• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

‘বিশ্বের সবচেয়ে মোটা শিশু’ ১০৬ কেজি ওজন ঝরালো যেভাবে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৯  

১৩ বছরের এক বিষ্ময়কর বালক। তার ওজন কত জানেন? ১৯১ কেজি। নিশ্চয়ই আপনার চোখ কপালে ওঠে গেছে! তার এই ওজন বাড়ার কারণ আপনাকে আরো বিষ্ময়কর করে তুলবে। ইনস্ট্যান্ট নুডলস, ঠান্ডা কোমল পানীয় এবং ফ্রাইড চিকেন খাওয়ার ফল এই ১৯১ কেজি ওজন। 

 

বসতেও কষ্ট হতো তার

বসতেও কষ্ট হতো তার

চিকেন ডায়েটের জন্য ইন্দোনেশিয়ার আর্য পারমানা একসময় বিশ্বের সবচেয়ে মোটা শিশু হিসাবে বিবেচিত হয়। মাত্র দশ বছর বয়স পর্যন্তই সে হাঁটাচলা করতে পারত। তখন সে স্কুলে যেত আবার পুকুরেও গোসল করত। তবে ধীরে ধীরে তার ওজন মারাত্মক আকার ধারণ করে। এরপর নড়াচড়া করাও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। 

 

খেয়ে আর ঘুমিয়েই কাটত তার সময়

খেয়ে আর ঘুমিয়েই কাটত তার সময়

এরপরই মাত্র দশ বছর বয়সে পৃথিবীর সবচেয়ে অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হিসেবে পরিচিত হয় আর্য। যদিও তার বাবা-মা ছেলেকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানোর অনেক চেষ্টা করতেন। তবে আর্য নাছোরবান্দা। তার পছন্দের খাবারগুলো খাবেই সে। আর্যর বাবা অ্যাডে সোমন্ত্রি বলেন, পাঁচ বছর বয়স থেকে তার ওজন বেড়েই চলছিল। সবসময় মিষ্টি খাবার, কোমল পানীয় ও নুডলস খেতে চাইতো সে। প্রতিদিন সে অন্তত বড় দুই প্লেট ভরে পাঁচ বার খাবার গ্রহণ করত। 

 

সামান্য নড়াচড়া করলেই হাঁপিয়ে উঠতো আর্য

সামান্য নড়াচড়া করলেই হাঁপিয়ে উঠতো আর্য

এর ফলে ক্রমেই সে এতটাই ভারী হয়ে পড়লো যে, পাঁচ মিটার হাঁটতেই তার শ্বাস বের হয়ে যেত। সঙ্গে অত্যাধিক পেটে ব্যথা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে শুরু করে সে। এরপর ডাক্তার দেখানো হলো। তাতক্ষণিক তাকে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তাররা। যদিও আর্যর বাবা-মা প্রথমে তাদের ছেলেকে ছুরির নীচে যেতে দিতে নারাজ ছিলেন। তবে তারা বুঝতে পারেন, অস্ত্রোপচার না করলে তাদের ছেলের জীবন আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। 

 

বাইরেও বের হতো না সে

বাইরেও বের হতো না সে

পশ্চিম জাভারের কারাভাংয়ে বসবাসরত আর্যর বাবা বলেন, শুরুতে আমরা আর্যকে অস্ত্রোপচার করতে চাইনি। অবশেষে, ডাক্তার আমাদেরকে আস্বস্ত করে, ছেলের কোনো ক্ষতি হবেনা। এছাড়াও ডাক্তার তাকে অপারেশন করার সমস্ত পদ্ধতিগুলো আমাদেরকে ভিডিওর মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন। এরপর এক পারিবারিক বৈঠকের মাধ্যমে আমরা সবাই একমত হয়ে আর্যর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। 

 

অস্ত্রোপচারের পর আমূল পরিবর্তন আসে তার জীবনযাত্রায়

অস্ত্রোপচারের পর আমূল পরিবর্তন আসে তার জীবনযাত্রায়

জাকার্তার ওমনি হাসপাতালে আর্যর পাঁচ ঘন্টা ব্যারিআট্রিক অস্ত্রোপচার হয়। মাত্র এক মাস পর সে প্রায় ৭০ পাউন্ড ওজন হারায়। এরপর ওজন কমতে থাকে। তবে ছোট্ট এই বালকের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসে। তার বাবা বলেন, প্রথমে আর্য খুব বিরক্ত হত। কারণ সে খেতে পছন্দ করত। তবে গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারির পরে তার পছন্দের খাবারগুলো খাওয়া বন্ধ করা হয়। এছাড়াও সে বেশি কিছু খেলেই বমি করত। অপারেশনের পর মাত্র সাত চামচ খাবারই তার জন্য যথেষ্ট ছিলো। 

 

এখন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হয় তাকে

এখন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হয় তাকে

জানেন কি? আর্যই পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি যার গ্যাস্ট্রিক-স্লিভ অপারেশন করানো হয়। এরপর থেকে তার খ্যাদ্য তালিকায় যুক্ত করা হয়, গ্রিলড মাছ এবং শাকসবজির কঠোর ডায়েট। এক ধাক্কায় ১০৬ কেজি ওজন ঝরিয়েছে সে। বর্তমানে তার ওজন ৮৫ কেজি। আর্য এখন গ্রিলড মাছ, শাকসবজি, স্যুপ এবং ফলের স্বাস্থ্যকর ডায়েট কঠোরভাবে মানে। এখন সে প্রতিদিন এক কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যায়।

 

১০৬ কেজি ওজন কমেছে তার

১০৬ কেজি ওজন কমেছে তার

এছাড়াও সে এখন বন্ধুদের সঙ্গে খেলা এবং নিয়মিত সাঁতার কাটায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আর্য একজন ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তার মতে, আমি এখন আগের চেয়েও বেশি খুশি থাকি। কারণ এখন আমি ফুটবল খেলতে পারি, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাই, দৌড়াতে পারি, নদীতে গিয়ে গোসলও করি। আগে অতিরিক্ত ওজনের কারণে আমি কোনো কিছুই করতে পারতাম না। 

 

খেলতে ও সাঁতার কাটতে পছন্দ করে সে

খেলতে ও সাঁতার কাটতে পছন্দ করে সে

আর্যর বাবা-মাও ছেলের সার্বক্ষণীক সঙ্গী। খেয়াল করেছেন তার সব ভালো মন্দ। তার মা বলেন, সে আগের চেয়েও অনেক শান্ত আর প্রফুল্ল থাকে। বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল ও ভলিবল খেলতে পছন্দ করে আর্য। আগের থেকেও সে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তবে বিপত্তি বেধেছে তার শরীরের ঝুলে যাওয়া অতিরিক্ত চামড়াগুলো নিয়ে। শরীরের যেসব স্থান থেকে আর্যর ওজন কমেছে সেসব স্থানের চামড়া ঝুলে গিয়েছে। 

 

বাবা-মায়ের সঙ্গে আর্য

বাবা-মায়ের সঙ্গে আর্য

তার বুক, পেট ও বাহুর ঝুলে যাওয়া চামড়াগুলো পরীক্ষা করে চিকিৎসক তা অপসারণের প্রস্তাব দিয়েছেন। বান্দুংয়ের হাসান সাদিকিন হাসপাতালে আর্যর ঝুলন্ত চামড়া অপসারণের যাবতীয় পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ডাক্তাররাও তাকে অপারেশন করার আশা ব্যক্ত করছেন। যদিও আর্য শরীর ঠিক রাখতে নিয়মিত অনুশীলন করেন, ফুটবল এবং ব্যাডমিন্টন খেলেন। আগের চেয়ে এখন সে বেশ শক্তিশালী।

সূত্র: মেইল অনলাইন