• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

দুই শিক্ষকের ধর্ষণে মাদরাসা ছাত্রী অচেতন, এক শিক্ষককে গণপিটুনি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর ২০১৯  

রাতে কোচিংয়ে আসা মাদরাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করে অচেতন অবস্থায় ফেলে গেছেন দুই শিক্ষক। বাড়ি না ফেরায় গভীর রাতে অভিভাবকেরা খোঁজে বেরিয়ে ছাত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।

ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা বালিকা দাখিল মাদরাসায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে।

ওই ছাত্রী তিনদিন মাদরাসায় না যাওয়ায় বৃহস্পতিবার এক শিক্ষক তার বাড়িতে খোঁজ করতে গেলে এই ঘটনা জানতে পারেন। এরপর ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকসহ এলাকাবাসী মাদরাসায় হামলা চালিয়ে অভিযুক্ত এক শিক্ষককে গণপিটুনি দেয়। অপরজন পালিয়ে যায়।

সংক্ষুব্ধরা মাদ্রাসা দফতরে তালা দিয়ে শিক্ষকদের প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে বিকেলে উপজেলা শীর্ষ প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্মকর্তারা ওই মাদরাসায় যান। 

মনিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার ঝাঁপা মোড়লপাড়ার দাখিল পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মাদরাসায় কোচিং ক্লাস করানো হয়।

গত সোমবার রাতে মাদরাসায় কোচিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন সহকারী মৌলভি নজরুল ইসলাম এবং কৃষি শিক্ষক তরিকুল ইসলাম। কোচিং ক্লাস তদারকির দায়িত্বে ছিলেন মাদ্রাসা সুপার শাহাদাৎ হোসেন। বৃষ্টির মধ্যে রাত সাড়ে আটটার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে রেখে বাকিদের ছুটি দেয়া হয়।

অভিযোগে জানা গেছে, এরপর শিক্ষক তরিকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম মাদরাসার একটি কক্ষের মধ্যে ওই ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে রক্তাক্ত ওই ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মাদরাসার বাইরে টয়লেটের পাশে ফেলে রেখে তারা চলে যায়।

পাশবিকতার শিকার ওই ছাত্রীর বাবা জানান, গভীর রাতে অচেতন অবস্থায় সেখান থেকে মেয়েকে উদ্ধারের পর লোকলজ্জার ভয়ে অতি গোপনে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর অবস্থার একটু উন্নতি হলে বুধবার মেয়েকে বাড়িতে আনা হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে ওই ছাত্রী এখনো অসুস্থ।

এদিকে ওই ছাত্রী কয়েকদিন মাদরাসায় না আসায় মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আবদুর রশিদ মুকুল বৃহস্পতিবার সকালে তার বাড়িতে গিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে ধর্ষণের ঘটনা জানতে পারেন। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে বেলা ১২ টার দিকে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে অফিস কক্ষে তালা দিয়ে সব শিক্ষককে  দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।

মাদরাসার সুপার শাহাদাত হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, দুই ঘণ্টা পর স্থানীয়দের সহায়তায় তারা মুক্ত হন। অবশ্য এ সময় বিক্ষুব্ধরা অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক নজরুলকে মাদ্রাসা থেকে ধরে নিয়ে মারপিট করে। এসময় সে কৌশলে পালিয়ে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। তবে অপর শিক্ষক তরিকুল ইসলাম আগেই পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে বিকেলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব হাসান, মণিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমি সুলতানা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার মাদ্রাসায় যান। কর্মকর্তারা এ সময় ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। রাতেই পুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, পালাক্রমে ধর্ষণের ঘটনায় ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

এএসপি রকিব হাসান জানান, এরই মধ্যে পুলিশ ওই দুই শিক্ষককে আটকের জন্য অভিযান শুরু করেছে।