• বুধবার ২২ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজ পালিত হবে ‘লাইলাতুল কদর’: আমল ও ফজিলত

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১ জুন ২০১৯  

আজ ২৭ রমজান দিবাগত রাতে পালিত হবে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর। সম্মানিত রাত এ রাত সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। এক হাজার রাত ইবাদত করলে যে সওয়াব হতে পারে, এই এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

আল্লাহ তায়ালা এ রাত সম্পর্কে বলেন, লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ (জিব্রীল আ.) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। যে রাত পুরোটাই শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা কদর (৯৭) : ৩-৫)

রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরের রাতকে ইবাদতের মাধ্যমে সারা রাত্র জাগরণ করে কাটাবে তার পূর্বকৃত গুনাহসমূহকে মাফ করে দেয়া হবে’। (বুখারি ও মিশকাত শরিফ)

আল কোরআনে কদরের রাত্রিকে হাজার মাসের চেয়ে ও উত্তম বলা হয়েছে। হাজার মাস ৮৩ বৎসর ৪ মাস হয়ে থাকে। অর্থাৎ হাজার মাস ইবাদত-বন্দেগী করে যে সওয়াব অর্জন করা যায় সে সওয়াব শুধু এক কদরের রজনীতে ইবাদত-বন্দেগী করে-ই অর্জন করা যায়। এ জন্য যতটুকু পারা যায় ততটুকু ইবাদত করে কদরের রজনীকে কাটানো আমাদের জন্য জরুরি। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন,‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর।’ (মিশকাত ও বাইহাকি শরিফ)

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন,‘তোমরা লাইলাতুল কদরকে মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে তালাশ কর। (বুখারি শরিফ)

হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেন, ‘রমজানের ২৭ তারিখের রাতের ভোর পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগী আমার কাছে সারা রমজানের অন্য সব রাতের ইবাদত অপেক্ষা অধিক প্রিয়। (তিরমিযি শরিফ) 

সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ রাত শবে কদর। এ রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাঝে কাটান মুসলিম উম্মাহ। তবে এসকল আমল হওয়া উচিত কোরআন হাদিসে বর্ণিত নির্দেশনা অনুযায়ী। শুধু আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা নয়, এ রাতে গুরুত্ব দিতে হবে বেশি বেশি আমল ও ইবাদতের।

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! (সা.) আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন; তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (ইবনে মাজা, সহিহ-আলবানি)

রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবে কদর প্রাপ্তি। কারণ রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। ইতিকাফের মূল কথা হলো সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যাওয়া। শবে কদরে বেশি পরিমাণে নফল নামাজ পড়া উত্তম। নফল নামাজের নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। দুই রাকাত থেকে যত রাকাত ইচ্ছা পড়তে পারবে। এছাড়াও শবে কদরে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, মাগফিরাত ইত্যাদিতে নিজেকে মশগুল রাখা উচিত। কেউ যদি পূণ্য অর্জনের এমন বড় সুযোগ পেয়ে অমনোযোগী থাকে তাহলে তার মতো হতভাগা আর কে হতে পারে? সুতরাং রমজানের শেষ দশকে শবে কদর পাওয়ার লক্ষ্যে ইবাদতের প্রতি বেশি যত্নবান হতে হবে। সেই সঙ্গে জাগ্রত থেকে রাতে ইবাদত করা চাই। এ প্রসঙ্গে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) শেষ দশকে ইবাদতে অধিক পরিশ্রম করতেন- যা অন্য সময় করতেন না। (মুসলিম : ২৮৪৫)

শবে কদরের আমল হলো: (ক) নফল নামাজ, তাহিয়্যাতুল ওজু, দুখুলিল মসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত, সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া। (খ) নামাজে কিরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা। (গ) কোরআন শরিফের সূরা কদর, সূরা দুখান, সূরা মুজাম্মিল, সূরা মুদ্দাচ্ছির, ইয়া-সিন, সূরা ত্ব-হা, সূরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সূরাসমূহ তেলাওয়াত করা। (ঘ) দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া। (ঙ) তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা। (চ) দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করাঅ (ছ) কবর জিয়ারত করা। (জ) নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা।