• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সওজের হাজার কোটি টাকার জমি বেদখল

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০১৯  

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) গুরুত্বপূর্ণ জায়গার অধিকাংশই অবৈধ দখলে চলে গেছে। সড়ক ও জনপথের বেহাত হয়ে যাওয়া এ সব সম্পত্তির মূল্য হাজার কোটি টাকা। সওজের কতিপয় অসাধু ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে প্রভাবশালী মহল মহাসড়কের দুই পাশে পতিত জায়গায় রাতারাতি গড়ে তুলেছে পাকা দালান, অবৈধ হাট-বাজার, দোকানপাট, হোটেল, মাছ ও তরকারির বাজার, স-মিল, ইট-বালু-মাটির জমজমাট বাণিজ্য কেন্দ্রসহ নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা।

এ চিত্র সাভারের আমিনবাজার থেকে আরিচা এবং নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক পর্যন্ত। এ সব বাজার থেকে প্রতিদিন আদায় হচ্ছে লাখ লাখ টাকার চাঁদা। অভিযোগ রয়েছে, এ টাকার ভাগ যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর, অসত্ পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় মাস্তান ও কতিপয় টাউটদের পকেটে।

একটি সূত্র জানায়, সওজের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারী ও অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ ও মাসোহারার বিনিময়ে সরকারি সম্পত্তি দখলে সহায়তা করছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার, বলিয়ারপুর, গেণ্ডা, ব্যাংক টাউন, ফুলবাড়িয়া, উলাইল, থানাস্ট্যান্ড, বাজার বাসস্ট্যান্ড, নয়ারহাটে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে অনেক দোকানপাট, কাঁচা বাজার, বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।

নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের পল্লীবিদ্যুত্, পশালবাড়ী, ডিইপিজেড, শ্রীপুর, বলিভদ্র, বাইপাইল, জিরানী, কবিরপুরে মহাসড়কে সওজের জায়গা দখল করে বহুতল ভবনসহ ক্লিনিক, হাট-বাজার, দোকানপাটসহ বহু অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হলেও কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান হলেও অবস্থা আবার পূর্বের রূপ ধারণ করে।

মহাসড়কের দুই পাশের জমি সওজের হলেও বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনের নামে তা নিয়ন্ত্রণে রেখে দোকান পজিশন বাবদ অগ্রিম অর্থ আদায়সহ প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ হাজার হাজার টাকা গ্রহণ করছে চাঁদাবাজরা। বিভিন্ন সময়ে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কয়েক ঘণ্টা পরই অবস্থা আবার যেই-কে-সেই। দখলকৃত এ সব অনেক দোকানপাটে মাদক ব্যবসাও চলে বলে অভিযোগ রয়েছে। আরো অভিযোগ রয়েছে, উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় অবস্থা আবার আগের পর্যায়ে ফিরে যায়। স্থানীয়রা জানান, নিয়ম রক্ষার জন্য প্রশাসন মাঝে মাঝে এসে লোক দেখানো উচ্ছেদ চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে তা আবার চালু হয়। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না।

 

সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে সাভার পৌর এলাকার উলাইল বাসস্ট্যান্ড, গেণ্ডা বাসস্ট্যান্ডে গড়ে উঠেছে বিশাল কাঁচা বাজার। চাঁদাবাজরা আবার কাঁচা বাজারের আড়ালে টিনের ঘর তুলে স্থায়ী দোকান তৈরি করে এককালীন জামানতও আদায় করেছে। উলাইল বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে অর্ধশত দোকান। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর কয়েকজন তরুণ এসে দোকান প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে মন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গায় গড়ে ওঠা বাজার উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সাভার গেণ্ডা বাসস্ট্যান্ডে সওজের প্রায় ১ বিঘা জায়গা অবৈধভাবে দখল করে গড়ে উঠেছে বিশাল কাঁচা বাজার। এ বাজারে কমপক্ষে দেড় শতাধিক দোকান বসেছে। এর মধ্যে অর্ধশত দোকান থেকে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হয়েছে। আর প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন এ বাজারে কাঁচামাল ওঠানো নামানোর ফলে গেণ্ডা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানজট ও পথচারীদের চলাচলে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান খান বলেন, অবৈধ দখলদাররা দখল করতে করতে মহাসড়কের ওপর উঠে গেছে। সড়কের পাশে ভাসমান দোকানপাটের যন্ত্রণায় হেঁটে চলা মুশকিল হয়ে পড়েছে।

 

সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ দখলদার ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এদিকে পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লার রাস্তার ওপরে কাঁচা বাজার বসলেও অজ্ঞাত কারণে উচ্ছেদে পৌরসভার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রভাবশালীরা এ অবৈধ দখলদারিত্বের সঙ্গে জড়িত থাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না।