• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যাংক কমাতে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের চাপ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৯  

বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি ব্যাংক মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে

উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সেই সঙ্গে ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংকগুলো একীভূত করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে চলমান বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন সভা থেকে এ পরামর্শ এসেছে।

এ সভায় যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ মেনে খারাপ ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হবে বলে সংস্থাটিকে জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন সভার দ্বিতীয় দিনে  বাংলাদেশের আর্থিক খাত নিয়ে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে বিশ্বব্যাংক। ওই প্রতিবেদনে বহুজাতিক সংস্থার নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন। বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বেশ কয়েকটি বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে গতকাল বিকালে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বব্যাংক বলেছে, আমাদের ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। ঋণখেলাপির পরিমাণও বেশি। আর্থিক খাতে ব্যাপক সংস্কার এবং ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে বলেছে তারা। আমরা জানিয়েছি বেশ কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করব, তবে সেগুলো অবশ্যই বেসরকারি ব্যাংক। সরকারি ব্যাংক বেশ ভালো করছে। তবে সেগুলোয় বিশেষ অডিট করা হচ্ছে। ফলাফল পাওয়ার পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এখন শুধু বেসরকারি ব্যাংক, যেগুলো দুর্বল এবং ঝুঁকিতে আছে; সেগুলো একীভূত করা হবে। সেটা সরকারি ব্যাংকের সঙ্গেও হতে পারে, আবার ভালো বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গেও হতে পারে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাংক একীভূত হওয়ার নজির আছে। সেজন্য প্রয়োজনে আমরা ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করব। যদি কোনো দুর্বল ব্যাংক একীভূত হতে না চায়, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজার বিষয়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক যেসব সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে, সরকার সেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে চেষ্টা করবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া যেসব ব্যাংক এখন ঝুঁকিতে আছে, সেসব ব্যাংককে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে একটি মার্জার নীতিমালা তৈরি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কবির আহমদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একীভূত ও দেউলিয়া আইন সংশোধন নিয়েও কাজ চলছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, ব্যাংক খাত সংস্কারে আমরা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বিদ্যমান ৪০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। তবে বিশ্বব্যাংককে আমরা বলেছি, তোমরা যেভাবে ঋণখেলাপির হিসাব কর, সেখানে সত্যিকারের চিত্র উঠে আসে না। নানা কারণে ঋণখেলাপি হওয়ার সুযোগ আছে।

বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংস্থাটি বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। এ টাকা বেসরকারি খাতের উন্নয়নে খরচ হবে। উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হবে। এর মাধ্যমে দেশে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। ফলে দারিদ্র্যের হার কমে আসবে।

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বিদেশে আর টাকা পাচার হবে না। এখন বরং বিদেশ থেকে টাকা বাংলাদেশে আসবে বিনিয়োগের জন্য। শেয়ারবাজারকে আরো গতিশীল করা হবে বলে জানান তিনি।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদসহ অন্যরা।

বসন্তকালীন সভার দ্বিতীয় দিনে বিশ্বের ১৮৯টি সদস্য দেশ থেকে আসা প্রতিনিধি এবং অংশীজনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। জবাবে অংশীজন ও প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অংশগ্রহণকারী অংশীজন বলেছেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারলে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা সম্ভব। বড় একটি অংশ বলেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং সংস্কারের মাধ্যমে দারিদ্র্য কমিয়ে আনা যেতে পারে। এর পর রয়েছে যথাক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত, সংঘাত ও সহিংতা বন্ধ। যদিও বাংলাদেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম, যা জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা ২০টি দেশ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ‘ভালনারেবল গ্রুপ ২০’-এর সভা অনুষ্ঠিত হয় গতকাল। তবে তহবিলের আকার কত হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।

এদিকে বসন্তকালীন সভার দ্বিতীয় দিনেও আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করেছে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ের আশপাশের রাস্তায়। কয়লায় বিনিয়োগ বন্ধ এবং দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ডলারের সর্বনিম্ন সীমা আরো বাড়াতে হবে বলে দাবি জানিয়ে আসছে বিক্ষোভকারীরা।

আজ বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন সভা শেষ হওয়ার কথা। মারাকাস ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হবে বসন্তকালীন সভা।