শোকে-প্রতিবাদে জাবিতে পহেলা বৈশাখ

ছাত্রের আকস্মিক মৃত্যুর শোক ছুঁয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পহেলা বৈশাখের উৎসবে। বাতিল করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনের কেন্দ্রীয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।

এদিকে ওই ছাত্রের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করে কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা।

গত শনিবার রাতে ইংরেজি বিভাগের ৪৫তম আবর্তনের ছাত্র নুরুজ্জামান নিভৃত (২২) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. হরনাথ সরকার বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট থেকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নুরুজ্জামানের মৃত্যু হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বুকে ও পেটে ব্যথা নিয়ে নুরুজ্জামান সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিকিৎসা কেন্দ্রে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক ড. তরিকুল ইসলাম তাকে গ্যাস্ট্রিকের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এতে ব্যাথা না কমলে তাকে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পরে রাতে সোয়া ৯টার দিকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক ড. ইনামুর রশিদ বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বারবার রোগীকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। ‘লোক আসছে’ বলে তার বান্ধবী কালক্ষেপণ করেছে। রোগীর অবস্থা অবনতির দিকে গেলে রাত ৯টার পরে তাকে জোরপূর্বক এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।’

এদিকে নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয়ভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি বাতিলের ঘোষণা দেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের অনুষ্ঠানে গান-বাজনা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদ এবং ইংরেজি বিভাগ তাদের সকল অনুষ্ঠান বাতিল করেছে।

নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুচিকিৎসার ব্যবস্থাকে দায়ী করে শহীদ মিনারে অনির্দিষ্টকাল অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে পাঁচ শিক্ষার্থী। সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে শহীদ মিনারে মানববন্ধনও হয়েছে। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের একটি দল দাবি আদায়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে যান।

দুপুর ১২টা থেকে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মেডিকেলে অবস্থান নেয়।

এর আগে একই দাবিতে শনিবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে অবস্থান নেন ইতিহাস বিভাগের খান মুহাম্মাদ রিফাত বিল্লাহ ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ইয়াসির আরাফাত বর্ণ। তারা উভয়ই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪৪ ব্যাচের আবাসিক শিক্ষার্থী।

এরপর তাদের সঙ্গে যোগ দেন প্রাণীবিদ্যা বিভাগের আদিব আরিফ, আইবিএ বিভাগের ফারহান রহমান ও ইতিহাস বিভাগের ইয়াহিয়া জিসান।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান শহীদ মিনারে অবস্থানকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। মেডিকেলের চিকিৎসার মান বাড়ানোর আশ্বাস দেন তারা।