• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দায়িত্ব পাচ্ছেন বিদেশিরা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন হচ্ছে আগামী ৭ অক্টোবর। তবে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এ টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পালন নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ দায়িত্ব পেতে প্রস্তুতি নিলেও বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র বলছে, জাপানকে এই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরাসরি কেউ মুখ না খুললেও এ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। এর বাইরে দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানও তৃতীয় টার্মিনালের কাজ পাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। তৃতীয় টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মানের সর্বোচ্চ যাত্রী ও এয়ারলাইন্সগুলোকে সেবা দিতে এরই মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকার সরঞ্জামও কেনা হয়েছে। কেনার পাইপলাইনে আরও ৫০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম রয়েছে। কর্মীদের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে।

যদিও সম্প্রতি তৃতীয় টার্মিনালের কাজ পরিদর্শন শেষে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃতীয় টার্মিনালের অপারেশনাল দায়িত্ব বিদেশিরা পাচ্ছেন। এ দায়িত্বের মধ্যে কার্গো হ্যান্ডলিং, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং টার্মিনাল হ্যান্ডলিং রয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের কাছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসের মতো স্পর্শকাতর দায়িত্বগুলো থাকবে। তিনি বলেন, বিমানের যে সেবার মান, থার্ড টার্মিনাল যে পরিসরে বড় করা হয়েছে, যে পরিমাণ এখানে চাহিদা হবে এবং যে পরিমাণ ক্যাপাসিটি, তাতে যাত্রী ও এয়ারলাইন্স কাঙ্ক্ষিত সেবা না-ও পেতে পারে। যদি আমরা ভালো রেভিনিউ চাই, তাহলে সেবা দিতে হবে, এর বিকল্প নেই।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম কালবেলাকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব বিমানের না পাওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু তাদের বলেনি। ৫০ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ দেশের বিমানবন্দরগুলোতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছে। সে আলোকে তৃতীয় টার্মিনালেও দায়িত্ব পালনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। বিমানবন্দর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের একটি অংশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণের পর পথ দেখিয়ে পার্কিং বে-তে নেওয়া, দরজায় সিঁড়ি লাগানো, যাত্রীদের লাগেজ ও মালপত্র ওঠানো-নামানো, উড়োজাহাজের ভেতর পরিষ্কার করা, ফুয়েল ভরা থেকে শুরু করে চেকইন কাউন্টারে সেবার মতো কাজ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দেশের বিমানবন্দরগুলোতে এ দায়িত্ব পালন করে বছরে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা আয় করছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা শাহজালাল বিমানবন্দরে এত বছর ধরে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে এ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ খাত থেকে বিমান বছরে ৫০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করেছে। তবে তৃতীয় টার্মিনালে পৃথিবীর নামকরা বিমানবন্দরগুলোর মতো সুযোগ-সুবিধা থাকছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই সেখানে গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পেতে চাইবে। বিদেশি কোনো সংস্থা এ দায়িত্ব পেলে যেমন দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে, তেমনি বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় বিদেশিরা দায়িত্ব পালন করলে নিরাপত্তার বিষয়টি থেকে যাবে।

বেবিচক সূত্র বলছে, তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এ টার্মিনালের নির্মাণ খরচের বড় অংশ দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এর ফলে টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখায় জাপান। সেই আগ্রহের বিষয়টিকে সরকার ইতিবাচকভাবে দেখছে। বেবিচকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) টার্মিনালটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পরিচালিত হবে।

সূত্র বলছে, শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বেসরকারি খাতে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তা বেশি দূর এগোয়নি। এর মধ্যে একটি মহল দুবাইভিত্তিক একটি কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য অনেক বছর ধরে সক্রিয় ছিল। ওই মহলটি এখন তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য সক্রিয় রয়েছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান জানান, থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পাবে, সেটা নির্ধারণ করবে পরামর্শক সংস্থা। তারা যদি বিমানকে সক্ষম মনে করে, তাহলে তাদের দায়িত্ব দেবে। অন্য কাউকে সক্ষম মনে করলে অন্যকে দেবে। তা ছাড়া যে কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একাধিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার থাকে। এয়ারলাইন্সের চয়েজ, তারা কার সেবা নেবে। আমাদের সেই মডেলে যেতে হবে। আমাদের কথা, ভালো সেবা দিতে হবে, রেভিনিউ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বিমানের ২১টা ফ্লাইট রয়েছে, এগুলোতে তো তারা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে থাকবেই। অন্য এয়ারলাইন্সগুলো যদি তাদের সেবায় সন্তুষ্ট হয়, তাহলে নেবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম কালবেলাকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব বিমানকে না দেওয়ার তো কোনো কারণ নেই। এখানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আছে, সিকিউরিটি আছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে তারা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও কার্গো হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এটা তো বিমানের ইচ্ছাতে সম্ভব নয়। এজন্য এভিয়েশন-সংক্রান্ত সব আন্তর্জাতিক সংস্থার নজরদারি থাকে, সব সংস্থার কাছ থেকে সনদ পেতে হয়। সেই সনদ বিমানের রয়েছে বলেই তো এ ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

যাত্রীদের লাগেজ পেতে বিলম্বসহ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানের নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এখন শাহজালালে মাত্র ছয়টি বেল্ট রয়েছে, এর মধ্যেও প্রথম ১৮ মিনিটে কিন্তু প্রথম ব্যাগেজ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ ৫৮ মিনিটের মধ্যে শেষ ব্যাগেজটি দেওয়া হচ্ছে। এয়ারপোর্ট ফ্যাসিলিটিজ কম থাকায় হয়তো কাঙ্ক্ষিত সেবায় বিঘ্ন হতো। কিন্তু তৃতীয় টার্মিনালে সব ধরনের ফ্যাসিলিটিজ রয়েছে, এখন আরও দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তা ছাড়া সেবার মান উন্নয়নের তো শেষ নেই। বিমান সেটা করেই চলছে।

বিমানের অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, শাহজালালে এত এয়ারলাইন্স আসছে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা ভালো না হলে তো তারা আসতে চাইত না। তা ছাড়া বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরগুলো কিন্তু নিজ দেশের এয়ারলাইন্সই মূল গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছে। সেক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবেই থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পাবে—এটা তারা মনে করছেন।