• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

সুস্থ রোগীর রক্তে যেভাবে প্রাণ ফিরে পাচ্ছেন করোনায় আক্রান্তরা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২০  

কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের মধ্যে যারা এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের রক্ত দিয়েই চলছে অন্যদের চিকিৎসা। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়! এই পদ্ধতি নতুন নয়, বেশ পুরনো। অতীতের অনেক মহামারিতেই এই উপায়ে চিকিৎসা করা হয়েছে।

বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা মনে করছেন, সুস্থ ব্যক্তিদের রক্তই এসময় রোগীদের আছে এমন এক উপাদান, যা করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই রক্ত ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় যে কৌশল অবলম্বনের কথা চিন্তা করছেন তাকে বলে ‘কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি।’

এই পদ্ধতিতে সাধারণত কোনো ভাইরাল সংক্রমণ থেকে সেরে উঠা মানুষের রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই রক্ত সঞ্চালিত করা হয় একই ধরনের ভাইরাল সংক্রমণের শিকার রোগীর দেহে। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুর মহামারি এবং ১৯৩০ এর দশকে হামের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়েছিল। একেবারে সাম্প্রতিক সময়ে ইবোলা, সার্স এবং ‌‘এইচ-ওয়ান-এন-ওয়ান’ এর মতো রোগের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহার করা হয়েছে।

কতটা কার্যকর এই চিকিৎসা?

চীনে করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হওয়ার পর সেখানে প্রথম এটি নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। পরবর্তীতে শেনঝেন পিপলস হাসপাতাল এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে ২৭ মার্চ। এতে জানানো হয়, ৩৬ হতে ৭৩ বছর বয়সী পাঁচজন রোগীর ওপর এই পদ্ধতি প্রয়োগের কথা। কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি নিয়ে যতিও প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা আশার আলো দেখছেন। তবে এখনো তারা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছেন না এটি পুরোপুরি কাজ করবে কিনা।

এই পদ্ধতির সাফল্য ব্যাপক ক্লিনিকাল ট্রায়ালে এখনো সম্পূর্ণ প্রমানিত নয়। তারপরও এটির মধ্যে কিছু সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রে কনভালেসেন্ট প্লাজমা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণায় যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের একজন ড‍. লুইস কাটজ। তিনি বলছেন, কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় সেরকম কিছু যেহেতু এখনো পর্যন্ত নেই, তাই তারা কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপিকে একটি সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে দেখছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই পদ্ধতির কার্যকারিতা সম্পর্কে ঐতিহাসিক নজির আমাদের কাছে আছে। আর এরকম তথ্য-উপাত্তও আমাদের কাছে আছে যা দেখে আমরা মনে করছি এই পদ্ধতি নিরাপদ। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন গত সপ্তাহেই কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। কেবল গুরুতর অসুস্থ কোভিড-১৯ রোগীদের জরুরি চিকিৎসায় ডাক্তাররা এই থেরাপি ব্যবহার করতে পারবেন বলে জানাচ্ছে লস এঞ্জেলস টাইমস। হিউস্টন মেথডিস্ট হাসপাতাল যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই থেরাপি ব্যবহার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে রক্ত সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে

কোভিড-১৯ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠা রোগীদের রক্ত সংগ্রহের জোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। নিউ ইয়র্ক ব্লাড সেন্টার গত সপ্তাহ থেকে এরকম রোগীদের রক্ত সংগ্রহ শুরু করেছে। আমেরিকান রেডক্রস সম্ভাব্য রক্তদাতাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি ওয়েবসাইট খুলেছে। 

রক্তদাতারা যখন রক্ত দিতে আসবেন তাদের কয়েকটি পরীক্ষা করা হবে। প্রথমত তাদের কোভিড-১৯ হয়েছিল কিনা। দ্বিতীয় পরীক্ষায় দেখা হবে, তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন কিনা, অর্থাৎ এখন তাদের করোনাভাইরাস আছে কিনা। আর তাদের প্রথম কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেয়ার পর ২৮ দিন পার হয়েছে কিনা।

সূত্র: বিবিসি