• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চিনি দিয়ে ‘হাতি-ঘোড়া’ তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৯  

গ্রাম-বাংলার প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। গ্রাম-বাংলার এই মেলাকে সামনে রেখে চিনি আখের গুড় দিয়ে তৈরি কদমা, বাতাশা, হাতি, ঘোড়া, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন রকমের খেলনার সাজ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ভাটারার বণিক পরিবার।

ওই এলাকায় পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের হাতের তৈরি এসব সাজ জেলার চাহিদা পূরণ করে চলে যাবে ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ গাজীপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন বৈশাখ মেলায়।

গত মঙ্গলবার সকালে সাটুরিয়া উপজেলার ভাটারা এলাকায় গিয়ে কথা হয় এই পেশার সাথে জড়িত শ্রী গোবিন্দ বণিকের সাথে। তিনি বলেন, এই পেশায় তিনি ৩০ বছর ধরে আছেন। এর আগে পেশায় জড়িত ছিল গোবিন্দ বণিকের বাপ দাদা।

গোবিন্দ তাদের পূর্বপরুষের এই শিল্পকে ধরে রাখতে নিজ বাড়িতে চিনি আখের গুড় দিয়ে তৈরি করছেন- কদমা, বাতাশা, হাতি, ঘোড়া, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন রকমের খেলনার সাজ।

তিনি বলেন, এই পেশায় বছরের বারো মাস কাজ না থাকলেও শুধুমাত্র বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিজ বাড়িতে কাজ করছেন ভগবত বণিক, বাঁধন বণিক, প্রদীপ বণিকসহ হাতে গোনা দশ-পনের জন।

একই গ্রামের দুলাল চন্দ্র বণিক বলেন, কদমা, বাতাশাসহ বিভিন্ন ধরনের সাজ বানাতে প্রথমে গরম চুলায় হাড়িতে পানির সাথে সম-পরিমাণ চিনি অথবা আখের গুড় মিশিয়ে জ্বাল করতে হয়। এরপর চিনি, গুড় জ্বালের মাধ্যমে সাজের উপযোগী হলে কাঠের ডাইচের ভেতর ঢালতে হয়। কিছুক্ষণ পর কাঠের ডাইচের ভেতর সাজ শুকিয়ে তৈরি হয় হাতি, ঘোড়া, আম, কাঠালসহ বিভিন্ন রকমের খেলনা।

সরেজমিনে গিয়ে বণিক পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় মানিকগঞ্জে এই পেশায় শতশত পরিবার জড়িত থাকলেও ভাটারা এলাকায় বর্তমানে মাত্র আট থেকে দশটি পরিবার আছে। নানান কারণে অন্য পরিবারগুলো ভিন্ন পেশায় চলে গেছে।

তারা বলেন, বছরের নয় মাস কাজের কোন চাপ থাকে না। সামনে পহেলা বৈশাখ, জন্য এখন তাদের দম ফেলানোর সময় নেই। এই ব্যস্ত সময়ে পুরুষদের সাজ বানাতে সাহায্যে করছেন বাড়ির নারীরাও। কিছুদিনের মধ্যে এখানকার তৈরি চিনি, গুড়ের সাজ জেলার চাহিদা পূরণ করে চলে যাবে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন বৈশাখ মেলায়।

বিষয়ে সাটুরিয়া কালুশাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধ্যক্ষ আমিনুর রহমান খাঁন মজলিস বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়া, জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার চিরচেনা এই শিল্প। চিনি, গুড় দিয়ে তৈরি কদমা, বাতাশা, হাতি, ঘোড়া, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন রকমের সাজ এখনো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য রক্ষা করে। এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ।

বালিয়াটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রুহুল আমিন বলেন, শিল্পটিকে বাঁচাতে হলে সরকারের সহযোগিতা দরকার। মূলধন সংকটের কারণে তারা শিল্পটিকে রক্ষা করতে পারছে না। সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ দিলে রক্ষা পাবে শিল্প।