• রোববার ১২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৯ ১৪৩১

  • || ০৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

নতুন সংজ্ঞা পেল কিলোগ্রাম

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০১৮  

দশকের পর দশক ধরে ওই হিসাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তারতম্য পাওয়ায় বেশ চিন্তিত ছিলেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক আর ব্রায়ান কিবলের স্কেলে মিলল স্বস্তি।

গাণিতিকভাবে ভরের একক নির্ণয়ের পদ্ধতি ঠিক হওয়ায় এখন যে কোনো স্থান থেকে, যে কোনো সময়ে কিলোগ্রামের ওজন পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ভরের একক কিলোগ্রামকে এতদিন ধরে যে উপায়ে সংজ্ঞায়িত করা হত, তা বদলে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

এতদিন ধরে ফ্রান্সের প্যারিসে দুর্ভেদ্য কাচের গোলকে সংরক্ষিত প্লাটিনামের সংকর একটি ধাতবখণ্ডের ওজনকে এক কেজি নির্ধারণ করে তার অনুপাতে বিশ্বব্যাপী মাপজোক চলত।

শুক্রবার ফ্রান্সের ভার্সাইয়ে ওজন ও মাপ নির্ণয় বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা কিলোগ্রামের নতুন এ সংজ্ঞার সমর্থনে রায় দেন। এর ফলে ‘ল্য গ্রঁদ কে-র’ ওজন থেকে নয়, কিলোগ্রামকে সংজ্ঞায়িত করা হবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের আলোকে।

১৯৮৯ সাল থেকে প্যারিসে সংরক্ষিত ‘ল্য গ্রঁদ কে-র’ প্রমাণ ভরের সমান বাটখারায় কিলোগ্রাম মাপার প্রচলন শুরু হয়েছিল। পৃথিবীর সর্বত্র একই ওজন ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য ওই ধাতবখণ্ডের রেপ্লিকা বানিয়ে তা দেশে দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এরপর থেকে প্রতি দশকে অন্তত একবার ওই ‘লা গ্রঁদ কে’ ও তার রেপ্লিকাগুলোর ভর মাপা হত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল ধাতবখণ্ডটি ওজন হারাচ্ছে বলে প্রমাণ পান বিজ্ঞানীরা।

এতে সাধারণের দৈনন্দিন ওজন মাপামাপিতে পরিবর্তন আসবে না। তবে এর ফলে ওষুধ শিল্প, ন্যানো টেকনোলজি ও ধাতব সংমিশ্রণে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

এটি একটি অসাধারণ ঘটনা ও অনবদ্য মুহূর্ত। মাপজোকের রীতিতে পরিবর্তন আসায় খানিকটা দুঃখ পেলেও নতুন এ পদ্ধতি অনেক ভালো কাজ করবে বলেই মনে হচ্ছে আমার। এটি বাস্তবায়ন শুরুর বিষয়ে অপেক্ষার তর সইছে না, বলেন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিজিক্স ল্যাবরেটরির (এনপিএল) পেরডি উইলিয়ামস।

ওজন কমছে রেপ্লিকাগুলোরও। যদিও তা নিয়ে ভাবনা ছিল না, গোল বাধাল ‘লা গ্রঁদ কে’।

ত্রাতা হয়ে এল নোবেলজয়ী জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ মাপার তত্ত্ব। সেখানেই একটি ধ্রুবক এইচ এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যা পরে পরিচিত পেয়েছিল প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক হিসেবে।

এই এইচের একক হচ্ছে- কিলোগ্রাম বর্গমিটার পার সেকেন্ড। হিসাবটির ভেতরেই কিলোগ্রাম থাকায়, কেবল আয়তন আর সময়ের হিসাব পেলেই কেল্লাফতে।

কিন্তু প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক এইচ এর মান এতই ক্ষুদ্র যে তা বের করা এবং এর সঠিকতা ঠিক রাখা বেশ ঝক্কির। সেখানে সাহায্যকর্তা হিসেবে হাজির হলেন বিজ্ঞানী ড. ব্রায়ান কিবল। তার সুপার-অ্যাকুরেট সেট অব স্কেল ব্যবহারে ০.০০০০০১ শতাংশ ক্ষেত্রেও এইচ পাওয়া যাবে নির্ভুলভাবে।

এভাবেই বৈদ্যুতিক তরঙ্গ থেকে মিলবে কিলোগ্রামের আরও নিখুঁত সংজ্ঞা, যা রোমাঞ্চিত করছে এনপিএলের আরেক বিজ্ঞানী ইয়ান রবিনসনকেও।

বিশ্লেষকদের ধারণা, ওজন মাপার সময় সংরক্ষিত স্থান থেকে একে বের করে আনা ও ফের ঢোকানো এবং যে কাচের গোলকে এটি ছিল তার কোনো পারিপার্শ্বিকতা বদলের কারণেই মূল পরিমাপকটি ওজন হারাচ্ছে। এ কারণেই এমন একটি পদ্ধতি খোঁজা হচ্ছিল যাতে এ ধরনের শঙ্কা থাকবে না।

চমৎকার অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে এটিই সঠিক সিদ্ধান্ত। যখন আমরা এটি (বাস্তবায়ন) করতে পারবো, তা স্থিতিশীল থাকবে সুদূর ভবিষ্যত পর্যন্ত, বলেন তিনি।