• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

৯ বিরল রোগ, যার নেই কোনো প্রতিষেধক

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৪ জুন ২০২০  

কেউ যদি ক্যান্সার অথবা এইডস রোগ এর নাম শোনেন তাহলেই আতকে উঠেন। এই দুই রোগের নামতো শুনেছেনই কিন্তু আরো কিছু বিরল রোগ রয়েছে যা কি না খুব একটা জনমনে ভীত সৃষ্টি করেনি। শুধু যারা রোগগুলো সম্পর্কে জানে তারাই আতকে উঠবে। আজকের লেখাটির মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করবো বিশ্বের অদ্ভুভ এবং বিরল কিছু রোগের নাম যেটি কিনা জানেন না। যে রোগের নেই কোনো প্রতিষেধক।

প্রোজেরিয়া: বলিউডের অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘পা’ মুভিটি যারা দেখেছেন তারা এই বিরল রোগটির সাথে পরিচিত। বিশ্বের প্রতি ৮ মিলিয়ন শিশুর মাঝে একজন এই রোগে আক্রান্ত হয়। প্রোজেরিয়া একটি জেনেটিক রোগ যাতে আক্রান্ত রোগীর দেহে শৈশবেই বার্ধক্যের ছাপ চলে আসে। আর এতে যে শিশুরা আক্রান্ত হয় তারা তাদের ১৩ থেকে ২০ বছরের মাথায় মারা যায়। প্রোজেরিয়া কোন বংশগত রোগ নয় এবং এখন পর্যন্ত চিকিৎসকরা ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধ থেকে শুরু করে হরমোন ট্রিটমেন্ট-অনেক কিছুই প্রয়োগ করেছেন প্রোজেরিয়া রোগীদের বাঁচাতে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। ভয়াবহ এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের লক্ষণ হলো-চেহারাতে অকালে বার্ধক্যের ছাপ চলে আসা, চোখ ফুলে যাওয়া, মুখের আকৃতি অস্বাভাবিকভাবে ছোট হয়ে যাওয়া ও দেহের ত্বকে ভাঁজ পড়া। আক্রান্ত শিশুর মাথার চুল মাত্র ২ বছর বয়সে পড়ে যেতে শুরু করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে কিংবা মস্তিষ্কের রক্ত ক্ষরণে মারা যায়।


পানির প্রতি এলার্জি: এটা খুব বিরল একটি রোগ ও এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ জন রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যারা এই ‘ওয়াটার এলার্জি’তে আক্রান্ত। এটি সাধারণত পরিণত বয়সে দেখা দেয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেয়ার সময় দেহের হরমোনের তারতম্যের কারণে নারীরা এটিতে আক্রান্ত হন। ইংল্যান্ডে ২১ বছর বয়সী এক মেয়ে পানি ধরতে বা খেতে পারত না। পানির সংস্পর্শে এলেই তার ত্বকে জ্বালা-পোড়া শুরু হয়ে যেত। সে শুধুমাত্র ডায়েট-কোক খেতে পারতো ও প্রতি সপ্তাহে মাত্র একদিন ১০ সেকেন্ডের জন্য গোসল করতে পারতো। এটা প্রধানত পানিতে উপস্থিত আয়নের কারণে হয়ে থাকে।

কুরু: কুরু খুব বিরল একটি রোগ যেটি কিনা নিউ গিনির উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মাঝেই শুধু দেখা যায়। এই রোগের লক্ষণ হলো হঠাৎ করেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়া। এর ফলে মস্তিষ্কে ছিদ্র হয়ে যায় ও সেই ব্যক্তি মারা যায়। রোগটি মূলত নরমাংস খাওয়ার ফলে তৈরি হয়। অনেক স্থানেই মৃতদের মস্তিষ্কের টিস্যু রান্না করে খাওয়া হত। সংক্রমণের শিকার ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে খেতে কিংবা দাঁড়াতে পারে না, এলোমেলোভাবে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খায় ও কথা বলার ক্ষমতাও একসময় হারিয়ে ফেলে। সবশেষ পরিণতি হলো কোমাতে চলে গিয়ে মৃত্যু। তবে নিউ গিনি সরকারের প্রচেষ্টায় এখন নরমাংশ খাওয়া দেশটির বেশিরভাগ স্থানেই আইনত নিষিদ্ধ।


পরফাইরিয়া: ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় জর্জ এই বিরল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এ রোগে আক্রান্ত হলে মূত্র ও মলের রঙ বেগুনি হয়ে যায়। এটা হয় মূলত রক্তের লোহিত কণিকা থেকে প্রোটিন তৈরিতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর ত্বক ও স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। পরফাইরিয়ার লক্ষণ হলো বমিভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা ও পাকস্থলির বিভিন্ন সমস্যা, সূর্যের আলোতে ত্বকে চুলকানি সৃষ্টি হওয়া ও ফুলে যাওয়া। অনেকের ক্ষেত্রে মাথার সামনের অংশের চুল পড়ে যেতে পারে। এছাড়া দাঁত ও নখের রঙ-ও লাল হয়ে যেতে পারে।

ভয়াবহ এক অনিদ্রা রোগ: এটি একটি জেনেটিক রোগ ও পুরো বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ৪০ টি পরিবারের সন্ধান মিলেছে যারা এই বিরল রোগে আক্রান্ত। প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে, ঘুমোতে না পারা, উচ্চ রক্তচাপ ও পালস রেট বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম ঝরা। এছাড়া অন্যান্য স্বাভাবিক কাজকর্মেও ব্যঘাত ঘটে। এরকমই এক রোগে একটি ইতালীয় পরিবারের সব সদস্য না ঘুমাতে ঘুমাতে এক সময় মারা যায়।

এলিয়েন হ্যান্ড সিন্ড্রোম বা AHS: এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত অস্বাভাবিকভাবে নড়তে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির তার হাতের উপর কোন নিয়ন্ত্রণই থাকে না। হাতটি দেখে যেকারোই মনে হবে এটি যেন নিজেই আলাদা একটি জীবিত সত্ত্বা! ভয়াবহ এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত নিজ থেকেই বিভিন্ন জিনিস ধরতে চেষ্টা করে , সেটা সেই ব্যক্তি চান বা না চান। আর এটি ঘটে মূলত মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ, সংক্রমণ, টিউমার কিংবা মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারজনিত সমস্যার ফলে। রোগী বুঝতেই পারে না তার হাত কি করছে। রোগের ভয়াবহ পর্যায় হলো, এক সময় রোগী নিজেই তার হাতের সাথে কথা বলতে শুরু করে। ১৯০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪০ থেকে ৫০ জন ব্যক্তিকে পাওয়া গিয়েছে যারা এই বিরল রোগে আক্রান্ত ছিল।


বৃক্ষমানব: আক্রান্ত রোগীর ত্বকের উপর হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে। রোগীর দেহের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় আগে থেকেই রোগী দুর্বল হয়ে থাকে। এ সুযোগে ভাইরাসটি রোগীর দেহের সব স্থানের ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে রোগীর ত্বক গাছের বাকলের মত হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত এর কোন কার্যকর ওষুধ উদ্ভাবিত হয় নি।

হাইপারট্রিকোসিস: এটি মূলত দেহে হরমোনের তারতম্যের জন্য হয় যার ফলে দেহে অস্বাভাবিকভাবে চুল গজাতে থাকে। এটি বংশগতভাবে হতে পারে ও ছেলে কিংবা মেয়ে-যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের অদ্ভূত সব স্থানে চুল গজাতে শুরু করে, যেখানে হয়তো স্বাভাবিকভাবে চুল জন্মায় না। অনেকে এই সমস্যাটি নিয়েই জন্ম নিতে পারে আবার অনেকের ক্ষেত্রে পরবর্তী জীবনে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত রোগীর দেহ অনেকটা নেকড়ে বা ওয়্যার উলফের মত হয়ে যায়।

আরজিরিয়া বা নীল ত্বক: ফুগেট পরিবার গত ২০০ বছর ধরে এই সমস্যায় আক্রান্ত। বংশ পরম্পরায় এই রোগ এই পরিবারের সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে যার ফলে এদের সবার দেহের রঙ নীল বা বেগুনি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে methemoglobinemia । এর ফলে রক্তে অতিরিক্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হতে থাকে। রোগীর শরীরের চামড়া নীল হয়ে যায়, ঠোঁট হয় বেগুনি আর রক্তের রঙ হয় বাদামি। এই রোগ হলে তা বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। যারা বেশি আক্রান্ত হয়ে যায় তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি, এমনকি মৃত্যুরও।