• রোববার ১২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৮ ১৪৩১

  • || ০৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

শরিকদের ৬৫-তেই রাখতে চায় আওয়ামী লীগ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০১৮  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিকদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০টি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের একাধিক বৈঠকে এ বিষয় স্থির করেছে দলটি। জোট শরিকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে দেরি হচ্ছে। দলটির সংসদীয় বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংসদীয় বোর্ডের সূত্র অনুযায়ী, যে সব আসনে শরিক দলগুলোর সংসদ সদস্য রয়েছে। সেই আসনগুলো শরিক দলগুলো পাবে। তবে কিছু আসনে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। নির্বাচনী জোটে নতুন করে যোগ দেয়া দলগুলোর জন্যও কিছু আসন ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে চূড়ান্ত হতে যাওয়া প্রার্থী তালিকায়। সেক্ষেত্রে কপাল পুড়তে পারে সংশ্লিষ্ট আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোনো কোনো জোট শরিক দলগুলোর বাড়তি চাহিদার ব্যাপারেও ভেবে দেখা হতে পারে। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য রয়েছেন ৩৫ জন। নির্বাচনে ৩৫ আসনের বাইরে অতিরিক্ত সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে জাতীয় পার্টিকে। পরিবর্তন আসতে পারে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্যদের এলাকার ক্ষেত্রেও। যদিও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ৭৬টি আসন দাবি করেছে বলে জানা গেছে। ঢাকা-১৭, ফেনী-৩, গাইবান্ধা-৩ ও লালমনিরহাট-৩ এই আসনগুলোতে অতিরিক্ত হিসেবে জাতীয় পার্টিকে দেয়া হতে পারে।

দলটির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা সন্তোষজনকভাবে এগোচ্ছে। উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে আমরা সম্মানজনক আসন পাব।’

জানা গেছে, মহাজোটে নতুন করে যোগ দিতে যাওয়া অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে। যদিও যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৩৮টি আসনের তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের হিসাব অনুযায়ী, মুন্সীগঞ্জ-১ ও ৩, নোয়াখালী-৪ অথবা লক্ষ্মীপুর-৪, সিলেট-৬ এ সকল আসনগুলোতে নিয়ে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে হতে পারে মহাজোটের হিসাব-নিকাশ।

সূত্রগুলোর দাবি অনুযায়ী, মহাজোটের সঙ্গে থাকা জাকের পার্টিকেও একটি আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী ও প্রবীণ নেতার কপাল পুড়তে পারে। ইসলামী ঐক্যজোটের জন্যও একটি আসন ছাড়া হতে পারে। যিনি মনোনয়ন পেতে পারেন তিনি চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রয়াত এক নেতার ছেলে। ওই আসনটিতে বর্তমানে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রয়েছে।

এদিকে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কাস পার্টির পক্ষ থেকে সর্বশেষ ১০টি আসন দাবি করা হলেও তাদের ছয়টি আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। যে সব আসনে ইতোমধ্যে তাদের সংসদ রয়েছে সেই আসনগুলোই তাদের ছাড় দিতে চায় আওয়ামী লীগ।

মহাজোটের মনোনয়ন প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আসন বণ্টনের প্রক্রিয়া এখনও সমাপ্ত হয়নি। কারণ জাতীয় পার্টির সঙ্গে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে ফয়সালা কঠিন। তবে আমাদের অনেকের আসন প্রাপ্তি হয়ে গেছে, যেমন আমরা যারা সংসদ সদস্য ছিলাম। কিন্তু আমাদের ডিমান্ডের এখনও সমাধান হয়নি। আমরা ১০টি আসনের জনপ্রিয় প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছি।

নড়াইল-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য তো আপনাদের দলীয় (শেখ হাফিজুর রহমান) কিন্তু এ আসনে আওয়ামী লীগ মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দলীয় প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদশা বলেন, মাশরাফি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী, তার ঘোষণার প্রতি মর্যাদা রেখে আমরা আসনটি ছেড়ে দিলাম কিন্তু তার বদলে আরেকটা আসন দিতে হবে।

বর্তমান সংসদে তিনটি আসনে রয়েছে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদের। তারা ২২৪টি আসনে দলীয় প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে। কিন্তু মহাজোটের পক্ষ থেকে তাদের জন্য তিনটি আসন রাখা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, পরীক্ষিত বন্ধুদের দিকে আন্তরিকতার সহিত নজর দেয়াটাই উত্তম বলে আমি মনে করি।

১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাসদের দুটি আসন বর্তমান সংসদে রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মূল দাবি চার আসনের হলেও তাদের পুরানো দুটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, এখনও ১৪ দলীয় জোটের আসন চূড়ান্ত হয়নি।

জোটের আরেক শরীক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জেপি) পুরনো দুটি আসন রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।

১৪ দলীয় জোটের শরীক তরিকত ফেডারেশন বিগত নির্বাচনে দুটি আসন পেয়েছিল। তবে দলটির সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল ইসলামিক অ্যালায়েন্স নামে নতুন একটি জোট গঠন করায় এবার একটি আসন পেতে পারে তরিকত ফেডারেশন। অন্যদিকে নতুন রাজনৈতিক জোট ইসলামিক অ্যালায়েন্সও একটি আসন পেতে পারে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, জোটের প্রত্যাশা অনেক, আমরা চেষ্টা করছি প্রত্যাশা পূরণ করতে। এ জন্য এখনো জোটের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করছি, আজ (শনিবার) না হলেও রোববার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে।

মনোনয়ন বোর্ডের অপর এক সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, আমাদের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। জোটের প্রার্থীও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। তালিকা চূড়ান্ত হলে, সবগুলো একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে।