়ের পর ১৭ জুলাই বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সাবিরা। এরপর তিনি কারাগারে থেকে ওই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। আদালত তাঁর আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন গত ৩০ জুলাই। পরে সাবিরা জামিনের আবেদন করলে গত ৬ আগস্ট জামিন দেন হাইকোর্ট। এরপর ১৪ অক্টোবর কনভিকশন (দোষী সাব্যস্তকরণ) ও সেন্টেনস (দণ্ড) স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন সাবিরা। ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৯ নভেম্বর কনভিকশন ও সেন্টেনস স্থগিত করেন হাইকোর্ট।