• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

নদী দূষণ করছে ইটিপিবিহীন কারখানাগুলো

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর ২০১৯  

গাজীপুরে প্রতিনিয়ত নদী তথা পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছে ইটিপিবিহীন কল-কারখানাগুলো। এসব কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর বারবার অভিযান চালিয়েও তাদেরকে ইটিপি ব্যবহারে বাধ্য করতে পারছে না। ফলে দূষণও রোধ হচ্ছে না।

নদী দূষণের কারণে শুষ্ক মৌসুমে গাজীপুরের নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি কুচকুচে কালো রঙ ধারণ করে, এমনকি এখন এই বৃষ্টির মৌসুমেও পানির রঙ কালোই থাকছে। এতটাই দূষিত হয়ে গেছে খাল-বিল, নদ-নদীর পানি। গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, বাসন, ইসলামপুর ভাঙা ব্রিজ সংলগ্ন বিল ও বেলাই বিলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে বেশ কিছু কারখানা রয়েছে যেগুলোতে ইটিপি থাকার প্রয়োজন সত্ত্বেও তা নেই। এ ধরনের অন্তত ৩৫টি কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে—কোনাবাড়ি এলাকার বিডি টেক্স ইন্ডাস্ট্রি (প্রা:) লি:, আসিফ অ্যাপারেলস লি:; টঙ্গী এলাকার মাল্টি সুপার সাইন ওয়াশিং লি:, আরএফএস ওয়াসিং লি:, লন্ড্রি গেইট লি:, মদিনা ওয়াসিং এন্ড ডায়িং, হলমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস লি:, কেয়ারটেক্স ফিনিশিং লি:, ঢাকা ওয়াশ লি:, ব্লু-ফ্যাশন লি:, গ্রিন টাচ ফ্যাশনস লি:; পূবাইল এলাকার লতা ওয়াসিং প্ল্যান্ট; কাশিমপুর এলাকার দি ড্রেস এন্ড ডিআইয়াস, ডিবিএল ফার্মাসিটিক্যালস, দি ডেল্টা কোয়ালিটি ডেনিমস লি:; বোর্ডবাজার এলাকার ডায়মন্ড ওয়াসিং প্ল্যান্ট, মেসার্স হোলি ফ্যাশনস, ইস্ট ওয়েস্ট ওয়াসিং লি:, গ্রিন সোয়েটার, বাসন সড়ক এলাকার মীম সোয়েটার এন্ড ফ্যাশন লি:, মোগড়খাল এলাকার আরআইকে ওয়াসিং প্ল্যান্ট, কেয়ার ডিজাইন এন্ড প্রিন্টিং লি:, টেকনগরপাড়া এলাকার রেইনবো প্রসেসিং, শ্রীপুরে সি এন্ড আর সোয়েটার লি:, গেলি ইন্ডাস্ট্রিজ লি:, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ লি:, ব্লু প্ল্যানেট নিট কম্পোজিট লি:, ব্লু সিল টেক্সটাইল লি:, মেসার্স ম্যাক্স ড্রাগ লি:, চায়না লেইকে পাওয়ার সাপ্লাই লি:, চান্দনা এলাকার সুন ফেং মেশিনারিজ লি:, ভবানীপুর এলাকার এমএমসিএল ব্যাটারি কোং লি:, সফিপুর এলাকার আরএল ইয়ার্ন ডায়িং লি: এবং রাজেন্দ্রপুর এলাকার তাসমিয়া কসমেটিক্স এন্ড টয়লেট্রিজ লিমিটেড।

ইতোমধ্যে এসব কারখানাকে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে একাধিকবার জরিমানা আদায় করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, ইটিপি আছে, কিন্তু সঠিকভাবে ইটিপি ব্যবহার করা হচ্ছে না অনেক কারখানায়।

আবার ইটিপি থাকলেও খরচ বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করছে না অনেকে। কারখানাগুলো তাদের দূষিত পানি ইটিপি ব্যবহার না করে বাইপাসের মাধ্যমে সেই পানি নদী ও জলাশয়ে ফেলছে। এসব কারখানার পানি যে স্থান দিয়ে বের হয়ে খাল বা জলাশয়ে পড়েছে সে স্থানটি দেখলে সহজেই বোঝা যাবে কোন কারখানার দূষিত পানি ইটিপি ছাড়া সরাসরি নদী ও জলাশয়ে পড়েছে।

বাসন সড়ক এলাকার মিম সোয়েটার এন্ড ফ্যাশনস লি: ও বোর্ডবাজার এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট ওয়াশিং কারখানায় ইটিপি নির্মাণ কাজ শেষ হবে খুব শিগগিরই। পরিবেশের কথা বিবেচনা করে নিয়ম মেনে পানি শোধন করে ড্রেনে ফেলা হবে বলে ঐ দুই কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মীম ডিজাইন ও আলেমা টেক্সটাইল কারখানার ব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান জানান, তাদের কোম্পানির পানি শতভাগ ইটিপি ব্যবহারের মাধ্যমে শোধন করা হচ্ছে। বাইপাস করে কোনো পানি ফেলা হয় না।

মহানগরীর কোনাবাড়ি, কাশিমপুর ও টঙ্গী এলাকায় তুরাগ নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডায়িং কারখানাসহ নানা প্রকার ছোটোবড়ো কয়েকশ কারখানা। ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক জানান, এসব কারখানার মধ্যে কিছু বড়ো কারখানায় পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ইটিপি থাকলেও বর্ষায় এসব ইটিপি তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। কারখানার দূষিত ও বিষাক্ত পানি সরাসরি ফেলা হচ্ছে তুরাগ নদীতে। এতে নদী দূষণ ছাড়াও নানা প্রজাতির দেশীয় মাছের উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে।

 

একই অবস্থা জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিলাই নদীরও। এটিও প্রতিনিয়ত দখল দূষণে তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। কারখানার বর্জ্য এবং শহরের ময়লা-আবর্জনা নদীর পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে তুলছে।

নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও নদী গবেষক মো. মনির হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরে তুরাগ নদীর তীরের বিভিন্ন জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হলেও দূষণের মাত্রা কমেনি। একটা সময় শিল্প স্থাপন করাটাই গুরুত্ব পেয়েছিল বেশি, কিন্তু পরিবেশের দিকটি বিবেচনা করা হয়নি। এখন সময় এসেছে নদী খাল-বিল ও জলাশয়ের পরিবেশ রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সালাম সরকার জানান, ইটিপিবিহীন কারখানাগুলোকে দ্রুত ইটিপি স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যাদের ইটিপি থাকার পরও তা সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া