• সোমবার ১৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩০ ১৪৩১

  • || ০৪ জ্বিলকদ ১৪৪৫

তথ্য প্রযুক্তির অনন্য অবদান বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ( পর্ব – ৩)

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮  

একটা সময় ছিল যখন মহাকাশে স্যাটেলাইট প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শুধু ধনী ও প্রযুক্তিতে ক্ষমতাধর দেশেরই পদচারণা ছিল। সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। বিশ্বের তথ্য -প্রযুক্তি অঙ্গনে নতুন এক পরাশক্তি বাংলাদেশ। জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করে বিশ্বের সব দেশকে তাকে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই দেশ।

২০১৮ সালের সব থেকে আলোচিত ঘটনার ভিতর অন্যতম হলো ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনকারী দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই প্রকল্পটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়। মহাকাশে অঙ্কিত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। এর মাধ্যমে দেশের মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো।

২০১৮ সালের মে মাসের ১২ তারিখ মহাকাশের পথে যাত্রা শুরু দেশের বহুল কাঙ্খিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস থেকে ফ্যালকন – ৯ রকেটের মাধ্যমে এর সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়।  বাংলাদেশের  নিজস্ব মালিকানায় ও পরিচালনায় পরিচালিত হচ্ছে এই স্যাটেলাইট।  ফ্রান্স ও ইতালির যৌথ সহায়তায় এই স্যাটেলাইটটি ডিজাইন করা হয়। এই স্যাটেলাইটটি তৈরী করতে মোট ব্যয় হয় দুই হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। যার ক্রয়মূল্য আগামী ৬ বছরেই উঠে আসবে।

এই স্যাটেলাইটটিতে রয়েছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এর ভেতর ২০টি ট্রান্সপন্ডার দেশের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকি ২০টি দিয়ে প্রতিবেশী দেশ গুলোকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা এই স্যাটেলাইট থেকে অর্জন করা সম্ভব।   সার্কভুক্ত দেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কিমেনিস্তান, কাজাখস্তানের একটি অংশ এ স্যাটেলাইটের সেবার আওতায় আসবে। এই স্যাটেলাইটের ফলে দেশের জাতীয় ব্যয় অনেকটা হ্রাস পাবে। বিদেশী স্যাটেলাইট থেকে সেবা নিয়ে আগে দেশের ৪০ লাখ ডলার খরচ হতো। এখন এই খরচ দেশের উন্নয়নের কাজে লাগানো যাবে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। স্যাটেলাইটভিত্তিক টেলিভিশন সেবা ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এই স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো যাবে। অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচলের ক্ষেত্রেও ত্বরান্বিত হবে স্যাটেলাইটের ভূমিকা। শুধু তাই নয় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন, ই-গবেষণা, ই-লার্নিংসহ তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে আরো বেশি উন্নয়ন ঘটবে। এই স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেশের রাঙামাটি এবং গাজীপুরে স্থাপন করা হয়েছে দুইটি গ্রাউন্ড স্টেশন। এই গ্রাউন্ড স্টেশন নিয়ন্ত্রিত হবে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাত ধরে।

দক্ষ দিক-নির্দেশকের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হওয়ায় উন্নত হচ্ছে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্র। দেশ এগিয়ে চলছে ‘রূপকল্প ২১’ ও ‘রূপকল্প ৪১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং সেই দিন আর বেশি দেরী নয় যেদিন উন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হবে বাংলাদেশের নাম।