• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, টাকা দিয়ে মীমাংসা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০২২  

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এক শিশুকে (৯) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে জরিমানা ও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে এমন কাজ করবে না মর্মে তওবা করিয়ে এ ঘটনার মীমাংসা করেছেন স্থানীয় মাতবররা। সম্প্রতি উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে গ্রাম্য সালিসে অভিযুক্তকে জরিমানা করেন মাতবররা। সালিসে ভুক্তভোগী পরিবারকে জোরপূর্বক এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। গ্রাম্য সালিসে অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ (৬০) দোষ স্বীকার করে নিলে তাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ করবে না মর্মে তওবা করানো হয়। এ সময় স্থানীয় ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার খোরশেদ আলম, স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াসিন মোল্লা, শুকুর শিকদার, আব্দুল মজিদ, খোরশেদ আলী, ফরিদসহ ২০-২৫ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ হাটিপাড়া এলাকার মৃত উসমান শিকদারের ছেলে। সে পেশায় একজন কৃষক।

আরও জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ রাতে সদর উপজেলার হাটিপাড়া এলাকার মৃত চাঁনু শিকদারের বাড়িতে এই সালিস বসে। ঘটনার সাত দিন অতিবাহিত হলেও ভুক্তভোগী পরিবার কোন প্রকার আর্থিক সহায়তা পায়নি। নির্যাতিতা ওই স্কুল ছাত্রী জেলা সদরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। সে মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী।

নির্যাতিতা ওই শিশু মা জানান, গত ১৫দিন আগে বাড়িতে ডেকে নিয়ে তার মেয়েকে ধর্ষণ করে প্রতিবেশি আব্দুল মজিদ। এলোমেলো অবস্থায় মেয়ে বাড়ি ফিরে আসলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সব বলে দেয় শিশুটি। এরপর বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্তের (আব্দুল মজিদ) সাথে কথা বলতে গেলে আব্দুল মজিদের মেয়ে নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখায়।

শিশুটির বাবা প্রবাসে থাকায় অভিভাবক হিসেবে তার কাকা বিষয়টি সমাজের মুরুব্বিদের জানালে হঠাৎ করেই সালিসে বসার দিন ধার্য হয়। তবে তিনি কোন টাকা-পয়সা পাননি বলেও জানান তিনি।

ভুক্তভোগী মেয়ের মা আর্তনাত করে বলেন, ‘আমার প্রতিবন্ধী মেয়ের এতো বড় ক্ষতি করল। ওর ভবিষ্যত কি হবে। কিভাবে মানুষের কাছে মুখ দেখাবে। এই মেয়েকে বিয়ে দিব কিভাবে।’ এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।

এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে স্থানীয় ১নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘এই কাজটা মোটেও ঠিক হয় নাই। স্থানীয় মেম্বার হিসেবে কোন পক্ষ আমাকে কিছুই জানায়নি। জানলে আমি এমনটা করতে দিতাম না। আইনের মাধ্যমে যা করার তাই করতাম। মাঝখান থেকে ভুক্তভোগী পরিবার হয়রানির শিকার হলো।’

হাটিপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার খোরশেদ আলম বলেন, ঘটনার পর সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিসের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। আমাদের গ্রামের বিষয় আমরা মীমাংসা করেছি। আমরা আইন জানি, এখানে দোষের কিছু নেই। সদর থানার প্রারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। তবে যদি ধর্ষণের ঘটনায় গ্রাম্য সালিসে জরিমানা করা হয়, তবে তা সঠিক হয়নি। আমরা অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।