• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

থাইরয়েড ক্যান্সার

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

থাইরয়েড গ্রন্থির কোনো অংশের কোষ সংখ্যা অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেলে তাকে থাইরয়েড ক্যান্সার বলে। থাইরয়েড গ্রন্থি একটা হরমোন গ্রন্থি। গলার সম্মুখভাগের নিচের দিকে এর অবস্থান। এই থাইরয়েড গ্রন্থি যদি কোনো কারণে বড় হয়, আমরা তাকে গলগণ্ড বলি। থাইরয়েড গ্রন্থির কোনো অংশে টিউমারের মতো ফুলে উঠলে বলা হয় থাইরয়েড নোডিউল। এসব থাইরয়েড নোডিউলের শতকরা ১ ভাগ থেকে থাইরয়েড ক্যান্সার হতে পারে। অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি বা এর অংশ বিশেষ ফুলে ওঠা ক্যান্সার নয়।

থাইরয়েড ক্যান্সারের কারণ

গলা বা থাইরয়েডের ওপর রেডিয়েশন দিলে বা পড়লে এই ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। কখনও অন্য স্থান থেকে ক্যান্সার সেল এসে থাইরয়েড ক্যান্সার হতে পারে আবার জীবনধারার স্বাভাবিক গতিতেও এই ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার প্রবণতা বাড়ে, তবে যে কোনো বয়সেই এই রোগ হতে পারে। এই রোগে নারীরাই বেশি আক্রান্ত হন। রেডিয়েশনের জন্য থাইরয়েড ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন ধরনের অদৃশ্য শক্তি যেমন- রেডিও, টেলিভিশন ও মোবাইল ফোন টাওয়ারের অস্বাভাবিক পরিমাণ মাইক্রোওয়েভ থাইরয়েড ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।

থাইরয়েড ক্যান্সারের লক্ষণ

-গলার সম্মুখভাগে ফুলে ওঠা। ফোলা অংশটা বেশ শক্ত হয়।

-এক বা একাধিক টিউমার হতে পারে। উভয় পাশে টিউমার হতে পারে, আশপাশের লিম্ম্ফ নোডগুলো ফুলে উঠতে পারে।

-কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যথা হতে পারে এবং স্থানটা লাল হতে পারে। এর ভেতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

-ওজন কমে যাবে। খাওয়ার রুচি কমে যেতে পারে।

-কোনো কিছু খেতে বা ঢোক গিলতে অসুবিধা হতে পারে।

-কাশি হতে পারে, গলার ভেতরে চুলকাতে পারে।

-গলার স্বর মোটা বা ফ্যাসফেসে হতে পারে, তবে থাইরয়েড নোডিউল বা ক্যান্সার ছাড়াও গলার সামনে ফুলে উঠতে পারে।

-শ্বাসনালির ওপর চাপ সৃষ্টির ফলে শ্বাস কষ্ট হতে পারে।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা

একজন রোগীকে সম্পূর্ণ মূল্যায়নের জন্য ঋঞ৩, ঋঞ৪,ঞঝঐ, আল্ট্রাসনো থাইরয়েড, ঋঘঅই এবং থাইরয়েড অপারেশনের পর বায়োপসি করা যেতে পারে। এ ছাড়া থাইরয়েড স্ক্যান করার প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা

অনেকে ক্যান্সার কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই চমকে ওঠেন। কিন্তু থাইরয়েড ক্যান্সার এমন একটি রোগ, যা সময়মতো চিকিৎসা করালে শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে এর সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব। তবে অবশ্যই সময়মতো চিকিৎসা করাতে হবে। গলার সামনে ফুলে উঠলে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি একজন ডাক্তার দেখানো উচিত। আল্ট্রাসনো করে বোঝা যায় এটা টিউমার না কোনো পানি বা রসের থলি। যদি আল্ট্রাসনোতে সেটাকে ক্যান্সারের মতো মনে হয় তবে এফএনএসি বা বায়োপসি করা উচিত। রিপোর্ট বা অভিজ্ঞতার আলোকে সার্জন মনে করলে কখনও কখনও সব থাইরয়েড গ্রন্থি ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। প্রয়োজনীয় অংশ অপারেশন করে ফেলে দেওয়ার পর সেখানে যাতে আর কোনো ক্যান্সার সেল না থাকে তার জন্য রেডিও আয়োডিন থেরাপি বা কখনও কখনও রেডিও থেরাপি দেওয়া লাগতে পারে। এরপর কোনো কোনো রোগীকে আজীবন থাইরয়েড হরমোন খাওয়া লাগতে পারে।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা

-থাইরয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধের সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে থাইরয়েড নডিউল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো এবং ক্যান্সার প্রবণতা আছে কি-না তা শনাক্ত করা।

-গলা বা তার আশপাশে রেডিয়েশনের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া।

-শিশু-কিশোরদের একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রেডিও থেরাপি না দেওয়া।

-ভেজাল খাদ্য থেকে বিরত থাকা।

-থাইরয়েড ক্যান্সারের একটা পারিবারিক ইতিহাসের প্রবণতা আছে। তাই যে পরিবারে বাবা-মায়ের থাইরয়েড ক্যান্সার আছে, তাদের পরিকল্পিত পরিবার গঠন করা উচিত।