• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

যে কারণে ইউনুস (আ.)-কে খেলো মাছ এবং জীবিত থাকার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২০  

হজরত ইউনুস (আ.) যে কত গুরুত্বপূর্ণ একজন নবী ছিলেন সেটা বোঝাতেই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে তার নামেই একটি সূরা নাজিল করেছেন। যার নাম সূরা ইউনুস। হজরত ইউনুস (আ.) এর  কথা পবিত্র কোরআনে ৬টি সূরার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে।

সূরা ইউনুস এর ৯৮ নম্বর আয়াতে তার নাম ইউনুস। সূরা আম্বিয়ার ৮৭ নম্বর আয়াতে তার নাম যুন-নূন এবং সূরা ক্কলমের ৪৮ নম্বর আয়াতে তার নাম ছাহেবুল হুত বলা হয়েছে। নুন ও হুত উভয়ের অর্থ মাছ। যুন-নূন ও ছাহেবুল হুত অর্থ মাছওয়ালা।

আমরা সবাই জানি ইউনুস নবীকে একটি ঘটনার জন্য আল্লাহ তায়ালা শাস্তি দিয়েছিলেন এবং মাছের পেটে অনেক দিন থাকতে হয়েছিল। ইউনুস নবীর মাছের পেটে জীবিত থাকার বিষয়টি বিজ্ঞান কি বলে?

চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সে সম্পর্কে-

আমরা অনেক সময় বিপদে পড়লে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাই। ইউনুস নবী মাছের পেটে থাকা অবস্থায় দোয়া পড়েছিলেন। যেই দোয়াটার কারণে তাকে সেই মাছের পেট থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। তিনি যদি এই দোয়াটি না পড়তেন তাহলে তাকে কেয়ামত পর্যন্ত সেই মাছের পেটে থাকতে হত। সেই দোয়াটি পড়ার মাধ্যমে আমরাও বিপদ থেকে বাঁচতে পারি।

হজরত ইউনুস (আ.) আল্লাহর সম্মানিত একজন নবী ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে আশূরীয়া বাসীদের হেদায়েতের জন্য ইরাকে যেতে নির্দেশ দেন। সে হিসেবে তিনি ইরাকে গিয়ে আশূরীয়া বাসীদের আল্লাহর পথে আনার চেষ্টায় সংগ্রামে লিপ্ত হন। বর্তমান ইরাকের মুসলিম নগরীর নিকটবর্তী নীনাওয়া জনপদের অধিবাসীদের হিদায়াতের জন্য ইউনুস (আ.) এর আবির্ভাব হয়েছিল।

তিনি তাদের তাওহীদের দাওয়াত দেন এবং ঈমান ও সৎকর্মের প্রতি আহ্বান জানান। তবে তারা তার প্রতি অবাধ্যতা প্রদর্শন করে। বারবার দাওয়াত দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর আল্লাহর হুকুমে তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যান। ইতোমধ্যেই তার কর্মের ওপর আজাব নাজিল হওয়ার পূর্বাভাস দেখা দিল। জনপদ ছেড়ে দেয়ার আগে তিনি বলে গিয়েছিলেন তিনদিন পর সেখানে গজব নাজিল হতে পারে। তারা ভাবলো নবী কখনো মিথ্যা বলে না। ফলে ইউনুসের কওম ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তওবা করল। হজরত ইউনুস (আ.) একমাত্র কওম যারা আযাব আসার পূর্বাভাস দেখেই খুব দ্রুত ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন।

তবে আরো অন্যান্য নবীর উম্মতেরা এটা করেনি। ফলে তাদের কঠিন আজাবের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এটাকেই পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘অতএব কোনো জনপদ কেন এমন হলো না যে, তারা এমন সময় ঈমান নিয়ে আসতো। যখন ঈমান আনলে তাদের উপকারে আসতো। কেবল ইউনুসের কওম ব্যতীত। যখন তারা ঈমান আনল, তখন আমরা তাদের ওপর থেকে পার্থিব জীবনের অপমানজনক আজাব তুলে নিলাম এবং তাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জীবন উপভোগ করার অবকাশ দিলাম।’ অত্র এই আয়াতটিতে ইউনুসের কওমের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে ওদিকে যখন ইউনুস (আ.) জানতে পারেন তার কওমের ওপর আজাব আসেনি। তিনি তখন ভাবতে থাকেন আমি যদি ফিরে যাই তখনকার প্রথা অনুযায়ী মিথ্যাবাদীর শাস্তি হিসেবে তাকে হত্যা করা হবে। নিজের জনপদে ফিরে না গিয়ে অন্যত্র হিজরতের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন, এই সময় আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষা করাটাই যুক্তিযুক্ত ছিল। তবে তিনি তা করেননি।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, আর ইউনুস ছিল পয়গম্বরদের একজন। যখন সে পালিয়ে যাত্রী বোঝাই নৌকায় গিয়ে পৌঁছালো। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ তায়ালার হুকুম না মেনেই অন্যত্র হিজরত করলেন। পথের মধ্যে সমুদ্র পড়লে তা পাড়ি দেয়ার জন্য একটি জাহাজে উঠেন। জাহাজটি মাঝ সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে পড়ে। তখন জাহাজের চালক ধারণা করে যে, জাহাজে কোনো অপরাধী আছে। যে কারণে জাহাজটি বিপদে পড়েছে। পরে তখনকার নিয়ম অনুযায়ী অপরাধীকে চিহ্নিত করতে লটারির ব্যবস্থা করা হয়। লটারিতে বারবার হজরত ইউনুস (আ.) নাম উঠে। অতঃপর লটারিতে অকৃতকার্য হলো। তখন বাধ্য হয়েই তাকে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে জাহাজটি বিপদ থেকে রক্ষা পায়। তখন আল্লাহর আদেশে বিরাট একটি মাছ তাকে গিলে ফেলে। তবে আল্লাহ তায়ালার রহমতে ওই মাছ ইউনুস (আ.)-কে হজম করতে সমর্থন হয়নি। ইউনুস (আ.) মাছের পেটে কতদিন ছিলেন তা নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত।

যেভাবে হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেলেন :

অতঃপর যদি সে আল্লাহর গুণগানকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হত। তাহলে সে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতো। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে থাকা অবস্থায় যে দোয়াটি পড়েছিলেন সেটি হচ্ছে-

لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন।’

অর্থ: আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী। (সূরা : আল আম্বিয়া, আয়াত : ৮৭)।

নীল তিমিকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী। নীল তিমির জিহ্বার ওজন একটি হাতির ওজনের সমান। এর হৃৎপিণ্ড একটি প্রাইভেটকারে সমান। তাহলে ভাবুন তো এর ওজন কত হবে। এদের ওজন প্রায় ২০০ টনের মতো যা কিনা আফ্রিকার পূর্ণবয়স্ক চল্লিশটি হাতির সমান। এর মুখের মধ্যে প্রায় ২০ জন মানুষ আরামে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন তিমির জন্য একটি মানুষকে গিলে খাওয়া এত বড় কিছু ব্যাপার নয়। তিমি সমুদ্রে পানির নিচে থাকলেও সেখানে শ্বাস গ্রহণ করতে পারে না। শ্বাস নিতে পানির উপরে উঠে আসতে হয় একে। স্তন্যপায়ী এ প্রাণী পানিতে বসবাস করলেও এরা মানুষের মতোই বাতাসে শ্বাস নেয়। এজন্য কিছুক্ষণ পর পর এদের পানির উপরে ভেসে উঠতে হয়। সুতরাং এরা যদি পানির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে তো এরা দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। এরা কম করে হলেও ৩০ মিনিট পর্যন্ত শ্বাস না নিয়ে থাকতে পারে। মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় অর্থাৎ আপনি চান বা না চান ফুসফুস নিজের মতো স্বাভাবিক ভাবেই কাজ চালিয়ে যায়। তবে তিমির শ্বাস প্রশ্বাস সংক্রিয় নয় সেটা তাদের সচেতন সিদ্ধান্তের বিষয় হওয়ায় তিমি যদি ঘুমিয়ে পড়ে এবং সময়মতো না জাগে তাহলে দম আটকে মারাও যেতে পারে। এজন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা তার অপূর্ব সৃষ্টি তিমিকে বিপদ থেকে বাঁচার জন্য অন্যভাবে সৃষ্টি করেছেন। তিমির মস্তিষ্ক অর্ধেক ঘুমায়। আর বাকি অর্ধেক ঘুমায় পরের পালায়। তাদের অর্ধেক মস্তিষ্ক সবসময় জেগে থাকে তাই তারা শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ঘুমের মধ্যেও প্রয়োজনীয় সময় ভেসে ওঠে।