• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ধামরাইয়ে ইউএনও’র নির্দেশেও বন্ধ হয়নি অবৈধ ইটভাটা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

ঢাকার ধামরাইয়ে ইউএনও'র নির্দেশেও বন্ধ হয়নি ঘনবসতিপূর্ণ মারুমডালি গ্রামে নির্মিত সেই অবৈধ ইউনিভারসাল নামের ইটভাটা। জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ছাড়া ও ফসলি জমির মাটি নিয়ে ইট পোড়ানোর অভিযোগে গত মঙ্গলবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ধামরাইয়ের ইউএনও মোহাম্মদ সামিউল হক ওই অটো ইটভাটাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন এবং জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় ভাটার কর্মচারী লোকেশ চন্দ্র সরকারকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে ইটভাটাটি বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেন। কিন্তু গতকাল রবিবার পর্যন্তও ভাটাটি বন্ধ রাখা হয়নি। এদিকে জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় সাধারণ এক কর্মচারী জেল হাজতে রয়েছে। আর তার স্বজনরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। 

 সরেজমিনে গিয়ে ভাটায় কর্মরত কর্মচারী ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালে ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের মারুমডালি গ্রামের ঘনবসতি এলাকায় ১০-১২ জন কৃষকের জমি ভাড়া নিয়ে ইউনির্ভাসাল নামে একটি অটো ব্রিকফিল্ড নির্মাণ করা হয়। প্রথমে সুনজি নামের এক চায়না নাগরিকের নামে পরিচালিত হয় ইটভাটাটি। তিনি পাঁচ বছর পরিচালনা করে গেছেন। এখন বর্তমানে কে পরিচালনা করছেন সঠিকভাবে বলতে পারছেন না কেউ। অনেকে বলছেন, স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এটা পরিচালনা করছেন। আবার কেউ বলছেন আমেরিকান এক প্রবাসী এটা দেখভাল করছেন। সরেজমিনে গিয়েও একই তথ্য পাওয়া গেছে ভাটায় কর্মরত কর্মচারী ও যারা ভাটায় কাজ করছেন তাদের কাছ থেকে। যারা ভাটায় মাটি সরবাহ করছেন তারাই নাকি এটি পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও তাদের সাথে চুক্তি না করেই এক রকম জোরপূর্বক ভাটা পরিচালনা করছে প্রভাবশালীরা। তবে জমির মালিকদের সঙ্গে ভাটার মালিক হিসেবে কে চুক্তি করবে এ নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ভাটায় ভাড়া দেওয়া জমির মালিকরাও ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

নাছির উদ্দিন নামের এক প্রভাবশালী জানান, ভাটায় তার ৬০ লাখ টাকার মাটি দেওয়া আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নাকি তিনিই করে এনে দিয়েছেন বলে জানান। ইটভাটা পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরাই দেখাশুনা করি। 

সাইদুর রহমান রিপনসহ কয়েকজন জানান, ভাটায় তাদের কয়েক বিঘা জমি লিজ দেওয়া হয়েছে। লিজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন কেউ নতুন করে চুক্তি করছে না আবার জমিও ছেড়ে দিচ্ছেন না।  

এ ব্যাপারে ইটভাটার ম্যানেজার কবির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  তবে ১০ বছর ধরে ওই ভাটায় কর্মরত শহিদুল ইসলাম বলেন, গত দশ বছরে পরিবেশ অধিদপ্তরের কত কর্মকর্তাই তো এই ভাটায় আসলো আর গেল, কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেনি।

স্থানীয় আব্দুল হক জানান, লোকালয়ে ইটভাটা নির্মাণের ফলে বায়ু দূষণসহ এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ভাটাটি বন্ধ করার জন্য সম্প্রতি এলাকাবাসীর স্বাক্ষর নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার উপ পরিচালক  ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল হক ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করেন ওই ভাটায়। সেখানে ভাটার কর্মচারি লোকেশ চন্দ্র সরকারকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স না থাকায় ও অন্যান্য বিষয়ে ভাটাটি অবৈধ বলে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে জরিমানার টাকা কে পরিশোধ করবে এ নিয়ে চলে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় ভাটার আটক কর্মচারি সিলেটের লোকেশ চন্দ্র সরকারকে এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন ইউএনও। একই সঙ্গে ভাটাটি বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু গতকাল পর্যন্তও ভাটাটি বন্ধ করা হয়নি। মালিকানা দ্বন্দ্বের জেরে সাধারণ এক কর্মচারি জেল হাজতে রয়েছে। আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন লোকেশ চন্দ্রের পরিবার। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল হক বলেন, ‘জরিমানা আদায়ের জন্য তিন ঘণ্টা অপেক্ষা  করেছিলাম। কিন্তু কেউ যোগাযোগ করেনি। ফলে আটক ব্যক্তিকেই জেল দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স না থাকায় ভাটাটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও বন্ধ না করা হলে আবার অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'