• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কাজ করার আশ্বাস চীনের

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৯ জুলাই ২০১৯  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে চীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে সম্মত করতে চেষ্টা করবে চীন সরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তিনি উল্লেখ করেন চীন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুবার মিয়ানমারে পাঠিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে তারা আবারো মন্ত্রীকে মিয়ানমারে পাঠাবে।

প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, তার সাম্প্রতিক চীন সফরে বাংলাদেশ ও চীন দু’ দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শী জিনপিং বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেছেন, আমরা পরস্পরের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে থাকব। আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছি।

‘তার দেশ সবসময় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টার পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। একইসঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একমত হন’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
 

ওয়ার্ল্ড ইকোনামিক ফোরামে (ডব্লিউইএফ) অংশ নিতে এবং চীনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং-এর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত চীন সফর করেন।

অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারস-এর জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল তার সফরসঙ্গী ছিলেন। এছাড়া, একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যান।

শেখ হাসিনা বলেন, তার এবারের চীন সফরে দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং, প্রেসিডেন্ট শী জিনপিং এবং চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এ সব আলোচনার সময় সব নেতাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন এবং এই সমস্যা সমাধানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি চীনের দালিয়ান শহরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) অ্যানুয়াল মিটিংয়ে যোগদান করেন এবং ‘কোঅপারেশন ইন দি প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ঢাকা এবং বেইজিং’র মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সংক্রান্ত ৯টি চুক্তি ও স্বাক্ষরিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তৃতায় বলেন, ২ জুলাই সকালে তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদান করেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং সভার উদ্বোধন করেন।

বিকেলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবের সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। প্রফেসর সোয়াব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিক এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করবেন বলে জানান। ২০২১ সালে দাভোসে ফোরামের মূল ফোকাস হবে বাংলাদেশ।

এরপর তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত প্যাসিফিক রিম সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এ আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ হতে ৫টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। 
যেগুলো হচ্ছে-
১. টেকসই উন্নয়নের সব দিকে দৃষ্টি প্রদান;
২. দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে;
৩. সবার জন্য সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সার্বিক উন্নয়ন করতে হবে এবং
৪. প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দালিয়ানে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদান শেষে ৩ জুলাই সকালে তিনি বেইজিং পৌঁছান। চীনের ভাইস ফরেন মিনিস্টার কিং গ্যাং বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং চীনের সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

৪ জুলাই সকালে চীনের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং-এর সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেট হল চত্বরে পৌঁছালে চীনের প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাগত জানান। পরে তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।

‘চীনের প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সালাম গ্রহণ করেন এবং গার্ড পরিদর্শন করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সময় বাংলাদেশ এবং চীনের জাতীয় সংগীত বাজানো হয় এবং তোপধ্বনি দেয়া হয়।’

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার শুরুতেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় চীনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান এবং বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে সম্মত করতে চেষ্টা করবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেন।

চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তিনি উল্লেখ করেন, চীন তার পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে দু’বার মিয়ানমারে পাঠিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনে তারা আবারও মন্ত্রীকে মিয়ানমারে পাঠাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে তিনি উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং রোহিঙ্গা সংকটের কারণে এই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

সরকার প্রধান বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় পাঁচটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এগুলো হলো অর্থনৈতিক বিকাশ এবং বাণিজ্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়, বিসিআইএম বা যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভিসা সংক্রান্ত এবং রোহিঙ্গা ইস্যু।

তিনি বলেন, চীনা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের অংশীদার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। তিনি এটিকে আরো উচ্চ স্তরে নিয়ে যেতে চান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আমরা উভয়ই আশা করি, এই সম্পর্ক আগামীতে আরো গভীর ও জোরদার হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৈষম্য দূর করার জন্য বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে এবং ফিরতি ক্রয়ের গ্যারান্টিসহ আরো কলকারখানা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে একশো অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে আমি এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনকে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। লি খোচাং বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনতে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশকিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ওপর ও আমি গুরুত্বারোপ করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি চীনের প্রতি ঋণচুক্তির শর্তাবলী সহজ করার এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সঠিক সময়ে তহবিল ছাড়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী, ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন, একটি জলবায়ু অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপন এবং তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়ন সেইসঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দ্রুতগামী ট্রেন যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া গতিশীল করতেও চীনের সহায়তা কামনা করি।

তিনি বলেন, আমি চীনের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশি পাসর্পোটধারী বিশেষ করে ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানাই। এ অঞ্চলের বাজারগুলোকে সংযুক্ত করতে আমরা উভয় দেশ বিসিআইএম করিডোর দ্রুত বাস্তবায়নে সম্মত হই। পরে প্রধানমন্ত্রী লি খোচাং-এর দেয়া এক ভোজসভায় যোগদান করি। আমাদের উভয়ের উপস্থিতিতে ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা দলিল স্বাক্ষরিত হয়।

দলিলগুলো হলো-
১. রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সাহায্য সংক্রান্ত এল.ও.ই।
২. সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা স্মারক।
৩. ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা।
৪. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট।
৫. বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি।
৬. বিনিয়োগ সহযোগিতা ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক।
৭. পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার প্রকল্পের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট।
৮. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট।
৯. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট।

ওই দিন বিকেলে চায়না কাউন্সিল ফর দি প্রোমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড আয়োজিত চীনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সময় বাংলাদেশে ব্যবসার বিভিন্ন অনুকূল পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে আমি চীনের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।

‘চীনের ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তারা এই অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণে আগ্রহ ব্যক্ত করেন, বলেন তিনি।

৫ জুলাই সন্ধ্যায় দিয়াওউয়াতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শী জিনপিং-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন এবং অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি গুরুত্ব পায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে, যা দেশের জন্য পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিকে থেকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে সেজন্য আমি প্রেসিডেন্টকে চীনের গুড উইল কাজে লাগানোর অনুরোধ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট মনে করেন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা এবং কীভাবে এর সমাধান করা যায় এনিয়ে চীন কাজ করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা এ সংকট সমাধানে যতটা সম্ভব চেষ্টা করব। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দু’দেশেই আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধু। আমাদের কাছে দু’দেশই সমান, কেউ কম বা বেশি নয়।

ভোজ সভায়ও এ আলোচনা উঠে আসে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য তুলে ধরেন, শী জিনপিং বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট আমাকে বলেন, আমরা পরস্পরের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে থাকব। তিনি বাংলাদেশকে চীনের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী উল্লেখ করে বলেন, আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছি।

‘চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, তার দেশ সব সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টার পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একমত হই’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রেসিডেন্ট শী জিনপিং-এর সঙ্গেও দুদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময় মতো তহবিল ছাড়, ঋণ চুক্তির শর্তাবলী সহজ করার জন্য চীনের প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুরোধ জানাই। জবাবে তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা হ্রাসে প্রচেষ্টা চালাবেন বলে আশ্বাস দেন। তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগে চীনের বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবেন বলেও জানান। চীনের প্রেসিডেন্ট ক্লাইমেন্ট এডাপশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের আর্থিক সহায়তায় কথা বিবেচনার আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও চীন জাতিসংঘে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এছাড়া বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করি। পরে চীনের প্রেসিডেন্টের দেয়া নৈশভোজে অংশ নিই।

তিনি বলেন, চীনের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট ছাড়াও কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী দুই নেতার সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়।

৪ জুলাই বিকেলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও-এর সঙ্গে তার বৈঠকে উভয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং চীন কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যে আরো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হন।

তিনি বলেন, সিপিসি নেতা সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে আশ্বাস দেন।

‘বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে সং তাও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে ‘নতুন চীন’ নামে প্রকাশিতব্য বইটি চীনা ভাষাতে অনুবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন সং তাও’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এনপিসি’র স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান লি ঝানসু’র সঙ্গে বৈঠকে তিনি দুই দেশের রাজনীতিবিদ এবং আইন প্রণেতাদের মধ্যে আরো ঘনিষ্ট যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

তিনি বলেন, ৩ জুলাই বিকেলে আমি চীনে বসবাসরত বাঙালিদের এক সংবর্ধনা সভায় যোগদান করি। এছাড়া চীনের প্রভাবশালী ইংরেজি ভাষার টিভি চ্যালেন সিজিটিএন আমার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তা প্রচার করে।
চীনে তার সফর শেষে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে যৌথ বিবৃতি গৃহীত হয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।