• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আপনি কাকে ভোট দেবেন? কেন দেবেন?

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০১৮  

দরজায় কড়া নাড়ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ‘কে নৌকায় ভোট দেবেন আর কে ধানের শীষে ভোট দেবেন’ এ নিয়ে আলোচনাও এখন তুঙ্গে। ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে, দলগুলো তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নও দিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়দলই তৃণমূলে তাদের মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

ভোট দেবার সময় আমাদের চিন্তাভাবনা করা উচিত, কাকে ভোট দিচ্ছি? কেন দিচ্ছি? তিনি কি আদৌ ভোট পাওয়ার যোগ্য? যোগ্য প্রার্থীদের ভোট না দিলে কি হতে পারে সেটা অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা দেখেছি। এবার তৃতীয়বারের মতো নৌকায় ভোট দেবেন! কেন দেবেন সে ব্যাখ্যা দিচ্ছি।

প্রথমত, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই আলবদর, রাজাকার, আল শামস বাহিনীর কথা কি ভুলে গিয়েছি? যারা পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। তাদেরকে কি ছেড়ে দেব আমরা? বিএনপি বরাবরই তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে, তাদের সঙ্গে আঁতাত করে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করেছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করেছে। এজন্য, তারা হরতাল-বোমাবাজির মত সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। এসব কি আমরা এত সহজেই ভুলে যাবো?

দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের ভূমিকা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে, বোমাবাজি, সন্ত্রাস হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের এই দুই মেয়াদে দেশের কোথাও জঙ্গিবাদের উত্থান বা বোমাবাজি করার ঘটনা চোখে পড়ে নি।

তৃতীয়ত, বর্তমান সরকারের আমলে সারাদেশে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্লিনিকে মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এতে করে প্রান্তিক মানুষজনের নিকটে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে গিয়েছে। এখন আর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা বিরল। কিন্তু বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো একেবারেই ছিল না বললেই চলে। বর্তমান সরকার প্রায় প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালগুলোকে ২৫০ শয্যায় এবং প্রায় সকল উপজেলা হাসপাতালকে ১০০ শয্যা হাসপাতালে রূপান্তর করেছে।

চতুর্থত, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতের উৎপাদন সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট থেকে বেড়ে নয় হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশের বিদ্যুতের ঘাটতি অনেকটাই নিরসন করা সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌছানো সম্ভব হয়েছে ।
পঞ্চমত, বিএনপির শাসনামলে আমাদের দেশের অর্থনীতি প্রায় ভেঙে পড়েছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাদের অর্থনীতি আবারো এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি আমলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ০১ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে পৌঁছেছে। একইসাথে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৩ শতাংশের থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

ষষ্ঠত, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দারিদ্র্য বিমোচনমূলক কর্মকান্ডের জন্য দেশে দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্যের হার কমে গেছে। বিবিএসের সর্বশেষ খানা জরিপ ২০১৬ অনুসারে দেশে দারিদ্র্য হার ২১ দশমিক ৩ শতাংশে ও অতি দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে নেমে এসেছে যেখানে ২০০৮ সালে দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্যের হার ছিল যথাক্রমে ৩৫ দশমিক ০ ও ২১ দশমিক ০ শতাংশ।

সপ্তমত, বর্তমান সরকার মহাসড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। সারাদেশে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক, ৪ হাজার ৪০৪টি সেতু এবং ১৪ হাজার ৮৯৪টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে বিএনপি সরকারের আমলে বলার মতো কোনো উন্নয়নই হয়নি।
অষ্টমত, বর্তমান সরকার সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্যে ২০১৭ সালে সরকার পাঁচটি নৃ-গোষ্ঠীর ভাষায় ৭৭ লাখ ২৮২টি বই ছাপিয়ে বিতরণ করেছে । ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রথমবারের মতো নয় হাজার ৭০৩ কপি ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। যেখানে বিএনপি সরকারের আমলে দেশের শিক্ষার অবকাঠামো অতি দুর্বল ছিল।

নবমত, বর্তমান সরকারের আমলে আমাদের দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা অনেক কমে এসেছে। যেখানে বিএনপি জামায়াত শাসনামলে হিন্দু-সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভেঙে দেয়ার ঘটনা প্রতিদিন পত্রিকার পাতা উল্টালেই পাওয়া যেত।

দশমত, এছাড়াও নারী ক্ষমতায়ন, শ্রমজীবী মানুষের উন্নয়ন, বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন, প্রত্যন্ত এলাকায় খাবার পানি, স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন কারণে আপনি নৌকায় ভোট দেবেন। এবার আপনি ভাবুন নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়নে অংশ নেবেন নাকি বিএনপি-জামায়াতের সাথে হাত মিলিয়ে দেশে আবারো সেই বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গি-সন্ত্রাসের রাজত্ব ফিরিয়ে আনবেন?