• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

গাঁয়ের নামটিই বাঁচামারা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০১৯  

মানিকগঞ্জের পশ্চিমকোণে একটি গ্রাম আছে যেটি প্রতিবছর বানের জলে ভাসে। বাঁচা-মরা, ভাঙা-গড়া নিত্যদিনের খেলা। সকাল বেলার বাদশা যেজন সন্ধ্যা বেলায় ফকির। এক সময় এই গাঁয়ের লোক ছিলো অনেক সুখি। সে সময় তাদের ছিল গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ। এখন তারা অনেক দুঃখি, নাই ঘর-বাড়ি। সারাদিন চড়ে নাকো কারো চুলায় হাড়ি। এপার ভাঙে ওপার গড়ে নিত্য দিনের খেলা। তাইতো সবাই গাঁয়ের নাম রাখলেন বাঁচামারা।’

যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা গ্রাম। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই এবারও নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদী ভাঙনের এমন করুন চিত্র নিয়ে কবিতাটি লিখেছেন বাঁচামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল লতিফ। এবার চেয়ারম্যানের বাড়িটিও ভাঙনের কবলে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে বাঁচামারা গ্রামটি। গত দুই মাসের ভাঙনে প্রায় চার শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। ঘর-বাড়ি হারানো বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্তরাই পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। রোদ-বৃষ্টিতে তাদের দিন কাটছে চরম মানবেতর। সামর্থবানরা অন্যত্র আশ্রয় নিলেও, দরিদ্ররা কোথায় যাবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা।

সরেজমিন বাঁচামারা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদীর হাত থেকে শেষ সম্বলটুকু রক্ষায় যেন সবাই ছুটছেন। পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশু সবাই ঘরের আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত। ঘরের টিন আর বেড়া খুলে নেয়ার খুটখাট শব্দ গ্রামজুড়ে। নানা স্মৃতিবিজড়িত বসত ভিটা ছাড়ছেন অনেকে চোঁখের পানি মুছতে মুছতে।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন বাঁচামারা ৫১নং মুসলিম নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারা জানান, দফায় দফায় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলছে না। এখন তারা কী করবেন, কোথায় যাবেন এই চিন্তায় ঘুম হারাম।

নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে বাঁচামারা বাজার, একটি প্রাইমারি ও হাইস্কুল, মসজিদসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। তাই ভাঙনরোধে ব্যবস্থা দ্রুত নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।

 

বাঁচামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল লতিফ জানান, গত কয়েক দিনে নদী ভাঙনে প্রায় চারশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘর-বাড়ি হারানো মানুষকে জায়গা দিতে পারছেন না। সরকারের কাছে অনেক লেখালেখি করেছেন। কিন্তু দুর্দাশাগ্রস্ত মানুষের পাশে কোনো ত্রাণ বা সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।

তিনি জানান, ভাঙনে তার নিজের বসতভিটাও নদীগর্ভে যাওয়ার পথে। এ কারণে ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ২৭ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে, এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, বাঁচামারা এলাকায় ভাঙন রোধে ১০২ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু হয়েছে। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে কাজের কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শেষ হলে ওই এলাকায় নদীভাঙনের তীব্রতা অনেকটাই কমে আসবে বলেও জানান তিনি।