• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

কোনো প্রশ্ন ছাড়াই আল্লাহর হুকুম মানা যে কারণে জরুরি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২০  

আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ আপনার স্রষ্টা, আপনি তাঁর সৃষ্টি। আপনার বিবেক-বুদ্ধি এবং তাঁর জ্ঞান ও হেকমতের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্যতা নেই। আপনার বিবেক-বুদ্ধি সীমাবদ্ধ, তাঁর জ্ঞান ও হেকমত অসীম। যখন সেই স্রষ্টা এবং মুনিব বলেন যে, অমুক কাজ কর। আর আপনি বলেন, আমি কেন এ কাজ করব? যখন আপনি আপনার চাকরের কোনো প্রশ্ন বরদাশত করেন না। তখন আল্লাহর কথার ওপর কোনো প্রশ্ন করতে আপনার লজ্জা হয় না? আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তাকে, আপনার মালিককে, আপনার মুনিবকে, আপনার প্রতিপালনকারীকে আপনি জিজ্ঞাসা করছেন যে, এ আদেশটি কেন দিয়েছেন? এটি চরম লজ্জাহীনতার বিষয় এবং আত্মপরিচয় সম্পর্কে চরম অজ্ঞতার পরিচায়ক। (১ম পর্বের অংশবিশেষ)

২য় পর্ব...

কেন প্রশ্ন বুদ্ধিহীনতার প্রমাণ :

উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তায়ালার কোনো হুকুম হেকমত থেকে খালি নয়। অবশ্যই তাতে মানুষের উপকারিতা ও কল্যাণ নিহিত আছে। কিন্তু সেই উপকারিতা ও কল্যাণ কি? তা তোমার বুঝে আসবে এটা জরুরি নয়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (সা.) আদেশের সামনে বিনা দ্বিধায় আত্মসমর্পণ ছাড়া কোনো মানুষ মুমিন হতে পারে না। যদি প্রতিটি বিধানের কল্যাণ ও উপকারিতা কিংবা ক্ষতি ও অপকারিতা তোমাদের বুঝে আসত এবং ভালো ও মন্দের পার্থক্য তোমরা বুঝতে তাহলে আল্লাহ তায়ালার রাসূল পাঠানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না, আকাশ থেকে কোনো কিতাব অবতীর্ণ করার প্রয়োজন ছিল না এবং দুনিয়াতে ওহির ধারাবাহিকতা চালুর প্রয়োজন ছিল না। এসব এ জন্যই করা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা জানেন তোমাদের বিবেক-বুদ্ধি অসম্পূর্ণ এবং অনেক সীমাবদ্ধ। আর তাই তো একজনের বিবেক-বুদ্ধি এক রকম বলে, অন্যজনের বিবেক-বুদ্ধি আরেক রকম বলে। একজনের মাথায় যেটা আসে, অন্যজনের মাথায় সেটা আসে না। এগুলো বিবেক-বুদ্ধির সীমাবদ্ধতার কারণেই হয়ে থাকে। বিবেক-বুদ্ধির ক্ষমতা যেখানে শেষ হয়, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় হুকুম সেখানে পাঠান। এ কারণেই কোরআন বলেছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা কোনো মুমিন নারীর সে বিষয়ে কোনো ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না।

বর্তমান নেতাদের অবস্থা :

আজকাল নেতাদের অবস্থা উল্টে গেছে। নেতা এবং লিডার তাকেই বলা হয়, যে একটি পুরো জাতিকে কিংবা একটি দলকে টেনে তুলবে, তাদেরকে সঠিক পথে চালনা করবে। কারণ নেতাই সঠিক পথ কোন্টি তা জানে। কিন্তু আজকালকার নেতা এবং লিডাররা উল্টো জনগণকে ফলো করে। জনগণ যেটাতে খুশি হয় এবং যেটা করলে জনগণের ভোট পেতে পারে, অনেক সময় সেটা সঠিক নয় জেনেও তাদের সমর্থন ও সন্তুষ্টির জন্য সেটা করে।

হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তিতে নমনীয় হওয়ার কি কারণ ছিল :

ইতিহাসের পাতা থেকে হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তির বিবরণ পাঠ করলে দেখবেন, মুসলিম বাহিনীর যথেষ্ট সামরিক শক্তি এবং আল্লাহর রাহে জীবন দানের জন্য সাহাবায়ে কেরামের পরম উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকা সত্তেও সন্ধির শর্তাবলীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থান নমনীয় ছিল। এটা কেন? আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম ছিল, বাহ্যিকভাবে সন্ধির শর্তাবলীর বিষয়ে নতজানু ও নমনীয় অবস্থান হলেও সন্ধি করে নাও। যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে খুশি করতে চাইতেন তা হলে বলতেন, আসো লড়াই করি। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার তখনকার হেকমতের তাকাযা ছিল সন্ধি হয়ে যাক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সাহাবির কথা রদ করে দিয়েছেন। হজরত উমর ফারুক রাদি. এর মতো ব্যক্তি প্রচণ্ডভাবে হতাশ ছিলেন। হায়, আল্লাহ একি সন্ধি হচ্ছে? আমরা কেন সন্ধি চুক্তিতে এতটা নতজানু হচ্ছি? একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যান, একবার হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদি. এর কাছে যান আর নিজের হতাশার কথা ব্যক্ত করেন। কিন্তু যেহেতু আল্লাহর রাসূল ওহির মাধ্যমে এভাবেই সন্ধি চুক্তি করার আদেশ পেয়েছিলেন, তাই তিনি হজরত উমর রাদি.-কে ধমকে দেন।

শেষ কথা:

মোটকথা, আলোচ্য আয়াত আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, যখন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (সা.) কোনো আদেশ আসবে, তা আমাদের বুঝে আসে না বলে তার বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না এবং সে বিষয়ে হৃদয়ে কোনো সংশয় ও সন্দেহকে স্থান দেয়া যাবে না। সঠিক রাস্তা তাই যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ করেন।