• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সূরা কাহাফের শিক্ষণীয় ঘটনা এবং বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২০  

সূরা আল কাহাফ (আরবি ভাষায়: الكهف) পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআনুল কারিমের ১৮ তম সূরা। সূরাটির আয়াত সংখ্যা ১১০ টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১১ টি। আল কাহাফ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

কখনো ভেবে দেখেছেন কি কেন মহান রাব্বুল আলামির আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হাবিব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রতি জুমার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করতে বলেছেন? আসুন জানার চেষ্টা করি।

এই সূরাটিতে মোট চারটি শিক্ষণীয় ঘটনা আছে, প্রতিটি ঘটনাতেই আছে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য উপদেশ। আসুন সেই ঘটনাগুলো ও তার শিক্ষাগুলো কি জানার চেষ্টা করি।

আরো পড়ুন>>> সূরা কাহাফের শিক্ষণীয় ঘটনা এবং বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশ (পর্ব-১)

১ম পর্বের পর থেকে...

আসুন, এবারে জেনে নেয়া যাক, সূরা কাহাফ এবং দাজ্জালের মধ্যে কিসের সম্পর্ক?

দাজ্জাল আবির্ভুত হবে শেষ সময়ে কিয়ামতের একটি বড় লক্ষণ হিসেবে, সে এই চারটি ফিতনা একত্রে নিয়ে আসবে–

আরো পড়ুন>>> জুমার দিনে ‘সূরা কাহাফ’ তেলাওয়াতের ফজিলত

সে মানুষকে আদেশ করবে যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার ইবাদত করে- (ঈমানের ওপর পরীক্ষা)

> তাকে বৃষ্টি বর্ষণ/ অনাবৃষ্টি সৃষ্টির ক্ষমতা দেয়া হবে এবং সে মানুষকে তার সম্পদ দিয়ে লোভ দেখাবে- (সম্পদের ওপর পরীক্ষা)

> সে মানুষকে পরীক্ষায় ফেলে দেবে তার ‘জ্ঞান’ এবং নানারকম সংবাদ প্রদান করে- (জ্ঞানের ওপর পরীক্ষা)

> সে পৃথিবীর এক বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করবে- (ক্ষমতার ওপর পরীক্ষা)

কিভাবে আমরা এই সব ফিতনা থেকে বাঁচতে পারি? সূরা কাহাফেই আছে এর উত্তর-

> ফিতনা হতে বাঁচার প্রথম উপায় : সৎ সঙ্গ 

وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا

‘আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি। যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না। (সূরা : কাহাফ, আয়াত : ২৮)।

> ফিতনা হতে বাঁচার দ্বিতীয় উপায় : এই পার্থিব জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করা

وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاء أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاء فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذْرُوهُ الرِّيَاحُ وَكَانَ اللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا

‘তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাজিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুষ্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর ওপর শক্তিমান।’ (সূরা : কাহাফ, আয়াত : ৪৫)।

 > ফিতনা হতে বাঁচার তৃতীয় উপায় : ধৈর্য্যশীল থাকা

‘মূসা বললেন: আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোনো আদেশ অমান্য করব না।’ (সূরা : কাহাফ, আয়াত ৬৯)।

> ফিতনা হতে বাঁচার চতুর্থ উপায়ঃ সৎ কর্ম সম্পাদন

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا

‘বলুন: আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।’ (সূরা : কাহাফ, আয়াত : ১১০)।:

> ফিতনা হতে বাঁচার পঞ্চম উপায় : আল্লাহর দিকে আহ্বান

وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَلَن تَجِدَ مِن دُونِهِ مُلْتَحَدًا

‘আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোনো আশ্রয় স্থল পাবেন না।’ (সূরা : কাহাফ, আয়াত : ২৭)।

> ফিতনা হতে বাঁচার ষষ্ঠ উপায় : পরকালের স্মরণ

وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَى الْأَرْضَ بَارِزَةً وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا

وَعُرِضُوا عَلَى رَبِّكَ صَفًّا لَّقَدْ جِئْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ بَلْ زَعَمْتُمْ أَلَّن نَّجْعَلَ لَكُم مَّوْعِدًا

وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا

‘যেদিন আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উম্মুক্ত প্রান্তর এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না। তারা আপনার পালনকর্তার সামনে পেশ হবে সারিবদ্ধ ভাবে এবং বলা হবে: তোমরা আমার কাছে এসে গেছ; যেমন তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছিলাম। না, তোমরা তো বলতে যে, আমি তোমাদের জন্যে কোনো প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করব না। আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে: হায় আফসোস! এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোনো কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারো প্রতি জুলুম করবেন না।’ (সূরা : কাহাফ, আয়াত : ৪৭-৪৯)।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে যেন সর্ব প্রকার ফিতনা হতে রক্ষা করেন। আমিন।

সূরা কাহাফ সম্পর্কিত কিছু হাদিস-

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে- যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে রক্ষা করা হয়; জামে তিরমিযীতে তিনটি আয়াতের বর্ণনা রয়েছে। সহিহ মুসলিমে শেষ দশটি আয়াতের বর্ণনা আছে। সুনান নাসায়ীতে সাধারণভাবে দশটি আয়াতের বর্ণনা রয়েছে। (ইবন কাসীর)।

আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেছেন) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (মুসলিম : ১৭৬০ ইফা)।

বারা ইবনে আযিব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি ‘সূরা কাহাফ’ পড়েছিলো। সেই সময়ে তার কাছে মজবুত লম্বা দু’টি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এই সময় একখণ্ড মেঘ তার মাথার উপরে এসে হাজির হলো। মেঘ খণ্ডটি ঘুরছিলো এবং নিকটবর্তী হচ্ছিল। এ দেখে তার ঘোড়াটি ছুটে পালাচ্ছিল। সকাল বেলা সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ওই বিষয়টি বর্ণনা করলো। একথা শুনে তিনি বললেন, এটি ছিল (আল্লাহর তরফ থেকে) রহমত বা প্রশান্তি (সাকিনা) যা কোরন পাঠের কারণে নাজিল হয়েছিলো। (মুসলিম : ১৭৩৩ ইফা)।