• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পুলিশ-র‌্যাব প্রধানের নেতৃত্বে বিশেষ কমিটি ও সেল

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৮  

গায়েবি মামলা, ধরপাকড়ে পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে পুলিশের খোঁজ-খবর তথ্য গণমাধ্যমে আসার পর পুলিশের শীর্ষ ৭০ কর্মকর্তার বদলি চেয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে নির্বাচনে তাদের সব ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখারও দাবি জানিয়েছে দলটি। তবে খোদ পুলিশের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং ও কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং সেল গঠন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এক সভায় ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং ও কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং সেল গঠন করা হয়েছে। ৪টি অঞ্চলে বিভক্ত করে ৬ ও ৮ সদস্যের পৃথক কমিটি ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়।

কমিটির প্রধান হলেন পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী আর সেলের প্রধান এলিট ফোর্স র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। পুলিশ সদর দফতর থেকে এসংক্রান্ত একটি অফিস আদেশও দিয়েছে পুলিশ।

অফিস আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, প্রত্যেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। এবারও কমিটি ও সেল গঠন করা হয়েছে। দেশের ৪টি অঞ্চলে ৪জন কর্মকর্তা মনিটরিং করবেন।

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গৃহিত সব পদক্ষেপ এ কমিটি ও সেলের মাধ্যমে সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, নির্বাচনকালে ফৌজদারি কর্মকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের ধরতে পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে। এতে করে নির্বাচন কমিশনের সায় রয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, কমিটির সহ-সভাপতি হলেন অতিরিক্ত আইজিপি (অ্যাডমিন অ্যান্ড অপারেশনস) মোখলেসুর রহমান ও সদস্য সচিব ডিআইজি (অপারেশনস) আনোয়ার হোসেন।

এছাড়াও কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত আইজিপি (ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) মইনুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত আইজিপি (টিঅ্যান্ডআইএম) ইকবাল বাহার ও এআইজি (অপারেশনস) সৈয়দ তরিকুল হাসান।

এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে গঠিত সেল সদস্যদের দেশের পৃথক পৃথক এলাকার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। র‌্যাব মহাপরিচালক(ডিজি) বেনজীর আহমেদ ও হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম রাজশাহী মেট্রোপলিটন, রংপুর মেট্রোপলিটন, রাজশাহী রেঞ্জ ও রংপুর রেঞ্জে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।

ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ও কাউন্টার টেররিজমের স্পেশাল অ্যাকশন ইউনিটের উপ-কমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে দেয়া হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন, ঢাকা রেঞ্জ ও ময়মনসিংহ রেঞ্জের দায়িত্ব।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত আইজিপি মীর শহীদুল ইসলাম ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলামকে খুলনা মেট্রোপলিটন, বরিশাল মেট্রোপলিটন, খুলনা রেঞ্জ ও বরিশাল রেঞ্জের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি হাবিবুর রহমানকে দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন, সিলেট মেট্রোপলিটন, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও সিলেট রেঞ্জের দায়িত্ব।

এলাকা ভিত্তিক সেলের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হচ্ছে-

নির্বাচন কমিশনের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রতিপালন।

নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর থেকে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান।

শান্তিপূর্ণ সুশৃংখলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনানুগ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিকভাবে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান।

বিভিন্ন সংস্থা (নির্বাচন কমিশন, সিভিল প্রশাসন, নির্বাচন অফিস, গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার) ইত্যাদির সঙ্গে সমন্বয় সাধন।

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে সম্পৃক্ত সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে আইনানুগ বিধি-বিধান প্রতিপালন পেশাদারিত্ব ও যথাযথ সর্তকতা অবলম্বন এবং যথাসম্ভব দলবদ্ধভাবে অবস্থান করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত নির্বাচন সংস্কার সংক্রান্ত তথ্য ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার ইউটিউব, ব্লগ এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট মন্তব্য বা ছবি আপলোডকরণ মনিটরিং ও বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট অপসারণের সংশ্লিষ্ট পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান।

গার্মেন্টস শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, ছাত্র সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্ব সহকারে মোকাবেলার ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদান এবং নজরদারি বৃদ্ধি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা প্রদান।

আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনানুগ পদ্ধতিতে সমাধানের গ্রহণের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান।

পুলিশ সদস্য কোন আচরণ কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা যাতে সামগ্রিকভাবে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি সমুন্নত থাকে।

নির্বাচন উপলক্ষে গৃহীত নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ পরামর্শ প্রদান।

অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ অন্যান্য রায়ট সামগ্রী স্টক যাচাই এবং প্রয়োজনে চাহিদাকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ পুলিশ সদর দফতর থেকে সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমন্বয় সাধন।

সহিংসতা নৈরাজ্য অপতৎপরতার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর নগর বিশেষ শাখা/জেলা বিশেষ শাখার নজরদারি বৃদ্ধি করাসহ আগাম তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদার করণের লক্ষ্যে পরামর্শ প্রদান।

অন্যদিকে সংসদ নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিসহ পুলিশকে ১২টি নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুরব্যাপী আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এক বৈঠকে প্রিজাইডিং অফিসারদের হয়রানি না করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) জানান, জাতীয় নির্বাচনকালেও ফৌজদারি মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পিছপা হবে না পুলিশ। এতে কোনও বাধাও দেখছেন না তারা। তাছাড়া এতে নির্বাচন কমিশনের বাধা দেবে না বলেও জানান তারা।

পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কারণে যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার ও হয়রানিমূলক মামলা না করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। তবে ফৌজদারি অপরাধ, অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার কাজ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ইসির কোনো বাধা নেই।