• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

হলুদ খেলেই বাড়বে শরীরের শ্বেত রক্তকণিকা, তৈরি হবে অ্যান্টিবডি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২০  

প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে হলুদ। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানসমূহ বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, হলুদ জীবাণুনাশক ও রোগ প্রতিরোধক। ভেষজ চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে। হলুদে থাকা কারকিউমিনেই রয়েছে নানা উপকার। কাঁচা ও শুকনো হলুদে প্রচুর পরিমাণ এই কারকিউমিন উপাদান থাকে। শরীরের তীব্র প্রদাহ, জ্বালাপোড়া কমাতে পারে।

অর্থাৎ অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান হিসেবেও এর সুনাম আছে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও হলুদের বহুগুণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। হলুদের কারকিউমিন শরীরের শ্বেত রক্তকণিকা বাড়ায়, এতে করে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। যা এই করোনাকালে প্রত্যেকের শরীরেই থাকা দরকার।

১৯১০ সালে প্রথম হলুদের এই রাসায়নিক উপাদান কারকিউমিনকে চিহ্নিত করেন বিজ্ঞানীরা। ওষুধ তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই উপাদান। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা কারকিউমিনকে ম্যাজিক যৌগ বলেন। যদিও কারকিউমিনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। গর্ভবতী নারীর জন্য কারকিউমিন উপযোগী নয়। এখন জেনে নিন মানুষের শরীরে কারকিউমিনের ভূমিকা ঠিক কী-

> বিশেষজ্ঞদের মতে, কারকিউমিন হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি কম্পাউন্ড। যে কোনো সংক্রমণজনিত ক্ষত, প্রদাহ সারাতে পারে এই যৌগ। 

> ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা প্যাথোজেন শরীরে ঢুকলে যে তীব্র প্রদাহজনিত রোগ তৈরি হয় তাকে নির্মূল করতে কারকিউমিনের জুরি মেলা ভার। 

> শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে কারকিউমিনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড সংক্রমণ রুখতেও কার্যকর হতে পারে হলুদের এই উপাদান। 

> শরীরের পিত্ত নিঃসরণ বাড়ায় কারকিউমিন, হজম শক্তি বাড়ায়। খাদ্যনালীর যে কোনো সংক্রমণ ঠেকাতে পারে। 
> বদহজম, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রনিক পেটের রোগ সারাতে পারে কারকিউমিন।

> পেশির ব্যথা, গাঁটে গাঁটে ব্যথা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা আছে হলুদের এই রাসায়নিক উপাদানের। অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ জয়েন্টের ব্যথাও কমায়।

> হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায় কারকিউমিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এন্ডোথেলিয়ম কোষের কার্যকারিতা বাড়ায়। এই এন্ডোথেলিয়াম রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। 

> হৃদপিণ্ডের রক্তবাহী ধমনীতে চর্বি জমতে দেয় না। কোনোভাবে ধমনীতে ফ্যাট জমতে থাকলে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এই ঝুঁকি কমায় কারকিউমিন।

> মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, অ্যালঝাইমার্সের ঝুঁকি কমায়। ব্রেন হরমোন বিডিএনএফ এর ক্ষরণ বাড়ায় কারকিউমিন। এই হরমোন নতুন নিউরন তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে মস্তিষ্কের যে কোনো জটিল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে। 

> নিয়মিত হলুদে থাকা বারকিউমিন শরীরে প্রবেশ করলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়, স্মৃতিনাশের ঝুঁকি কমে। মস্তিষ্কের কোষ সক্রিয় থাকে, বয়স বাড়লে ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। পাশাপাশি মানসিক অবসাদও কমায় কারকিউমিন।

> মারণব্যাধি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিও থামিয়ে দিতে পারে হলুদের কারকিউমিন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত হলুদ ব্যবহার করলে প্রি-ক্যানসারযুক্ত পলিপ ৬০ শতাংশেরও বেশি কমে যায়। একই সঙ্গে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়ে। এই শ্বেত রক্ত কণিকাই শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। 

শ্বেত রক্ত কণিকা থেকেই তৈরি হয় অ্যান্টিবডি যা সংক্রামক প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কারকিউমিনের হাই ডোজ ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলোর মোকাবিলা করতে পারে। বিশেষ করে কলোরেকটাল ক্যান্সার প্রতিরোধে কারকিউমিনের বিশেষ ভূমিকা আছে। 

গবেষকরা বলছেন, পরীক্ষা করে দেখা গেছে কোলন ক্যান্সার রয়েছে এমন রোগীকে টানা ৩০ দিন ধরে দিনে চার গ্রাম করে কারকিউমিন খাওয়ানোর ফলে সংক্রমণ প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে।