• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সৌরজগতে ‘ব্ল্যাক হোল’ প্রবেশের পরিণাম

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০১৯  

সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মত কোনো ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা আটটি রেডিও টেলিস্কোপের সাহায্যে সৌরজগৎ থেকে প্রায় ৫০ কোটি ট্রিলিয়ন দূরে অবস্থিত এই দানব আকৃতির ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা সক্ষম হয়েছে। এই ছবি প্রকাশের পর থেকেই মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউবা ব্ল্যাক হোলের ছবির কোয়ালিটি নিয়ে কমপ্ল্যান করছে আবার কেউ ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করে ব্ল্যাক হোল নিয়ে চিন্তিত হচ্ছে। তবে কখনো কি চিন্তা করে দেখেছেন কী হবে যদি কোনো ব্ল্যাক হোল আমাদের সৌরজগতের কাছাকাছি এসে পরে? সঙ্গে সঙ্গেই কি ধ্বংস হবে সৌরজগৎ নাকি সৌরজগৎ বেঁচে যাবে ব্ল্যাক হোলের কালো থাবা থেকে। তবে জেনে আসা যাক কি হতে পারে যদি আমাদের সৌরজগতে কোনো ব্ল্যাক হোল প্রবেশ করে? এর পূর্বে জেনে আসা যাক ব্ল্যাক হোল আসলে কি তা সম্পর্কে- 

ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের শাব্দিক অর্থে মহাকাশের কোনো বড় গহ্বর বুঝালেও আসলে তা নয়। ব্ল্যাকহোল আসলে অনেক মহাজাগতিক ম্যাটারের সমষ্টি একটি ক্ষুদ্র জায়গার মধ্যে আবদ্ধ। অন্য কথায় ব্ল্যাক হোলের মধ্যে অনেক মহাজাগতিক ম্যাটার কমপ্রেসড অবস্থায় রয়েছে। যে কারণে ব্ল্যাক হোলের মধ্যাকর্ষণ ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে থাকে। একটি ব্ল্যাক হোলের মধ্যাকর্ষণ ক্ষমতা এতটাই বেশি যে এর ভিতর থেকে একটি আলোকরশ্মীও অতিক্রম করতে পারেনা। কোনো পূর্ণ বয়ষ্ক মানুষ যদি ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি যেতে সক্ষম হয় তবে মূহর্তের মধ্যে ব্ল্যাক হোল তাকে টেনে নিবে এবং ব্ল্যাক হোলের মধ্যে প্রবেশের সঙ্গেই মানুষটি কমপ্রেসড হয়ে একটি ক্ষুদ্র ডটে পরিণত হবে। ব্ল্যাক হোল বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা যে ব্লাকহোলের ছবি তুলতে সক্ষম হয় তার আকৃতি ছিল প্রায় সূর্যের থেকে ৬৫০ গুণ বড়। এজন্য একে বিজ্ঞানীরা দানবের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। তবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মধ্যভাগে এর থেকেও বড় ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব রয়েছে। কী হবে যদি এই দানব আকৃতির সুপারম্যাসিভ কোনো ব্ল্যাক হোল সৌরজগতে প্রবেশ করে? 

ব্ল্যাক হোলগুলোর মধ্যে সবথেকে বড় হল সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল। এই দানব আকৃতির ব্ল্যাক হোলগুলোর মধ্যাকর্ষণ ক্ষমতা এতটাই বেশি যে এক আলোবর্ষ বা ৬ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকেও সৌরজগৎ এর বিনাশ ঘটাতে সক্ষম। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলগুলোর চারপাশে অসংখ্য তারকা এবং তারকাদের চারপাশে ঘুরতে থাকা অসংখ্য ছোটখাট গ্রহ ও উল্কাপিন্ড। যদি কখনো কোনো সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল আমাদের সৌরজগতের কাছাকাছি এসে পরে তবে ওই ব্লাক হোলের চারিদিকে ঘুরতে থাকা তারকা এবং গ্রহগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষে সৌরজগতের বেশিরিভাগ গ্রহ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এসকল ধংস্বাবশেষ গ্রাস করে নিবে ব্লাকহোল। তবে বিজ্ঞানীদের জানা এমন ব্লাকহোলের সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য এবং এসকল ব্লাকহোলের আমাদের সৌরজগতে প্রবেশ করার সুযোগ নেই বললেই চলে।
 
পরবর্তীতে আসা যাক স্টেলার ব্ল্যাক হোলে। এসকল ব্ল্যাক হোলের সাইজ সূর্যের প্রায় ৪০ গুণের সমান বা এর থেকে বেশি হয়ে থাকে। তবে এদের মধ্যাকর্ষণ ক্ষমতাও যেকোনো তারকার থেকে বেশি হয়ে থাকে। এদের সংখ্যা সুপারম্যাসিভ থেকে সামান্য বেশি। যদি কোনো স্টেলার ব্ল্যাক হোল সৌরজগতে প্রবেশ করে তবে প্রথমেই এই সকল ব্ল্যাক হোলের চারিদিকে পরিভ্রমন করা উল্কাপিন্ড এবং গ্রহগুলোর সঙ্গে আমাদের গ্রহগুলোর সংঘর্ষ হবে। এই সংঘর্ষে এবং উল্কাপাতে প্রথমেই পৃথিবীতে প্রাণের অস্তত্ব বিনাশ হবে। পরবর্তীতে যখন ব্ল্যাক হোল আরো কাছে আসতে শুরু করবে তখন পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহগুলোর বায়ুমন্ডল ব্ল্যাক হোল শুষে নিবে। ফলে সৌরজগতের গ্রহগুলো একেকটি অগ্নিকুন্ডে পরিণত হবে। যদি এরপরও গ্রহগুলোর অস্তিত্ব থাকে তবে ব্ল্যাক হোল সূর্যে সব গ্যাস শোষন করার পরে আরো শক্তিশালী হবে এবং মূহর্তের মধ্যে আমাদের গ্রহগুলোকে ধ্বংস করে উল্কাপিন্ডে পরিণত করবে। তবে এজন্য ব্ল্যাক হোল নিয়ে চিন্তিত হবার প্রয়োজন নেই। কারণ এই মহাবিশ্বে ব্ল্যাক হোলের সংখ্যা অনেক কম এবং এসকল ব্ল্যাক হোলগুলোও থেকে কয়েকশ’ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তাই উপরোক্ত সকল ঘটনা ঘটাব্ল্যাক সম্ভাবনা অত্যন্ত নগন্য।