• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ব্যক্তি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৮  

১৯৬৩ সালে স্কাউট সদস্য হিসেবে পাকিস্তানের করাচি গিয়েছিলাম সেখানে রাস্তা, ভবনসহ সার্বিক উন্নয়ন দেখে অবাক হয়ে যাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য দেখে হতবাক হয়ে যাই তখনই মনে হয়েছিল এই বৈষম্য দূর হওয়া দরকার এই বৈষম্যই আমাকে মুক্তিযুদ্ধ অংশ নিতে প্রেরণা জুগিয়েছিলকথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর বেসামরিক প্রধান আনোয়ার উল আলম শহীদ

আনোয়ার উল আলম শহীদ জানান, তার বহুদিনের ইচ্ছা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের  স্মৃতি নিয়ে একটি যাদুঘর করবার ২০০৭ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ইচ্ছাটি বাস্তবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি এই উদ্দেশ্যে শহরে একটি দোতলা বিল্ডিং নির্মাণ করেন বিভিন্নজনের কাছ থেকে, বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা মুক্তিযুদ্ধের ছবি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

১৯৬২ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি বলেন, ‘জাদুঘরে রাখা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি ছবি সে সময়ের ইতিহাসকে তুলে ধরেছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস যদি না রেখে যাই তাহলে নতুন প্রজন্মকে বঞ্চিত করা হবে

আনোয়ার উল আলম শহীদ মনে করেন, জাদুঘরের ছবি ও বিভিন্ন জিনিস দেখে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস জানতে আগ্রহী হবে আর সেই ইতিহাস জানাতে প্রয়োজন হবে বই পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী যুবসমাজের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক চর্চা বা সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্যও বইয়ের গুরুত্ব রয়েছে এসব কথা মাথায় রেখেই জাদুঘরের পাশাপাশি একটি লাইব্রেরিও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেই লাইব্রেরিতে মুক্তিযুদ্ধ,ধর্ম,সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় তিনহাজার বই রয়েছে

শহীদ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অনেক ছবি, মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা চিঠি,খরচের রশিদসহ বিভিন্ন জিনিস ১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট ভূঞাপুর থানার মাটিকাটায় যমুনা নদীতে পাকিস্তানী হানাদারদের অস্ত্র বোঝাই দুইটি জাহাজে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে বিপুল অস্ত্র তাদের দখলে নিয়ে নেন এবং জাহাজে আগুন ধরিয়ে দেন সেই জাহাজের একটি খণ্ডাংশও স্থান পেয়েছে জাদুঘরে

আনোয়ার উল আলম শহীদ জানান, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে মুক্তিবাহিনী সার্কিট হাউসে আক্রমণ করে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানি কমান্ডার মেজর কাজেম কামালকে গ্রেফতার করে সেই কাজেম কামালের ব্যবহৃত একটি রিভলবার রয়েছে তার জাদুঘরে এ ছাড়াও রয়েছে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ব্যবহৃত প্যারাসুট, যুদ্ধকালীন প্রকাশিত ‘রণাঙ্গন’ পত্রিকার কপিসহ আরও অনেক স্মৃতি

আনোয়ার উল আলম শহীদ টাঙ্গাইল শহরে ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন তার পৈত্রিক বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ইছাপুর তিনি বাবা-মার পঞ্চম সন্তান

 টাঙ্গাইল শহরের টাউন প্রাইমারি স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু তারপর বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সরকারি সা’দত কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন স্বাধীনতার পর তিনি উচ্চপদে সরকারি চাকরি করেন