অপহরণের পর সম্পত্তি লিখে নেবার অভিযোগ

সাভারের আশুলিয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর তার দু’পা ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। টানা দুই দিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তার সম্পত্তি লিখে নেবার অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী। 

আশংকা জনক অবস্থায় উদ্ধারের পর মঙ্গলবার (৭ মে) রাতে তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম আশরাফ উদ্দিন (৪৫)। তিনি আশুলিয়ার গৌরীপুর এলাকার মৃত মাহবুবুর রহমানের ছেলে। পেশায় রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী। 

মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধারের পর আশরাফ উদ্দিন হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, দুদিন আগে নিউ স্টার ট্রেডিং কর্পোরেশন নামে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত হামলার শিকার হন তিনি। ৮ থেকে ১০ জনের একদল দুর্বৃত্ত তাকে প্রথমে মারধর করে তুলে নিয়ে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। দুর্বৃত্তদের মধ্যে তিনি স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা মিয়া, ফরহাদ, রাব্বী, নাহিদ, কোহিনুর, রিফাত, হিমেলকে তিনি চিনতে পেরেছেন বলেও জানান।

আশরাফ উদ্দিনের অভিযোগ, সেখানে টানা দুইদিন তাকে আটকে রেখে দফায় দফায় নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে সাউথ ইষ্ট ব্যাংকের আশুলিয়া শাখায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কমিশনিং করিয়ে জোর করে সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিলে স্বাক্ষর নেয়া হয়। 

স্বাক্ষর শেষে অজ্ঞাত স্থান থেকে সরিয়ে তার দুই পা ভেঙে নির্জন স্থানে তাকে ফেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসূফ আলী জানান, নির্মম নির্যাতনে ওই ব্যবসায়ীর সারা দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দুটি পা ভেঙ্গে হাড় গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে তার দু’পায়েই অস্ত্রোপচার করাতে হবে।

ব্যথায় কাতর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আশরাফ উদ্দিন জানান, তিনি ব্যবসা সম্প্রসারণে সাউথইস্ট ব্যাংকের আশুলিয়া থানা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণ নিয়েছিলেন। আশরাফের অভিযোগ, ব্যাংকের কাছে বন্ধক দেয়া ওই সম্পত্তি তুলনামূলক কম দামে কিনতে দীর্ঘদিন ধরে তার এক প্রতিবেশী চেষ্টা করছিলেন। তিনিই সন্ত্রাসী ভাড়া করিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে সন্দেহের কথা জানান তিনি।

এ ব্যাপারে সাউথইস্ট ব্যাংকের আশুলিয়া শাখার ব্যবস্থাপক সাফিউল হক জানান, আশরাফ উদ্দিন আমাদের ব্যাংকের একজন গ্রাহক। তিনি যে ঋণ নিয়েছিলেন তা সুদাসলে বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ৭ লাখ টাকার মতো।

 এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হল সুদ কমিয়ে পাওনা নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ‘তিনি আমাদের ব্যাংকে গত ৬ মে এসেছিলেন। তখন তাকে বেশ আহত অবস্থায় দেখেছি। পার্টির উপস্থিতিতে এক ক্রেতা সমুদয় টাকা বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা সেই সম্পত্তি অবমুক্তি করে দেবার পর কি হয়েছে এটা তারা ভালো বলতে পারবেন। কেউ তাকে আহত করে এনেছেন কি’না সেটা আমাদের জানা নেই। বা বাধ্য করেছেন কি’না তাও বলতে পারবো না। 

আমাদের ঋণ শোধ হয়েছে। আমরা সম্পত্তি বুঝিয়ে দিয়েছি- এতটুকুই।’ এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তরের এসপি আবদুল্লাহিল কাফি জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশুলিয়া থানায় ভুক্তভোগীর পক্ষে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তবে রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।