• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

গোলাপের বিকল্প ফুল আবিষ্কার শেকৃবি শিক্ষকের

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০১৯  

প্রথম দেখায় অনেকেই গোলাপ ভেবে ভুল করবেন। দেখতে অনেকটা গোলাপের মতোই। কিন্তু গোলাপ নয়। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Eustoma grandiflorum।

খাড়া পাতা ও লম্বা ডগাসহ বাহারি রঙের এই ফুলের বাংলাদেশি নাম ‘নন্দিনী’। একটি গাছ থেকে ৭০ থেকে ৯০টি পর্যন্ত ফুল পাওয়া যাবে। ফুলদানিতে অন্য যেকোনো ফুলের তুলনায় বেশিদিন সতেজ থাকবে। তাই এর চাহিদা এবং দামও অনেক বেশি।

গোলাপের বিকল্প এই ফুল আবিষ্কার করেছেন ড. মো. জামাল উদ্দিন। তিনি রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক।

‘নন্দিনী’কে নিয়ে ২২ বছর গবেষণা করেছেন ড. মো. জামাল উদ্দিন। জাপানে পিএইচডি গবেষণাকালে সর্বপ্রথম জাপানের স্থানীয় জাত ‘তরুকোগিকিয়’ (নন্দিনীর জাপানিজ নাম) ফুল নিয়ে তিনি গবেষণা শুরু করেন।

 

 

বাংলাদেশে এই ফুলের চাষ ও প্রাপ্তি সহজলভ্য করাই ছিল তার গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন উপায়ে চারা উৎপাদনের চেষ্টা করেন। অবশেষে ২০০৭ সালে সফল হোন। ২০১৪ সালে এটিকে নন্দিনী নামে নিবন্ধন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট জাতীয় বীজ বোর্ড (এনএসবি) কর্তৃক অনিয়ন্ত্রিত ফসলের জাত নিবন্ধনের আওতায় বঙ্গবন্ধু-১ ও বঙ্গবন্ধু-২ নামে নন্দিনীর দুটি নতুন জাত প্রত্যয়ন করা হয়। এ জাত দুটি সারা দেশেই উৎপাদনক্ষম। বঙ্গবন্ধু-১ জাতটি গাঢ় নীল রঙের আর বঙ্গবন্ধু-২ জাতটি হালকা গোলাপি রঙের।

প্রফেসর ড. জামাল উদ্দীন প্রথমে বিভিন্ন ধরনের ১৫ টি জাত নিয়ে কাজ শুরু করলেও পরে বাণিজ্যিক চাষের জন্য দুটি জাতকেই নির্বাচন করেন।

বাজারে গোলাপের চাহিদা প্রচুর। গোলাপ বর্ষাকালে ভালো হয় না। নন্দিনীকে গোলাপের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। কম পরিচর্যায় সারাবছর সবধরনের মাটিতে চাষ করা যাবে নন্দিনী। এমনকি আগাছাও তেমন ক্ষতি করতে পারে না। নন্দিনী অনেক সময় ধরে সতেজ থাকে, পাপড়ি সহজে শুকিয়ে ভেঙে পড়ে না।

ফুলদানিতে সাধারণ পানিতে ১৫ দিন ও সুক্রোজ দ্রবণে ২৫ দিন পর্যন্ত ফুলটি সতেজ থাকে। সাধারণত বাজারে নন্দিনী ফুলের দাম গোলাপের তুলনায় ৮-১০ গুণ বেশি।

 

 

২০১৬ সালে যশোরের গদখালীতে একটি কর্মশালার মাধ্যমে ২০ জন ফুলচাষিকে নন্দিনী ফুলের চারা সরবারহ করেন ড. জামাল উদ্দীন।

চাষিরা উৎপাদনে বেশ সফলতাও পেয়েছিলেন। তবে পর্যাপ্ত চারা যোগানের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় নন্দিনী ফুলের চাষ।

এ বিষয়ে ড. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘নন্দিনী’র বীজ অত্যন্ত ছোট। নন্দিনী বিদেশি ফুল হওয়ায় এর বীজ থেকে চারা উৎপাদন প্রক্রিয়া একটু জটিল। বাংলাদেশে একমাত্র আমি এবং আমার কয়েকজন ছাত্র ছাড়া এ প্রক্রিয়া অন্য কারো জানা নেই।

তিনি বলেন, তাছাড়া এর জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা ও লোকবলের অভাব থাকায় চাষিদের চারা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেলে সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে নন্দিনীকে মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চাই। স্বপ্ন দেখি দেশীয় ফুল বাজারে একদিন নন্দিনীর চাহিদা থাকবে সবার শীর্ষে।

বঙ্গবন্ধুর নামে নতুন দুই জাত নামকরণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শোকের মাস আগস্টে বাঙালির ভালোলাগা ফুল আর জাতির পিতার নাম একই সুতোয় গেঁথে দিতে চেয়েছি। সে উপলব্ধি থেকেই এমন নামকরণ।