• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দলীয় বিশৃঙ্খলায়,বিএনপির নীতি নির্ধারকরাও জড়িয়ে যাচ্ছেন হাতাহাতিতে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রমরমা মনোনয়ন বাণিজ্যের পরপরই দলের বঞ্চিত ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল। তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুরসহ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীদের ওপর রক্তক্ষয়ী হামলাও চালিয়েছিল তারা। অভ্যন্তরীণ কোন্দল আতঙ্কে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের অনেকেই ছিল না প্রচারণার মাঠে। ফলে বিশৃঙ্খলার বৃত্তে আটকে পড়া নেতৃত্বশূন্য দলটি নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে হেরে যায়।
বিশৃঙ্খলার ধারাবাহিকতায় বুধবার দ্বিতীয়বারের মতো বগুড়ায় আবারও মেজাজ হারালেন বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সূত্র জানিয়েছে, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে হাতাহাতির একপর্যায়ে তার কলার চেপে ধরেছেন ফখরুল।

বুধবারের ঘটনাচক্র নিয়ে বিএনপি সূত্র জানায়, এদিন দুপুরে ঠাকুরগাঁও থেকে সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার পথে বগুড়া শহরতলীতে হোটেল মম ইন- এ যাত্রাবিরতি করেন ফখরুল। সংবাদ পেয়ে এ সময় তার সঙ্গে মতবিনিময় করতে যান স্থানীয় নেতারা। সভা শুরুর আগে হঠাৎই লিফটে জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের দলীয় কিছু বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতির পর্যায়ে রূপ নিলে ফখরুল সাইফুলের কলার চেপে ধরেন। পরে লিফটে থাকা অন্য নেতারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

দলটির তৃণমূলের বিশৃঙ্খলাকেও ছাপিয়েছে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতির সাথে হাতাহাতির ঘটনাটি। এর আগে নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেওয়া নিয়ে এরই মধ্যে মির্জা ফখরুল ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে।
দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জেলে এবং ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পলাতক রয়েছে। ফলে বিএনপির মহাসচিব হিসেবে দলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা ফখরুল। এমন একজন দায়িত্বশীল নেতার তৃণমূল পর্যায়ের নেতার সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ানোর বিষয়টিকে বিএনপির আরও একটি ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আশঙ্কা করেছেন দলটির বিলুপ্তির।

“পরাজয়ের পর বিএনপির মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে” নির্বাচনের পর মির্জা ফখরুলের করা এমন মন্তব্যকে স্বয়ং নিজেই অনেকটা বাস্তবে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন বলে টিপ্পনি কাটছেন অনেকে।
বিএনপি বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছিল বিএনপির পক্ষ থেকে। কিন্তু জেলে থাকার কারণে বেগম জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। বিএনপির জয় পাওয়া পাঁচটি আসনের মধ্যে একটিতে গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হন ফখরুল।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত ২৬ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে দলের মনোনয়নের চিঠি বিতরণের সময় এই সাইফুলকেই চিৎকার করে ‘বেয়াদব’ বলে ধমকে ওঠেন ফখরুল। যা একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রপ্রচারের সময় ধরা পড়ে। সেময় ফখরুলের কাছ থেকে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন ফরমের চিঠি দেয়া হয় সাইফুলকে। আর তা নেয়ার সময় হঠাৎ ক্ষেপে উঠেন বিএনপির মহাসচিব।
এরপর গত ১৫ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে সাইফুলের দিকে তেড়ে যান তিনি। বগুড়ার টিটো মিলনায়তনে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব নিয়ে বিএনপির অন্য এক নেতার সঙ্গে গোলযোগ হয়েছিল সাইফুলের। এক পর্যায়ে তার দিকে তেড়ে যান মির্জা ফখরুল। সেদিন হাত তুলে তাকে চড় দিতেও উদ্যত হন তিনি।
দলের দুঃসময়ে তার মতো প্রবীণ নেতাও শেষ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলায় জড়িয়েছেন, সেটা মানতেই পারছে না তৃণমূল।