• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ীসেই যুদ্ধে স্বাধীন হওয়া এই দেশ বর্তমানে বিশ্বের একটি সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যেখানে বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেট ছিল মাত্র ৭০০ কোটি টাকা, সেখানে ২০১৯ সালে এসে বাংলাদেশের বাজেট দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা যেখানে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যায়িত করেছিল, সেখানে এখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এখন আর কেউ বাংলাদেশকে তলাবিহীন রাষ্ট্র বলতে পারেনা। বাংলাদেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেখানে বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটার ব্যয় বাংলাদেশ সরকার করছে। এছাড়াও সড়ক-নৌসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ অভাবনীয় উন্নয়নে উন্নীত হয়েছে। একসময়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা বাংলাদেশের জন্য দিবাস্বপ্ন ছিল। বাংলাদেশ এখন মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে বিশ্বের এলিট ক্লাবে প্রবেশ করেছে।

বাংলাদেশকে শোষণ-নিপীড়নে নিষ্পেষিত করতে চেয়েছিল যে দেশটি, আজ অনেক কিছুতেই সেই দেশ থেকে এগিয়ে আছেবাংলাদেশ। গত ৪৭ বছরের অগ্রগতিতে বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ এখন পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। স্বাধীনতার পর বিগত ৪৭ বছরে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলো পাল্টেছে। ক্রমেই শিল্প ও সেবা খাতের বিকাশ হয়েছে, যা অর্থনীতির মৌলিক কাঠামো বদলে দিয়েছে। স্বাধীনতার সময় জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল প্রায় ৫৯ শতাংশ। আর শিল্পের অবদান ছিল ৬ থেকে ৭ শতাংশ। বর্তমানে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ২৯ শতাংশ। জিডিপির তিনটি খাতের মধ্যে কৃষি খাতের অবদান তৃতীয় স্থানে। সেবা খাতের অবদান শীর্ষে। স্বাধীনতার সময় পাকিস্তানে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ২০ শতাংশের বেশি।

যে পাকিস্তানিদের হাত থেকে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আজকের এই বাংলাদেশ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানব উন্নয়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, খাদ্যে উন্নয়ন, মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস, সবকিছুতেই পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে।

পাকিস্তানের থেকে অনেকগুলো বিষয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ,  সম্প্রতি তা স্বীকার করেছেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেল অনুসরণ করার পক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মতও দিয়েছিলেন।

অতিসম্প্রতি পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ কেন এগিয়ে তার কারণ ব্যাখ্যা করে 'দ্য ডন' -এ ৯ ফেব্রুয়ারি উপ-সম্পাদকীয় লিখেছেন পাকিস্তানের পদার্থবিদ পারভেজ হুদবয়।

ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নিজের ভবিষ্যৎ দেখে। তারা রফতানি বাড়ানো, বেকারত্ব হ্রাস, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন, বিদেশী ঋণ ও সাহায্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাস এবং ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন ও সীমানা বিতর্ক আছে, অভিবাসন ও মাদক নিয়ে ঝামেলা আছে। কিন্তু, বাংলাদেশ কখনোই তার মৌলিক অগ্রাধিকার থেকে সরে আসেনি।

তিনি লিখেছেন - মানব উন্নয়ন পাকিস্তানের কাছে প্রথম অগ্রাধিকার নয়, তবে বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিরা ভোটারদের কাছে দায়বদ্ধ। তাই তাদের উন্নয়নে বিনিয়োগ করে থাকেন। নিরাপত্তার ওপর অতিরিক্ত জোর দেয়ার কারণে পাকিস্তানে অতিরিক্ত রাষ্ট্রীয় শক্তি তৈরি হয়েছে,যার কারণে ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারে গণহত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। তার ফলে, পিছিয়ে গিয়েছে পাকিস্তান।

এছাড়াও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বড় পরাজয়ের পর নিজের নাম পাল্টে ফেলে পাকিস্তান (পূর্বে ছিল পশ্চিম পাকিস্তান)। তারা ভেবেছিল পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) ফের তাদের সঙ্গে একত্রিত হতে চাইবে। যেটা শেষ পর্যন্ত হয়নি।