• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ঢাকা নবাব এস্টেটের সিংহভাগ জমি বেদখল

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২২ জুন ২০১৯  

সাভার উপজেলার উপজেলার ১৫টি মৌজার কোর্ট অব ওয়ার্ডস বা ঢাকা নবাব এস্টেটের মালিকানাধীন প্রায় ১৩শ ৪০ একর জমির সিংহভাগই বেদখল হয়ে গেছে একাধিক শক্তিশালী চক্র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নবাব এস্টেটের জমির জাল কাগজপত্র তৈরি করে তা দখল করেছে এবং অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে অভিযোগ রয়েছে, যে সব জমির সিএস, আরএস, এসএ ও হালনাগাদ বিএস রেকর্ড অর্থাৎ ৪টি  রেকর্ডভুক্ত কোর্ট অব ওয়ার্ডসের সম্পত্তি, সেগুলোও ভূমি দখলদাররা গ্রাস করে ফেলেছে

 

ইতিপূর্বে নবাব এস্টেটের জমি বেদখল হওয়া শুরু হলে ১৯৯৮ সালের ১৮ আগস্ট কোর্ট অব ওয়ার্ডসের সদস্য আব্দুল মালেক সাভার উপজেলার মৌজাসমূহ পরিদর্শন করে ১৫টি মৌজার ১ হাজার ৩৩৯ দশমিক ০৬ একর জমি চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন সাভার উপজেলার ১৫টি মৌজায় কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমির পরিমাণ হচ্ছে :কলমা মৌজায় ৩১ নং সিএস খতিয়ানের রেকর্ডকৃত ২০৭.২৫ একর, ভৌমকা মৌজায় ১০ নং খতিয়ানে ৩১.৩৬ একর, ১২ খতিয়ানে ৭.১৩ একর, ১৩ খতিয়ানে ১২৭.৪৭ একর, ১৫ খতিয়ানে ৪৭.৮৫ একর, দাসপাড়া মৌজায় ২নং খতিয়ানে ১৬৯.৩১ একর, কুমারখোদা মৌজায় ২ নং খতিয়ানে ১৭৩.৪০ একর, বড় বলিমেহের মৌজায় ৬নং খতিয়ানের ২৪৭.০৪ একর, আউকপাড়া মৌজায় ৪ নং খতিয়ানে ৫৬.৭১ একর, ১৬ খতিয়ানে ১ হাজার ১৯৮ দশমিক ৭২ একর, আইচানোয়াদ্দা মৌজায় ১৩ নং খতিয়ানে ১৫.৫৮ একর, কোণ্ডা মৌজার ৫৭৬ নং খতিয়ানে ৩.১৮ একর, খাগান মৌজায় ১ নং খতিয়ানে ২০.২৫ একর, চৌবাড়ীয়া মৌজায় ১ নং খতিয়ানে ৮৩.০৩ একর, সাদুল্লাপুর মৌজায় ১৩ নং খতিয়ানে ০.৫২ একর, ১০/২ খতিয়ানের ০.৯৩ একর, মৌস্তাপাড়া মৌজায় ৫.৩১, একর, বাসুটিয়া মৌজায় ২/৩ খতিয়ানে ১৫.৬৯ একর এবং ছোট ওমালিয়া মৌজায় ২নং খতিয়ানে ৭.১৬ একর সম্পত্তি

 

১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান এক পত্রের (স্মারক নং-ডিএন-২৫-২/৯৫-৩১৫) মাধ্যমে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমি ক্রয়-বিক্রয় হস্তান্তর নামজারি ও জমিভাগ না করার জন্য সাভার ভূমি অফিসকে নির্দেশ প্রদান করেন উল্লেখ্য, নামজারি প্রথা বিলোপের পর ঢাকার নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ ও তার আত্মীয় স্বজনদের নামে যে সব জমি ছিল সে সব সম্পত্তি ১৮৭৯ সালে এক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের মালিকানায় আনা হয় এ সব জমি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ভূমি সংস্কার বোর্ডকে বোর্ডের নিয়োজিত কতিপয় কোর্ট অব ওয়ার্ডসের সদস্যদের দায়িত্বহীনতা ও অনিয়মের কারণে এ সব জমি ধীরে ধীরে বেদখল হয়ে গেছে বলে একাধিক সূত্রের কাছ থেকে জানা গেছে

 

সাভার উপজেলার বিভিন্ন মৌজার সম্পত্তি কাগজে কলমে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের মালিকানায় থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তার সিংহভাগই চলে গেছে ব্যক্তি মালিকানায় আর এ দখল প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সরকারের শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি লুটপাটে ভূমি দখলদারদের সহায়তা করছে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সাভার ভূমি অফিসের একটি শক্তিশালী জালিয়াত চক্র এছাড়া দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্প অঞ্চল হওয়ায় সাভারের জমির মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখানে সৃষ্টি হয় একাধিক ভূমি দখলদার চক্র এ সব চক্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে এ সব জমি আত্মসাত্ করেছে এবং এখনো তা অব্যাহত রেখেছে অনেক ক্ষেত্রে ভূমি সংস্কার বোর্ড থেকে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লিজ নিয়ে তা অন্যত্র বিক্রিও করছে একটি চক্র

 

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মোস্তাপাড়া মৌজার বীর মুক্তিযোদ্ধা এনাজুর রহমান চৌধুরী ও মো. আলী আকবর খান নামে দুই ব্যক্তি ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর ভূমি দখলের অভিযোগ এনে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি আবেদন করেছেন আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, মোস্তাপাড়া মৌজায় তারাসহ আরো ১৮ জন ১.১৫ শতাংশ চালা জমি ২০১৫ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে আবাসিক লিজ নিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন কিন্তু বর্তমানে জনৈক আফসার মোল্লা, আবুল কালাম ওরফে কালু মোল্লা, গোলাম সারোয়ার, জাহাঙ্গীর আলম, বোরহান উদ্দিন গং সরকারি এ সম্পত্তিকে নিজেদের পৈতৃক দাবি করে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং বেশ কিছু জমি দখল করে জাল দলিল সৃষ্টি করে তা অন্যত্র বিক্রিও করে ফেলেছে এ ঘটনাটি ভূমি সংস্কার বোর্ড জানতে পেরে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বোর্ডের ম্যানেজার (উপ-সচিব) মোহাম্মদ হোসাইন স্বাক্ষরিত একটি পত্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাভার থানা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করেন

 

মোস্তাপাড়া এলাকার আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালু মোল্লা জমির কাগজপত্র জাল করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ সম্পত্তি তার পৈতৃক অপরদিকে সারোয়ার হোসেন বলেন, ১৯৮৬ সালে তিনি জনৈক আব্দুল রাজ্জাকের কাছ থেকে ৩০ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন বিরুলিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, ভূমি সংস্কার বোর্ড থেকে এ সব সম্পত্তি অনেক সংগঠনের নামে লিজ আনা হয়েছে লিজকৃত সম্পত্তি অনেকেই আবার প্লট আকারে অন্যত্র বিক্রি করছে

 

এ প্রসঙ্গে ভূমি সংস্কার বোর্ডের কোর্ট অব ওয়ার্ডসের নবাব এস্টেটের ম্যানেজার (উপ-সচিব) মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, একাধিক জালিয়াত চক্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তি দখল করেছে আমরা লিখিতভাবে বিষয়টি স্থানীয় থানাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি