• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মানিকগঞ্জে তরমুজ বিক্রি পাইকারিতে পিস, খুচরায় কেজিদর

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০২২  

চৈত্র মাসের খরতাপে জনজীবন অতিষ্ঠ। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে প্রচুর চাহিদা রয়েছে রসালো ফল তরমুজের।এ সুযোগকে পুঁজি করে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা আকারে নয় ওজনে বিক্রি করছেন তরমুজ। এতে প্রতিদিন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ।
রমজানকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর অসাধু খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে কেজিদরে বিক্রি করছেন তরমুজ। আর এতে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষরা। শহর নয় প্রত্যন্ত লোকালয়েও ছোট ছোট ফলের দোকানগুলেতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ অথচ ওই একই তরমুজ পাইকারি আড়ৎ থেকে কিনে আনা হচ্ছে ১৫ টাকা কেজিদরে এমনটাই বললেন পাইকাররা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জসহ সাতটি উপজেলায় এখন মৌসুমি ফল তরমুজ নিয়ে কথার শেষ নেই। কেউ উপহাস করছেন আবার কেউ কেউ তারিফ করছেন এই তরমুজের দাম নিয়ে। জেলায় দুটি ফলের আড়ৎ রয়েছে আর ওই আড়ৎগুলোতে পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ, কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে কেজিদরে বিক্রি করছেন তরমুজ। প্রশাসনিকভাবে তেমন নজর না থাকায় এ ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি করতে পেরেছে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এমনটাই অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের।

ঘিওরে ফল কিনতে এসে বাগ-বিতণ্ডায় জড়ালেন আতোয়ার নামে এক ক্রেতা। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, গত বছর থেকে দেখছি মৌসুমের প্রথম দিকে কেজিতে তরমুজ বিক্রি করতে অথচ তাদের যদি বলি তোমরা কিভাবে আড়ৎ থেকে তরমুজ কিনেছো এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা শুরু করে। পরে আমি প্রতিবাদ করায় খুচরা ব্যবসায়ী বললো আপনার কাছে বিক্রি করবো না তরমুজ।  

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তরমুজ কিনতে এসে ক্ষোভ ঝারলেন আরিফ নামে এক ক্রেতা, কেজিতে কোনোদিন তরমুজ বিক্রি হয় জানতাম না, আমি প্রথমে দোকানে গিয়ে দাম কত বলেছি তখন দোকানি বলে প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ টাকা। পরে একটি তরমুজ কিনলাম যার ওজন প্রায় ৬ কেজির মতো। আমরা ক্রেতারা কিছুই বলতে পারবো না, তবে এই জায়গাটাতে প্রশাসনের নজরদারি আনতে হবে তা না হলে এ ধরনের প্রতারণমূলক ব্যবসা তারা আরও করবে।

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খুচরা ফল ব্যবসায়ী সোরহাব মিয়া বলেন, আমরা তরমুজ কিনে আনি পিস হিসেবে অথচ মাঝে মাঝে কেজিদরে বিক্রি করি। কারণ একসঙ্গে তরমুজ কিনে আনলে সব কয়েকটি তরমুজ বিক্রয় করতে পারি না। অনেক তরমুজ পচে যায়, এ কারণে কেজিদরে বিক্রি করলে ব্যবসায় কিছুটা লাভ থাকে।

সদর উপজেলার ভাটবর আড়তের মেসার্স দিদার ফল ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী আব্দুল আলীম বলেন, আমি প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করি জেলার বিভিন্ন পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। আমার এই আড়তে ৫ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। এই তরমুজ ওজনে ধরলে কেজিতে দাড়ায় ১৮ টাকা কিংবা এরও একটু কম। কাঁচা ফল হওয়াতে পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে সে কারণে এই তরমুজ খুচরা বাজারে এক শত থেকে দের শতাধিক টাকা বিক্রি করার কথা অথচ ওই তরমুজ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি কিংবা আড়াই থেকে তিন শত টাকায় বিক্রয় করছে তারা (খুচরা ব্যবসায়ীরা)। আমরা যেহেতু তরমুজ বিক্রি করে থাকি পিস হিসেবে আর খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজিদরে। তাই বিক্রেতা নিজেরা লাভবান হলেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মানিকগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন নবী তুলিপ বলেন, প্রতিটি তরমুজ আড়তে বিক্রয় হচ্ছে পিস হিসেবে কিন্তু ওই একই তরমুজ খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে কিছু কিছু জায়গাতে বিক্রি হচ্ছে কেজিদরে। সাধারণ ক্রেতারা প্রতি পিস তরমুজ ক্রয় করছে তিন থেকে চার গুন অতিরিক্ত টাকা দিয়ে। প্রশাসন দ্রুত অভিযান না চালালে অসাধু ব্যবসায়ীরা এই রকম প্রতারণা আরও করবে বলেও জানান তিনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে একটি নির্দেশনা এসেছে মৌসুমি ফল তরমুজ পাইকারি আড়ৎ থেকে যেভাবে ক্রয় করবে ঠিক একইভাবে খুচরা বাজারে বিক্রয় করতে হবে। কেউ যদি কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটায় আর এই অভিযোগ আমাদের পযর্ন্ত আসে তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।