• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

মাশরাফির প্রেরণায় তাসকিন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০১৮  

স্বপ্নের মতো ছিল ক্যারিয়ারের শুরুটা। চার বছর আগে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নিয়ে নজরে আসেন তাসকিন আহমেদ। এরপর সংক্ষিপ্ত ফরমেটের ক্রিকেটে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন এই পেসার। বাংলাদেশ দলে এখন আর খেলার সুযোগ মিলছে চোটের কারণে। গত সাত মাস ধরে এভাবেই চলছে তার ক্যারিয়ার।

এই খারাপ সময়েও মনোবল হারাচ্ছেন না তাসকিন। আগামী বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের আগেই মাঠে ফিরতে চান ২৩ বছর বয়সী এই পেসার। মাশরাফি বিন মর্তুজাকে যে বড় প্রেরণা হিসেবে মানছেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিশ^কাপ ভাবনা নিয়ে তাসকিনের সঙ্গে কথা বলেছেন হিমু আক্তার।

এত গতি আপনার বলে, কিন্তু হঠাৎ করে কী এমন হলো যে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন?

তাসকিন- আসলে বুঝতে পারছি না, কী হলো। এই বছরটা অনেক বাজে কেটেছে। ছয়বার ইনজুরিতে পড়লাম। হাত কাটল, ব্যাকপেইন- সব মিলিয়ে অনেক চোট আর অসুস্থতার মধ্যেই কাটছে আমার সময়।

সামনে বিশ্বকাপ, লক্ষ্য থাকবে বিশ্বকাপ দলে যেন জায়গা করে নিতে পারি। এ জন্য যা যা করা দরকার, চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাকি সব আল্লাহর ইচ্ছা। আমি বিশ্বাস করি, সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহ চাইলে আবার সব ফিরে পাব।

জাতীয় দলের খেলা চলছে, আপনি নেই, হতাশা কাজ করছে নিশ্চয়ই?

আসলে হতাশা তো বটেই। দেশের হয়ে খেলার মতো শান্তি অন্য কিছুতে নেই। কত দিন ধরে ইনজুরিতে ভুগছি। সত্যি কথা বলতে, এই সময়টা একজন নিয়মিত খেলোয়াড়ের জন্য কষ্টকর। আমি ক্যারিয়ারের শেষ পাঁচ বছরের শুরুর চারটা বছর খুব ভালো খেলেছি।

কিন্তু শেষ বছরটা আমার পারফরম্যান্স, ইনজুরি- সব মিলিয়ে খুব খারাপ ছিল। যাক, এটা আমি জীবনের একটা শিক্ষা হিসেবে নিয়েছি। কারণ মাশরাফি ভাইয়ের জীবনেও অনেক কঠিন সময় গিয়েছে। সেখান থেকে তিনি কামব্যাক করছেন। তিনি যেহেতু পেরেছেন, আমিও তার একজন অনুসারী হিসেবে কামব্যাক করতে পারব ইনশাহ আল্লাহ। আর খুব দ্রুতই খেলায় ফিরতে পারব বলে আশা করি।

মাশরাফির সঙ্গে কথা হয়?

আমি সুযোগ পেলেই মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। সত্যি কথা বলতে, আমি যখন ইনজুরিতে পড়ি, তখন খেলা থাকে। সবাই যার যার খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু এর মাঝে যখন ভাইয়ার (মাশরাফি) সঙ্গে কথা হয় তখন সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা হয়- মানসিক শক্তিটা পাওয়া যায়।

মাশরাফির কোনো উপদেশ?

উনি তো আমাকে অনেক কিছু বলে চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করেন। উনি সব সময় চাপমুক্ত থাকতে বলেন, মনোবল হারাতে না করেন। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে। ভেঙে পড়লে আরও বেশি সমস্যায় পড়তে হবে। তিনি বলেন, ‘তুমি এখনই যদি ভেঙে পড়ো তাহলে কীভাবে হবে! তোমার এখনো অনেক পথ বাকি।’ আল্লাহ চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে। আমি দেশের সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি, আল্লাহ যেন আমার ওপর রহমত করেন। আবার যেন দেশের হয়ে খেলতে পারি।

ফিটনেস ঠিক রাখতে কী কী করছেন?

ফিজিওর সঙ্গে কথা বলে ফিটনেস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কিছু ব্যায়াম আছে, সেগুলো করছি। দেড় থেকে দুই সপ্তাহের মতো লাগবে ফিট হতে। ডাক্তার বলেছেন, কিছুদিনের মধ্যে আশা করি সুস্থ হয়ে যাব। খেলতে পারব আবার। নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছি।

এখন সময় কীভাবে কাটে?

খেলা ছাড়া সময় পার করাটা খুব কঠিন। কিন্তু বাসায় আমার ছোট বাবু তাসফিন। ওকে নিয়েই থাকি এখন। ওকে অনেক সময় দেওয়া হয়। তা ছাড়া বাবা-মাকে সময় দিই। আর বেশি খারাপ লাগলে মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাই।

জাতীয় লিগে মোটামুটি রান পেয়েছেন। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও নজর দিচ্ছেন নিশ্চয়ই।

ইনজুরি থেকে ফিরেই জাতীয় লিগে পাঁচটা উইকেট পেলাম। আবার মোটামুটি ভালো করলাম। ব্যাটিংটাও ভালো হলো। ব্যাটিং নিয়ে বললে আসলে, মাঝেমধ্যে একটু নকিং অনুশীলন করি। যতটুকু উন্নতি করা যায় আর কি। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি টাচে থাকতে। আসল কথা, উন্নতির কোনো শেষ নেই।

কোচ স্টিভ রোডসের সঙ্গে কথা হয়?

এখন পর্যন্ত তেমন কথা হয়নি। তবে আমি জাতীয় লিগের শেষ ম্যাচে যখন পাঁচ উইকেট পেয়েছিলাম তখন আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া কোনো সমস্যা নিয়ে এখনো কথা বলা হয়নি।

প্রথম বাবা হয়েছেন, অনুভূতিটা বলুন।

বাবা হওয়ার অনুভূতিটা একদম অন্য রকম। এটার ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন। সহজ করে বললে খুবই ভালো একটা অনুভূতি। আর এত হতাশার মাঝে ওর (ছেলে তাসফিন) মুখটা দেখলেই সব দুঃখ হালকা হয়ে যায়।

অনেক সময় নানা মহল থেকে কটূ মন্তব্য শুনতে হয় খেলোয়াড়দের। ক্যারিয়ারে তা কতটা প্রভাব ফেলে?

সত্যি বলতে নানা সময় নানা নিউজ নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়। এগুলো নিয়ে আর কী বলব। কিন্তু একজন ক্রিকেটারদের জন্য এটা খুব খারাপ ব্যাপার। শত ভালোর মাঝে এই ছোট ছোট কথাগুলো ক্যারিয়ারে বাজে প্রভাব ফেলে।

ছেলের বাবা হওয়ার পর কেউ কেউ অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করেছেন ফেসবুকে। তাদের উদ্দেশে কী বলবেন?

এটা আসলে আমার জন্য ছিল অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। তারা কেমন মানুষ, কতটা তাদের কমনসেন্স, তাদের জন্য আমার করুণা হয়। তাদের নিয়ে যদি কেউ এমন আচরণ করত, ওই ভোগান্তি তাদের কেমন লাগত!

অন্য প্রসঙ্গে যাই। চলমান সিলেট টেস্টে এক পেসার নিয়ে খেলা কতটুকু যৌক্তিক মনে হয়?

আসলে এটা আমার বলা কঠিন। হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট উইকেট দেখে ভাবছিল যে একজন পেসারই যথেষ্ট। আর আমাদের স্পিনাররাও ভালো করছে। ম্যানেজমেন্টকে অনেক দিক ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো ভাবনা?

বিশ্বকাপ আমার স্বপ্ন। আমি চাই আল্লাহ পাক যেন আমার এই স্বপ্নটা পূরণ করেন। একটা বিশ্বকাপ তো খেলেছি। ইনশাল্লাহ আসছে বিশ্বকাপও খেলা হবে। সবাই দোয়া করবেন আমরা জন্য।