• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দ্বীপ!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০১৯  

প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হলেও এর ব্যবহার বিশ্বজুড়ে ব্যপক হারে বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কাজে আমরা প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে থাকি। ব্যবহার শেষে বোতলগুলো ফেলে দেই, কেউ কেউ হয়তো হ্যান্ড ক্র‍্যাফটস তৈরি করে অব্যবহৃত বোতল দিয়ে। তাই বলে কি অব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল জমা করে আস্ত একটা দ্বীপ বানানো সম্ভব? অসম্ভব মনে হচ্ছে না? অসম্ভব এই কাজটিই সম্ভব করেন ৬৫ বছরের বৃটিশ এক শিল্পী, নাম তার রিচার্ট সোয়া আলিয়াস রিশি। তিনি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে একটি দ্বীপ তৈরি করেছেন মেক্সিকোর কানকুনে।

শুরুটা হয়েছিলো ১৯৭৭ সালে। জার্মানীর কোনো এক বারান্দায় বসে একটি সাধারণ ইউএফওর চিত্র আঁকছিলেন সোয়া। চিত্রটা ছিল এমন, পানির নিচে মস্ত বড় এক মাথা ও প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে ভাসছে একটি দ্বীপ। পেশায় তিনি চিত্রশিল্পী ছিলেন না মোটেও। সদ্যই পরিবারসহ ইংল্যান্ড থেকে জার্মানীতে এসেছেন একটি কোম্পানিতে রঙমিস্ত্রীর কাজ করতে। পেশায় একজন রংমিস্ত্রী হলেও তার শখ ছিলো প্রকৃতির ছবি আঁকা। প্রকৃতির বিভিন্ন ছবি এঁকে তিনি তা মানুষের কাছে বিক্রি করতেন। 

 

রিচার্ট সোয়া আলিয়াস রিশি

রিচার্ট সোয়া আলিয়াস রিশি

ছবি আঁকাকে এতই ভালোবেসে ফেলেন যে তাতে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পেট চালানোর একমাত্র অবলম্বন চাকরীটাই ছেড়ে দিলেন। আর্থিক সংকটে পড়ায় শুরু হলো সংসারে অশান্তি। এক পর্যায়ে সবরকম সম্পর্ক ছিন্ন করে সোয়াকে ফেলে বাচ্চাদের নিয়ে ইংল্যান্ড ফেরত চলে গেল তার স্ত্রী। বউ-বাচ্চার সঙ্গে বিচ্ছেদ রিশির জীবনকে আরো বেপরোয়া করে দিল। জীবনের সত্যিকার উদ্দেশ্য জানতে মরিয়া সোয়া তখন বিশ্বভ্রমন করার সিদ্ধান্ত নিলেন! টাকা আয়ের জন্য তিনি ইউরোপের রাস্তায় রাস্তায় ছবি আঁকতেন ও বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন।

সেই যে জার্মানীর বারান্দায় বসে চিত্রটি এঁকেছিলেন সোয়া, তা তার মাথা থেকে যায়নি একদমই। সেই চিত্রকে তিনি বাস্তবে রূপান্তর করার স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সান-পেড্রোর জিপোলাইট নামক বিচে তিনি সর্বপ্রথম তার ভাসমান দ্বীপটি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি অসংখ্য খালি প্লাস্টিকের বোতল নেটের ভেতর পুরে জড়ো করতে শুরু করলেন। কিন্তু জিপোলাইটের স্থানীয় লোকেরা বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারল না একেবারেই। 

 

রিচার্ট সোয়া আলিয়াস রিশি

রিচার্ট সোয়া আলিয়াস রিশি

তারা সোয়াকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলো। জিপোলাইট থেকে বিতাড়িত হয়েও সোয়া তার মাথা থেকে স্বপ্নকে বিতাড়িত করতে পারলেন না। ১৯৮৮ সালে পুনরায় তিনি তার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করলেন এবং সফল হলেন। আড়াই লাখ বোতল একত্র করে নেটের ব্যাগে ভরে, একটি বড় প্লাইউডকে এগুলোর উপর রাখেন ভাসিয়ে রাখার জন্য। এরপর তার উপর মাটি ফেলে তিনি তৈরি করেন তার স্বপ্নের দ্বীপ। মেক্সিকোর পুয়ের্টোর এভেনচার্সে তৈরি এই ভাসমান দ্বীপটি পর্যটকদের এক অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে গেলো।

কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয়! ২০০৫ সালের জুলাইয়ে, হারিকেন ‘এমিলি’র আঘাতে পুরোপুরি ধবংস হয়ে যায় দ্বীপটি। সোয়ার কাছে মনে হয়েছিলো তার বুঝি সব শেষ হয়ে গেল। কিন্তু তিনি হেরে যেতে চাননি। তাই ২০০৭ সালে, মেক্সিকোর কানকুনের ইসলা মোজেরেস সমুদ্রসৈকতে আবারো তার ভাসমান দ্বীপের কাজ শুরু করলেন। উদ্দেশ্য সৎ থাকলে যে কখনো কিছুর জন্য আটকে থাকতে হয় না, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ তিনি। তার উদ্যোগ ও পর্যটকদের আগ্রহ দেখে মেক্সিকান সরকার তাকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার এবং স্থানীয় লোকজন তাকে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য করে। 

 

রিচার্ট সোয়া আলিয়াস রিশি

রিচার্ট সোয়া আলিয়াস রিশি

এক বছরের মধ্যেই পুনরায় তৈরি হয়ে যায় তার দ্বীপ। ‘জয়জি’ নাম দিয়ে দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয় ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে। বর্তমানে, সোয়া রিশির স্বপ্নের এই দ্বীপে আছে তিনটি বেলাভূমি, সৌরবিদ্যুৎ, সৌরশক্তিচালিত ঝরনা এবং পানিসহ থাকার যাবতীয় সব উপাদান। মনভোলানো, পামগাছ ঘেরা সবুজ এই দ্বীপটি দেখে কেউ আসলে বিশ্বাসই করবে না যে এটি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বানানো!