• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

গ্রিন ঢাকা বাসে নৈরাজ্য, উঠলেই ভাড়া ৬০ টাকা!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০১৯  

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে নতুন বাজার-রামপুরা হয়ে মতিঝিলের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এই দূরত্বে গ্রিন ঢাকা নামে এসি বাসটি সর্বোচ্চ ভাড়া নিচ্ছে ১০০ টাকা। তবে এই বাসে চাপলেই আপনাকে সর্বনিম্ন ভাড়া গুনতে হবে ৬০ টাকা। কত দূরত্বে নামছেন সেটা কোনো বিষয় না। কেউ যদি আধা বা এক কিলোমিটার পরেও নেমে যান, তাকেও ৬০ টাকাই গুনতে হয়। 

এ নৈরাজ্য শুধু গ্রিন ঢাকা বাসে নয়, মেগা সিটি ঢাকার প্রায় সব পরিবহনেই। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছে গ্রিন ঢাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসি বাসে বিআরটিএ ভাড়া নির্ধারণ করে না দেওয়ার সুযোগ নিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটছে এসি বাসগুলো। ফলে এসি বাসের ভাড়ার ক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অন্যতম জনবহুল নগরী ঢাকার জীবনযাত্রার ব্যয়ে (প্রবাসীদের বসবাসের ক্ষেত্রে) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সমান থাকলেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে রয়েছে তলানিতে। ঢাকায় আধুনিক ও সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় সিন্ডিকেটের কবলে এ নগরের পরিবহন ব্যবস্থা। যাত্রীসেবা উন্নত না হলেও ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হয়। তবুও বাধ্য হয়ে যাতায়াত করেন অসহায় নগরবাসী। এটি দীর্ঘমেয়াদি অব্যবস্থাপনার ফসল। 

তারা বলছেন, রাতারাতি নৈরাজ্যের অবসান হবে না। এজন্য প্রয়োজন পরিবহন ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়ন ঢেলে সাজানো। তাহলেই কেবল নৈরাজ্য থেকে মুক্তি পাবে সাধারণ মানুষ।

আর যাত্রীরা বলছেন, বিআরটিএ’র আন্তরিকতার অভাবেই নগর এলাকায় গণপরিবহন খাতে নৈরাজ্য চলছে। এতে একদিকে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে, অন্যদিকে তাদের পকেট কাটা হচ্ছে। তাই এসি বাসের জন্য কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে হবে।

জানা যায়, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ বাস সার্ভিস দিচ্ছে নিটল নিলয় গ্রুপ, সেটি পরিচালনা করছে গ্রিন ঢাকা প্রাইভেট লিমিটেড। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এ রুট চালু করে গ্রিন ঢাকা প্রাইভেট লিমিটেড।

উত্তরা-আব্দুল্লাপুর থেকে কুড়িল, বসুন্ধরা গেট, নতুন বাজার, বাড্ডা, রামপুরা, কাকরাইল, পল্টন ও গুলিস্তান হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ১০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ৬০ টাকা। মানে একজন যাত্রী বাসে উঠলেই সে যেখানেই নামুক না কেন তাকে গুনতে হবে ৬০ টাকা। যাদের গন্তব্য বেশি দূরত্বে তাদের জন্য কিছুটা সহনীয় হলেও কাছের গন্তব্যের মানুষের জন্য তা বিষফোঁড়া।
গ্রিন ঢাকার টিকিট, ছবি: শাকিল আহমেদবিআরটিএ’র নীতিমালা অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা। তবে সেটি শুধু সাধারণ বাসের ক্ষেত্রে, এসি বাসের বেলায় কিছু বলা নেই। সেই সুযোগে প্রতি কিলোমিটারে ৩ টাকা ৭০ পয়সাই বেশি আদায় করছে এ পরিবহন।

কিন্তু আব্দুল্লাহপুর থেকে ফার্মগেট হয়ে মতিঝিলের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। কুড়িল-রামপুরা রুটের চেয়ে এই রুটে দুই কিলোমিটার বেশি হওয়া সত্ত্বেও ভাড়া ৪০ টাকা কম। এ রুটে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিসি) এসি বাসের সর্বোচ্চ ভাড়া ৬০ টাকা।

গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার পর রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনের নিরাপত্তার স্বার্থে চালু হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা ঢাকা চাকা। ওই সেবাও পরিচালনা করছে নিটল মোটরর্স, ব্যবস্থাপনায় আছে গ্রিন ঢাকা প্রাইভট লিমিটেড। এর স্বত্বাধিকারী মো. মন্টু মিয়া।

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় চলাচলকারী ঢাকা চাকা নামে বিশেষ বাসসেবা ঢাকা চাকা লিমিটেডের চেয়ারম্যানও মন্টু মিয়া। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই বাসগুলো থেকেও তিনি তিন গুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

এছাড়া শহরে চলাচলকারী ভূঁইয়া পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, স্বাধীন এক্সপ্রেস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক ও এমএস ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারীও তিনি ।এ ব্যাপারে জানতে মন্টু মিয়ার সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

গ্রিন ঢাকা প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল্লাহ মামুন বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি। ভাড়া থেকে ১৫ শতাংশ করে ভ্যাটও দিতে হয়। আমাদের বাসে ট্রিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা নেই। আমরা নির্ধারিত ট্রিপ দেই। সবকিছু বিবেচনা করেই এই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. শিফুন নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, কোয়ালিটি অনুসারে অবশ্যই ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে হবে। কারণ বিআরটিএ যদি এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে না থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে দ্রুত ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। 

তিনি বলেন, সাধারণ বাস থেকে এসি বাসের ভাড়া কত বেশি হবে, সেটা বিআরটিএকে নির্ধারণ করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা না করায় গণপরিবহন খাতে অরাজকতা বাড়ছে।

তবে এ বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান বলেন, এ বিষয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।