• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

বিজ্ঞান শেখা: টিপসইয়ে মানুষ চেনার উপায়

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০১৯  

স্বাক্ষর জানলেই কি টিপসইয়ের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়? না। যায় না। দুনিয়ার সবচেয়ে উন্নত ও অগ্রসর দেশ থেকে শুরু করে সব দেশেই টিপসইয়ের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে এবং উন্নত হচ্ছে।

কারণ প্রত্যেক মানুষের আঙুলের সূক্ষ রেখাগুলোর প্যাটার্ন একেবারে অনন্য, অন্য কারো সঙ্গে তা হুবহু মিলবে না। এখানে ঢেউ, বৃত্ত বা ত্রিভুজ আকৃতির যেসব প্যাটার্ন যেভাবে বিন্যাস্ত থাকে তা দেখে ওই আঙুলের অধিকারীকে নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা যায়। তাই অপরাধী অনুসন্ধানের কাজে আজও এ প্রযুক্তিটি সর্বত্র ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দুটো টিপসইয়ের পার্থক্য সহজে বের করতে হলে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। কিন্তু এতো কিছু তো সবার জন্য সহজ লভ্য নয়। তাহলে সাধারণ মানুষ একজনের টিপসই থেকে অন্যজনের টিপসইয়ের পার্থক্য সহজে বের করবে কিভাবে?

সমস্যা নেই। নিচের পরীক্ষাটির মাধ্যমে কোনটি কার টিপসই নিজে নিজেই পরীক্ষা করতে পারবে।

কিভাবে?  নরম একটি ‘ফোর বি’ মানের কাঠপেন্সিল নাও। পেন্সিলের মাথাটি কেটে কালো গ্রাফাইট বা শিষ বের করে কাগজের উপর ঘষতে থাকো। এবার হাতের আঙুলের উপর কাগজ থেকে খুব ভালো করে এ গ্রাফাইট মাখিয়ে নাও। বাম হাত দিয়ে এক টুকরো সেলোফেন টেইপ বা স্বচ্ছ স্কচ টেইপ কেটে আঠা লাগানো অংশটি উপরের দিকে মুখ করে টেবিলের উপর রাখো।

স্কচ টেইপের যে অংশে আঠা লাগানো রয়েছে সেই পিঠে গ্রাফাইট লাগানো আঙুলটির ছাপ দাও এবং এক টুকরো স্বচ্ছ কাচের উপর সেই টেইপ লাগিয়ে দাও। টেইপ লাগানো কাঁচের উপর টর্চের আলো সাদা দেয়ালের দিকে তাক করে ফেলো। দেখা যাবে, দেয়ালে আঙুলের অসংখ্য হিজিবিজি, ঢেউ খেলানো, বৃত্ত, ত্রিভুজ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের আঁকাবাঁকা দাগ স্পষ্ট ভাবে ভেসে উঠেছে।

ঠিক একইভাবে তোমার অন্য কোনো বন্ধুর আঙুলের ছাপ নিয়ে পাশাপাশি টর্চের আলো ফোকাসের মাধ্যমে তার প্রতিচ্ছায়া দেয়ালের উপর প্রতিফলিত করলে হাতের আঙুলের রেখার বিভিন্নতা তোমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

এ কাজটি আরেকটি পরীক্ষার মাধ্যমেও করা যায়। স্বচ্ছ পানিতে ভরা একটি গ্লাস টেবিলে খাড়া করে রাখো। গ্লাসের পানি যখন নড়াচড়া বন্ধ করে স্থির হয়ে যাবে তখন টেবিল থেকে গ্লাসটি না উঠিয়ে ডান হাতে শক্ত করে গ্লাসটি চেপে ধরো। এবার মাথা ঝুঁকিয়ে গ্লাসের মধ্যে থাকা পানির ভেতর দিয়ে তোমার হাতের তালুর দিকে তাকাও। তোমার হাতের আকাঁবাঁকা রেখাগুলো বড় বড় এবং স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।

এটি কিভাবে সম্ভব হচ্ছে?

তোমরা জানো, হাতের তালুতে থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য উত্তোলিত রেখা। সেলোফেনের স্কচ টেইপের আঠা হাতের তালুর মাঝখানে থাকা বিস্তীর্ণ এলাকা অতি সহজেই সূক্ষভাবে তুলে নিতে সক্ষম। এ রেখার উপর আলো ফেলে বিবর্ধিত করে রেখাগুলোর প্রতিচ্ছায়া দেখে দেখে দুজনের হাতের বা আঙুলের ছাপের বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।

দ্বিতীয় পদ্ধতিতে স্বচ্ছ পানি ভরা গ্লাসের সৃষ্ট আর্দ্রতায় গ্লাসের দেয়ালে হাতের ছাপগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। পানির মধ্য দিয়ে সেই রেখাগুলো বিবর্ধিত আকারে তোমাদের চোখে এসে ধরা দেয় বলেই টিপসইয়ের পার্থক্য সনাক্ত করা যায়।

লেখক পরিচিতি: শিশু-কিশোরদের মাঝে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে নিবেদিত শেখ আনোয়ার। শিশুদের জন্য বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করছেন প্রায় দেড় যুগ। অগ্রণী ব্যাংক-বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক শেখ আনোয়ারের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected] । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!