• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

‘বুড়ি’ অপবাদের জবাব দিয়ে আবার হার্ডলসের রানী সুমিতা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯  

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ট্র্যাকের পাশে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে সুমিতা রানী। সতীর্থ ও পরিচিতজনরা সান্ত্বনা দিচ্ছেন নোয়াখালীর মাইজদীর এ নারী অ্যাথলেটকে। অথচ তার ঘন্টা চারেক আগে সুমিতা জিতেছেন ১০০ মিটার হার্ডলসের স্বর্ণ পদক।

ক্যারিয়ারে ১৫তম স্বর্ণ জেতা অ্যাথলেট কেন সান্ত্বনার বাণী শুনছেন চারিদিক থেকে? বাংলাদেশ জেলের এ অ্যাথলেট স্বর্ণ জয়ের কয়েক ঘন্টা পর শুনেছেন ভাইয়ের মুত্যু সংবাদ। তাই তো হার্ডলসের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধারের পরও হাসি নেই সুমিতা রানীর মুখে।

অমর কৃষ্ণ দাস সুমিতা রানীর চাচাতো ভাই। বয়স পঞ্চাশের মতো। ছিলেন সুমিতাদের যৌথপরিবারের অন্যতম অভিভাবক। দুপুরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান সুমিতার এ ভাই-খবরটা তার মাথায় বাজ পড়ার মতোই।

‘আমার আপন ভাই আমার ছোট। দাদা (অমর কৃষ্ণ দাস) আমাদের অভিভাবক ছিলেন। কয়েক বছর আগে আমার বাবা মারা গেছেন। আমাদের মাথার উপর ছাতার মতো ছিলেন এই দাদা’-বলতে চোখ ছলছল করছিল সুমিতার।

সকাল ১০ টার দিকে যখন ১০০ মিটার হার্ডলস খেলতে যাচ্ছিলেন, তখনও একটা কষ্ট পেয়েছিলেন সুমিতা। অনেকে নাকি টিপ্পনি কেটেছেন ‘বুড়ি’ বলে। ‘বুড়ি কী দৌড়াবে ?’ বলে কয়েকজনের মন্তব্য যখন কানে ভাসছিল সুমিতার তখন তার জিদটা বেড়ে গিয়েছিল। ১৫.০০ সেকেন্ডে সবাইকে পেছনে ফেলে অপবাদের জবাব দেন নোয়াখালীর এ কৃতি অ্যাথলেট।

sumita-1

‘সবাই আমাকে বুড়ি বলে। আমি নাকি শেষ হয়ে গেছি। আমার নাকি আর স্বর্ণ জয়ের সামর্থ্য নেই। বলুন তো কার না খারাপ লাগে এসব শুনলে! শেলি অ্যান ফ্রেজার ৩২ বছরেও ট্র্যাকে ঝড় তোলেন। আমার বয়স এখন ২৭। আমি কেন পারবো না? অথচ দেখেন আমি শেষ হয়ে গেছি অভিযোগ দিয়ে এসএ গেমসের ক্যাম্পেও রাখেনি’-বলছিলেন হার্ডলসের রানী সুমিতা।

২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমসের পর একবার কমনওয়েলথ অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছেন সুমিতা। তারপর আর আন্তর্জাতিক আসরে ডাক পাননি। অথচ তাকে যারা হারাতে না পারেন, তারাই দিব্বি সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন জাতীয় দলে।

২০০৩ সালে জুনিয়র থেকে সিনিয়রে নাম লিখিয়েই স্বর্ণ জিতে প্রচারের আলোয় এসেছিলেন সুমিতা। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ও সামার মিট মিলিয়ে ১৫টি স্বর্ণ জিতে হার্ডলসে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন সুমিতা।

গত সামার মিটে ইনজুরি নিয়ে খেলে রৌপ্য পেয়েছিলেন সুমিতা (১৫.৫০ সেকেন্ড)। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তামান্না আক্তার (১৫.৩০ সেকেন্ড) জিতেছিলেন স্বর্ণ। সেই তামান্নাকেই (১৫.৩১ সেকেন্ড) এবার পেছনে ফেলে শ্রেষ্ঠত্ব ফিরিয়ে এনেছেন সুমিতা। তিনি সময় নিয়েছেন ১৫.০০ সেকেন্ড। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ৪১ তম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে এই টাইমিং করেই স্বর্ণ জিতেছিলেন নোয়াখালীর মাইজদীর এ যুবতী।