• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোর মুখ দেখছে সোলার চার্জিং স্টেশন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০১৯  

ছাদে বসানো সৌর প্ল্যান্টগাজীপুরের পুবাইলের তালটিয়া এলাকায় ইজবাইক, অটোরিকশাসহ সহ ধরনের যানবাহনের ব্যাটারি খুব সহজেই চার্জ হচ্ছে ব্যাটারি চার্জিং সোলার স্টেশনে। সরকার তালটিয়া এলাকায় এই সোলার চার্জিং স্টেশনটি স্থাপন করে ২০১৬ সালে। বিদ্যুতের ব্যবহার রোধ করে সৌর শক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে চার্জিং স্টেশনটি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে এখন প্রতিদিন চার্জ হচ্ছে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের ব্যাচারি। অল্প খরচে চার্জের সুযোগ পাচ্ছেন ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন যানবাহনের মালিকরা। এতে বিদ্যুতের ওপর যেমন চাপ কমছে তেমনি সোলার চার্জিং স্টেশন স্থাপনের কয়েক বছরেই আলোর মুখ দেখছে সরকারি এই উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে খুব দ্রুত ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- এর তথ্যমতে, ২০১৬ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কের পুবাইল তালটিয়া এলাকার জামান ফিলিং স্টেশনে সরকারি অর্থায়নে ২১ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি চার্জিং সোলার স্টেশনটি প্রায় ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় জামান ফিলিং স্টেশনের একটি ছাদে প্রায় হাজার ৫০০ বর্গফুট জায়গায় এটি স্থাপন করা হয়। ২২০ বর্গফুট আয়তনের একটি কক্ষ কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

এই সোলার চার্জিং স্টেশনটি পরিচালনার জন্য জামান ফিলিং স্টেশনের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের একটি চুক্তি হয়। আয়ের ৫০ ভাগ জামান ফিলিং স্টেশন আর ৪০ ভাগ পেয়ে থাকে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শতকরা ১০ ভাগ টাকা স্টেশনটির পরিচালনায় ব্যয় হয়। গত কয়েক বছরে এই স্টেশনে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি অটোরিকশা ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রতিটি অটোরিকশা, ইজিবাইক চার্জের খরচ নির্ধারণ করা রয়েছে ৭০ টাকা ও ভ্যানগাড়ি ৫০ টাকা।

প্রতিদিন এই স্টেশনে ২০টি ব্যাটারিচালিত গাড়ি (প্রতিটিতে পাঁচটি ব্যাটারি) চার্জ দেওয়া হয়। প্রতি মাসেই এ থেকে গড় অর্থের পরিমাণ ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সোলার চার্জিং স্টেশনে সারাদিন সৌরশক্তি ব্যাটারির মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে রাতে যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়।

জামান ফিলিং স্টেশনমীরের বাজার এলাকার আব্দুল আলিম সোলার চার্জিং স্টেশনে গত দুই বছর ধরে প্রতিদিন অটোরিকশায় চার্জ দিচ্ছেন। তিনি জানান, অন্য জায়গায় অটোরিকশা চার্জ দিতে একশ’ টাকা লাগে। এখানে আমরা ৭০ টাকায় এ সুযোগ পাচ্ছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুৎ া থাকলেও ব্যাটারি চার্জ দিতে কোনও অসুবিধা হয় না এখানে। সারারাত নিরবিচ্ছিন্নভাবে চার্জের সুযোগ পাওয়ায়  ব্যাটারিও ভালো থাকে বলে জানান তিনি।

জামান ফিলিং স্টেশনের সহকারী প্রকৌশলী সজিব হাসান বলেন, ‘২১ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্ল্যান্টে সৌর শক্তিকে কনভার্টারের মাধ্যমে ডিসিতে পরিণত করে ব্যাটারিতে সঞ্চয় করা হয়। পরে রাতের বেলায় সঞ্চিত শক্তিতে ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়। এখানে চার্জ দেওয়ার জন্য অনেকেই ভিড় করেন কিন্তু আমাদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। এসব স্টেশনের বিকাশ করা গেলে সাধারণ মানুষের চাহিদা আরও মেটানো সম্ভব।’

ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়া হচ্ছেএ বিষয়ে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল আবেদীন বলেন, ‘বর্তমানে সারাদেশেই বিপুল সংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকে চার্জ দিতে অনেকে বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সৌর শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া দরকার। এসব স্টেশন স্থাপনে ব্যয় প্রাথমিকভাবে বেশি হলেও এটি পরিচালনা করতে তেমন খরচ হয় না। রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক কম। সামগ্রিকভাবে এটি একটি লাভবান প্রকল্প। সারাদেশে এসব সোলার চার্জিং স্টেশন ছড়িয়ে দিতে পারলে বিদ্যুতের ওপর চাপ অনেক কমে যাবে।’

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী যুবরাজ চন্দ্র পাল জানান, দেশে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে বর্তমান সরকারের অন্যতম উদ্যোগ এটি। এই স্টেশনটি সাড়া জাগিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই এ ধরনের প্রকল্প সারাদেশে চালুর উদ্যোগ নেবে সরকার।